২০১৫ সালে এশিয়ান কাপের সেই ফাইনালটা ছিল সিডনিতে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ের গোলে (২-১) জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। সন হিয়ুং মিন যোগ করা সময়ে গোল করলেও লাভ হয়নি। ৯ বছর পর গতকাল রাতে কাতারের আল জানুব স্টেডিয়ামে ছবিটি পাল্টে দেন সন।
এবারও টুর্নামেন্ট সেই এশিয়ান কাপ, যদিও মঞ্চটা ভিন্ন—কোয়ার্টার ফাইনাল। কিন্তু প্রতিপক্ষ একই—অস্ট্রেলিয়া। সেবারের মতো এবারও ম্যাচ গড়িয়েছে অতিরিক্ত সময়ে আর সেখানেও স্কোরলাইন একই! এবার শুধু জয়ী দলের নামটা পাল্টে গেছে। দক্ষিণ কোরিয়া! আর সে জয়ে নায়ক অতিরিক্ত সময়ে গোল করা দক্ষিণ কোরিয়ার সোনার ছেলে সন।
ম্যাচের ৪২ মিনিটে ক্রেগ গডউইনের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচটা দক্ষিণ কোরিয়া হেরেই যেত, যদি সন পেনাল্টি আদায় না করতেন। যোগ করা সময়ে শেষ বাঁশি বাজার মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে অস্ট্রেলিয়ার বক্সে সনকে ফেলে দেন লুইস মিলার। পেনাল্টি পায় কোরিয়া। সেখান থেকে গোল করেন হাওয়াং হি-চ্যান।
কোরিয়া ১-১ গোলে সমতায় ফেরার পর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ১০৪ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার বক্সে বাঁ প্রান্তের মাথায় ফ্রি কিক পায় ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমানের দল। বাঁকানো শটে করা গোলে দক্ষিণ কোরিয়াকে দুর্দান্ত জয় এনে দেন সন। সেমিফাইনালে ক্লিন্সমানের দলের প্রতিপক্ষ জর্ডান।
এবারের এশিয়ান কাপে এ পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচের মধ্যে শুধু একটি ম্যাচ নির্ধারিত সময়ে জিতেছে দক্ষিণ কোরিয়া। সেটি বাহরাইনের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচ। এরপর টানা চার ম্যাচ হয় যোগ করা, নয়তো অতিরিক্ত সময়ে জিতেছে দক্ষিণ কোরিয়া। হার না–মানা মানসিকতায় ম্যাচ নির্ধারিত সময় থেকে টেনে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যাওয়াকে ক্লিন্সমানের দল মোটামুটি অভ্যাসে পরিণত করায় তাদের সমর্থকেরা নাম দিয়েছেন ‘জম্বি ফুটবল’।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ কোরিয়ার কোচ ও জার্মানির সাবেক স্ট্রাইকার ক্লিন্সমান হাসতে হাসতে জানিয়েছেন, সমর্থকদের দেওয়া এই তকমায় তাঁর কোনো সমস্যা নেই, ‘যেকোনো নামে আমার সমস্যা নেই।’ তবে পরের ম্যাচগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জিততে চান ৬৪ বছর ধরে এশিয়ান কাপ শিরোপার খোঁজ করা দক্ষিণ কোরিয়ার এই কোচ, ‘এই দলটা দারুণ! ৬০ বছরের বেশি সময় পর শিরোপা জয়ের প্রত্যাশায় আছে কোরিয়ানরা। সম্ভবত এই ব্যাপারটা খেলোয়াড়দের মাথায় কাজ করেছে।’
দক্ষিণ কোরিয়ার হয়ে এশিয়ান কাপের মাঠে নিজেকে নিংড়ে দিচ্ছেন টটেনহাম তারকা সন। যোগ করা সময় বাদে কোরিয়ার ৫ ম্যাচে মোট ৫১০ মিনিট মাঠে ছিলেন তিনি। ৩ গোল করার পাশাপাশি ম্যাচ বাঁচানো পেনাল্টিও আদায় করেছেন। ম্যাচ শেষে সন বলেছেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো আমরা জিতেছি। ১২০ মিনিট খেলা কষ্টের; কঠিন কাজও। কিন্তু সবার ভেতরে যে চেতনা কাজ করছে, সেটাই দলকে একসূত্রে গেঁথেছে।’