আর্জেন্টিনা, সাউদাম্পটন এবং সাম্পদোরিয়ার ইতিহাস বলছে, চ্যাম্পিয়ন হবে সিটি
ম্যানচেস্টার সিটি এবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে প্রশ্নটা অবশ্যই উঠবে—আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গে যোগসূত্রটা কিসের!
ভ্রুকুটি কিংবা মজা ভেবে হেসে ফেললে কোনো অসুবিধা নেই। তবে বিষয়টি জানা থাকলে ভালো। নাপোলির প্রসঙ্গ দিয়ে শুরু করা যায়। ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের পরের বছর সিরি ‘আ' চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নাপোলি। গত বছর আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতার পর এ মৌসুমেও চ্যাম্পিয়ন নাপোলি। এবার সিটির বিষয়টি খুলে বলা যাক।
চ্যাম্পিয়নস লিগে এর আগে কখনো শিরোপা জিততে পারেনি ম্যানচেস্টার সিটি। ইস্তাম্বুলে আজ রাতের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে হারাতে পারলে প্রথমবারের মতো ইউরোপ–সেরা হবে ইংল্যান্ডের ক্লাবটি।
সিটির এ আশা আরও বাড়িয়ে দিতে দিতে পারে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলের সাফল্য। গত বছর কাতার বিশ্বকাপের আগে আর্জেন্টিনা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দুবার—১৯৭৮ ও ১৯৮৬। দুবারই আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর নতুন চ্যাম্পিয়ন পেয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগ। তখন অবশ্য টুর্নামেন্টটির নাম ছিল ইউরোপিয়ান কাপ।
১৯৭৯ ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে সুইডেনের ক্লাব মালমো এফসির মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ডের নটিংহাম ফরেস্ট। মালমোকে ১–০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোপ–সেরা হয়েছিল নটিংহাম।
আর্জেন্টিনা ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জেতার পরের বছরও একই ঘটনা! ১৯৮৭ ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখকে ২–১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোপ–সেরা হয়েছিল পর্তুগালের ক্লাব পোর্তো।
এই পরিসংখ্যান দেখে সিটির সমর্থকেরা কিন্তু আশা করতেই পারেন। গত বছর কাতারে বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা, আর এ বছর চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে মুখোমুখি সিটি ও ইন্টার মিলান। ইন্টার আগে তিনবার ইউরোপ–সেরা হয়েছে, সিটি এখনো প্রথম শিরোপার অপেক্ষায়। দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে সিটির পক্ষে বাজি ধরাই যায়।
কিংবা এ শতাব্দীতে চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী দলগুলোর মূল স্কোয়াড দেখেও আশায় বুক বাঁধতে পারেন সিটির সমর্থকেরা। এই শতাব্দীতে যতগুলো দল চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে, তাদের মূল স্কোয়াডে অন্তত একজন স্প্যানিশ কিংবা ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড় ছিলেন। এবার ফাইনালে ওঠা ইন্টার মিলানের মূল স্কোয়াডে কিন্তু ব্রাজিলিয়ান কিংবা স্প্যানিশ খেলোয়াড় নেই। কিন্তু ম্যানচেস্টার সিটির মূল স্কোয়াডে ব্রাজিলিয়ান ও স্প্যানিশ খেলোয়াড় আছেন। মিডফিল্ডার রদ্রি ও ডিফেন্ডার আয়মেরিক লাপোর্তে যেমন স্প্যানিশ, গোলকিপার এদেরসন ব্রাজিলিয়ান।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এবারের মৌসুমে অবনমিত হওয়া সাউদাম্পটনকে দেখেও আশা খুঁজে নিতে পারেন সিটির সমর্থকেরা। কীভাবে? গল্পটা বেশ মজার। এবারের আগে সর্বশেষ ২০০৪–০৫ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমন ঘটেছিল সাউদাম্পটনের। সে মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল ইংল্যান্ডের একটি দল। তবে এতটুকু বললে মজাটা বোঝা যায় না। সেবারের মতো এবারও পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থেকে মৌসুম শেষ করেছিল সাউদাম্পটন। সেবারের মতো এবারও তারা মাত্র ছয় ম্যাচ জিতেছে।
মজাটা হচ্ছে সেবার ২০০৫ চ্যাম্পিয়নস লিগের ধ্রুপদি ফাইনালে ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল লিভারপুল। এবারও ফাইনালে ইংল্যান্ডের ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির প্রতিপক্ষ ইতালির ইন্টার মিলান—তারা আবার এসি মিলানের নগর প্রতিদ্বন্দ্বীও। আর সিটি লিভারপুলের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী না হলেও গত কয়েক মৌসুম ধরে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা লড়াই থেকে ইউরোপে ইংল্যান্ডের এ দুটি ক্লাবের দাপটই বেশি দেখা যাচ্ছে। তুকতাকে বিশ্বাস রাখা সিটির সমর্থকেরা ভেবে নিতেই পারেন—১৮ বছর আগে লিভারপুল হলে, এবার সিটি কেন নয়!
সিটি সমর্থকদের সঙ্গে দাবিটা তুলতে পারে ইতালির ক্লাব সাম্পদোরিয়াও। এবারের আগে সর্বশেষ ২০১০–১১ মৌসুমে সিরি ‘আ’ থেকে অবনমন ঘটেছিল ক্লাবটির। সে মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পেপ গার্দিওলার বার্সেলোনা। সে পথে সেমিফাইনালে তারা হারিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদকে। এবার সাম্পদোরিয়া সিরি ‘আ’ থেকে যেমন নেমে গেছে, তেমনি চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে উঠে আসার পথে গার্দিওলার সিটি সেমিফাইনালে হারিয়েছে রিয়ালকে।
তাহলে? সিটি–ই তো চ্যাম্পিয়ন!