১১ শিশুর পাশে দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপের আগেই জিতে গেলেন রুডিগার
আন্তোনিও রুডিগারের জন্ম জার্মানির বার্লিনে। বাবা জার্মান, মায়ের দেশ সিয়েরা লিওন। মায়ের দেশে অনেকবারই গিয়েছেন জার্মানির এই ডিফেন্ডার। সেখানে শিশুদের জীবনযুদ্ধ দেখেছেন খুব কাছ থেকে।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এএস’কে একবার বলেছিলেন, ‘সেখানে যাঁরা টিকে থাকতে জানে, তারাই বাঁচে।’ কিন্তু যাঁদের টিকে থাকতে সমস্যা, তাঁদের কি সাহায্য করার কেউ নেই? রুডিগার যেন এই প্রশ্নের উত্তর দিতেই কাতার বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু করলেন সিয়েরা লিওন থেকে!
রুডিগারের প্রস্তুতির কথাটা একটু ঘুরিয়ে বলা হয়েছে। কাতার বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে ওমানে অনুশীলন ক্যাম্প করেছে জার্মানি ফুটবল দল। সতীর্থদের সঙ্গে সেখানেই আছেন রুডিগার। তাহলে সিয়েরা লিওন থেকে প্রস্তুতি?
এটা আসলে রুডিগারের মনের প্রস্তুতি। বুঝিয়ে বলা যাক, কাতার বিশ্বকাপে রুডিগার যে পরিমাণ অর্থ আয় করবেন, তার সবটুকু সিয়েরা লিওনের ১১ জন সুবিধাবঞ্চিত ও জন্মগতভাবে বাঁকানো পা নিয়ে পৃথিবীর আলো দেখা শিশুদের অস্ত্রোপচারের জন্য ব্যয় করবেন। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’ জানিয়েছে, জার্মানির দাতব্য সংস্থা ‘বিগ শু’কে সঙ্গে নিয়ে এ অর্থ দানে সম্মত হন রুডিগার। আর এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেই ১১ শিশুর অস্ত্রোপচারও হয়েছে।
সিয়েরা লিওনের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য গত জানুয়ারিতেই আন্তোনিও রুডিগার ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকা ডিফেন্ডার। তখনই বেশ কয়েকজন শিশুর জীবনের গতিপথ পাল্টে দেওয়া অস্ত্রোপচারে আর্থিক সহায়তা করেন রুডিগার। সিয়েরা লিওনে প্রচুর শিশু বাঁকানো পা নিয়ে জন্ম নেয়। সময়মতো অস্ত্রোপচার করাতে পারলে এই পা ঠিক করা সম্ভব। নইলে পরে আর হয় না।
সেসব শিশুর জীবনের গতিপথ এই বাঁকানো পায়ের জন্য যেন অন্ধকারে পতিত না হয়, সে জন্য ‘ডিফেন্ডার’ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেলেন রুডিগার।
বাঁকানো পা নিয়ে জন্ম নেওয়া এবং চিকিৎসা করাতে না পারায় এসব শিশুকে ক্রাচের ওপর দাঁড়াতে হয় এবং জীবনটা ক্রাচের ওপরই কাটে। এ ছাড়া বাঁকানো পায়ের জন্য সামাজিকভাবেও অনেকটাই নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয় তাদের।
শিশুদের সফল অস্ত্রোপচারের কথা শুনে ভীষণ খুশি হওয়া রুডিগার মার্কাকে বলেছেন, ‘সিয়েরা লিওনের শিশুরা যেভাবে বেড়ে উঠছে, তা দেখলে কষ্ট লাগে। অস্ত্রোপচার শেষে কয়েক মাস চিকিৎসার পর তারা নিজের পায়ে ভর করে দাঁড়াতে পারবে এবং বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে।’
সিয়েরা লিওনের এসব শিশুদের সাহায্য করতে পেরে ভীষণ খুশি রুডিগার। এই কাজ নিজের জন্য ‘সম্মানের ব্যাপার’ বলেই মনে করেন চেলসির সাবেক এই ডিফেন্ডার, ‘সিয়েরা লিওনে অনেকে সাহায্য করেনি। তবে জার্মানিতে এই কাজে অনেকের সাহায্য পেয়েছি। সুযোগটা পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ। দারুণ খুশি লাগছে। এটা সম্মানের ব্যাপার। নিজের পরিবার নিয়ে সিয়েরা লিওনে আমি এমন আরও অনেক কাজ করতে চাই।’
বিশ্বকাপ শুরু হবে ২০ নভেম্বর। জার্মানি তাদের প্রথম ম্যাচ খেলবে ২৩ নভেম্বর, জাপানের বিপক্ষে।