কেমন হতে পারে আর্জেন্টিনার ২০২৬ বিশ্বকাপের দল
গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল? সে তো বটেই! তবে এ যাত্রায় ‘কাঁঠাল’টা যেহেতেু পাকিয়ে ঘরে তোলা গেছে, তাই চার বছর পর যে কাঁঠালটা পাকবে, তা নিয়ে এখন থেকেই অঙ্ক কষতে অন্তত দোষের কিছু নেই। বলা হচ্ছে আর্জেন্টিনার এবারের বিশ্বকাপ জয় এবং ২০২৬ বিশ্বকাপের দল নিয়ে।
কাতার বিশ্বকাপ জয়ের রেশ এখনো চলছে আর্জেন্টিনায়। উৎসবে ম ম করছে বুয়েনস এইরেস। তবে এসবের মধ্যেই ২০২৬ বিশ্বকাপের হিসাব কষতে শুরু করেছে আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম।
কাতার বিশ্বকাপে সর্বকনিষ্ঠ কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। ৪৪ বছর বয়সী এই কোচ আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের বিশ্বকাপ-খরা ঘুচিয়েছেন। তাঁর মাধ্যমে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলতে গেছেন আর্জেন্টিনার ১৯ খেলোয়াড়।
এটাই তাঁদের প্রথম বিশ্বকাপ-অভিজ্ঞতা। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘টিওয়াইসি স্পোর্টস’ জানিয়েছে, এই দলকে ভিত হিসেবে দেখেই নাকি ২০২৬ বিশ্বকাপে শিরোপা ধরে রাখার অঙ্ক কষবে আর্জেন্টিনা।
২০১৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বাদ পড়ার পর কোচ হোর্হে সাম্পাওলির জায়গায় আসেন স্কালোনি। প্রথমে তাঁকে অন্তবর্তীকালীন কোচ বানানো হয়। আর্জেন্টাইন ফুটবল হর্তাকর্তাদের চোখ অবশ্য বেশ আগে থেকেই তাঁর ওপর ছিল।
২০১৮ সালে কোটিফ টুর্নামেন্টে ভারত অনূর্ধ্ব-২০ দলের কাছে হারের পরও বয়সভিত্তিক সেই টুর্নামেন্ট জিতেছিলেন স্কালোনি। লিওনার্দো বালের্দি, অগাস্তিন আলমেন্দ্রা, অ্যাডলফ গাইচ ও ফেদেরিকো গাত্তোনিদের মতো তরুণদের নিয়ে টুর্নামেন্টটি জিতেছিলেন স্কালোনি।
রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর কদিন আগে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) থেকে সভাপতি ক্লদিও তাপিয়ার ফোন পান এই কোচ। বিশ্বকাপ শুরুর আগে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের যে দুটি প্রীতি ম্যাচ বাকি আছে, গুয়াতেমালা ও কলম্বিয়ার বিপক্ষে সে ম্যাচ দুটিতে স্কালোনিকে ডাগআউটে দাঁড়াতে হবে। ভ্যালেন্সিয়ার সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে নিজের সহকারী পাবলো আইমার ও মার্টিন তোকোল্লিকে প্রস্তাবটির কথা জানান স্কালোনি।
তারপর রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষ হলো, কোচিংয়েও অদলবদল হলো এবং সাড়ে চার বছর ধরে জাতীয় দল গড়ে আজকের এ সাফল্য পেয়েছেন স্কালোনি। তাঁর ওপর আর্জেন্টিনা কতখানি ভরসা রাখে, সেটি গত সেপ্টেম্বরে এক মন্তব্যেই বুঝিয়ে দেন তাপিয়া, ‘আমরা তাকে নিয়ে বর্তমান পরিকল্পনাকে আরও এগিয়ে নিতে চাই।’
২০২৬ সাল পর্যন্ত স্কালোনির চুক্তি নবায়ন করে মন্তব্যটি করেছিলেন তাপিয়া। আর্জেন্টিনা এখন বিশ্বকাপ জয়ের পর অনভিপ্রেত কিছু না ঘটলে চার বছর পর মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা বিশ্বকাপেও যে লাতিন দলটির ডাগআউটে স্কালোনিকে দেখা যাবে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
স্কালোনি কোচ হওয়ার পর দলের স্কাউট ডিপার্টমেন্টকে ইউরোপ ও দেশের অভ্যন্তরে ব্যস্ত রাখেন। এভাবে আলেহান্দ্রো গারনাচো, নিকোলাস পাজ, ভ্যালেন্তিন কারবোনি ও ম্যাথিয়াস সুলের মতো তরুণদের বয়সভিত্তিক দলে পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
কাতার বিশ্বকাপ দলে থাকা থিয়াগো আলমাদা, ফাকুন্দো মেদিনা ও নেহুয়েন পেরেজদেরও এভাবে পেয়েছেন স্কালোনি। টিওয়াইসি স্পোর্টস জানায়, ২০২৬ বিশ্বকাপ নিয়ে স্কালোনির পরিকল্পনায় এসব নাম থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
আর্জেন্টাইন ফুটবলের একটি ধারা হলো, বয়সভিত্তিক দল থেকে খেলোয়াড় তুলে আনা। সেই দায়িত্ব পালনে অনূর্ধ্ব-১৭ দলের সঙ্গে আছেন সাবেক মিডফিল্ডার পাবলো আইমার। অনূর্ধ্ব-২০ দলের সঙ্গেও আছেন আরেক আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি—হাভিয়ের মাচেরানো।
বয়সভিত্তিক দল ও ইউরোপ মিলিয়ে স্কালোনি নিজের এই সাড়ে চার বছরের চক্রে ৮৩ খেলোয়াড় পেয়েছেন। এর মাঠে নেমেছেন ৪৩ খেলোয়াড়। বাকিদের মধ্য থেকেও ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য ভাবা হবে বলে জানিয়েছে আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম।
আর বর্তমান দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে এনজো ফার্নান্দেজ, নিকো গনজালেস, ম্যাক অ্যালিস্টার, হুলিয়ান আলভারেজ, ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, হুয়ান ফয়থ, লিসান্দ্রো মার্তিনেজ, নাহুয়েল মলিনারাও স্কালোনির পরিকল্পনায় থাকবেন। ২০২৬ বিশ্বকাপে রদ্রিগো দি পলের বয়স হবে ৩২ বছর। তাঁরও থাকার সম্ভাবনা দেখছে টিওয়াইসি স্পোর্টস।