এনজো যাঁদের পেছনে ফেলে ‘সবচেয়ে দামী আর্জেন্টাইন’
ইতিহাস গড়েছেন এনজো ফার্নান্দেজ। গতকাল মধ্যবর্তী দলবদলের শেষ দিনে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকায় (১২ কোটি ১০ লাখ ইউরো) পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকা থেকে ইংলিশ ক্লাব চেলসিতে যোগ দেন আর্জেন্টিনার ২২ বছর বয়সী মিডফিল্ডার। দলবদলে কোনো ইংলিশ ক্লাবের এটিই সবচেয়ে বেশি খরচের রেকর্ড। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে এনজোই এখন সবচেয়ে দামি ফুটবলার। আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের মধ্যেও তিনি সবচেয়ে দামি।
কাতার বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলে সেরা উদীয়মান ফুটবলার হন এনজো ফার্নান্দেজ। গত সেপ্টেম্বরেই আর্জেন্টিনার জার্সিতে তাঁর আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়। বেনফিকাতেও তাঁর পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। এনজো চেলসিতে যোগ দেওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এর আগে দলবদলের বাজারে শীর্ষ আর্জেন্টাইন ফুটবলার কারা ছিলেন। এনজোর আগে দামে শীর্ষ চার আর্জেন্টাইন ফুটবলারের তালিকা নিচে দেওয়া হলো।
আনহেল দি মারিয়া (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে পিএসজি—৪ কোটি ৪৩ লাখ পাউন্ড)
২০১৪ সালে এক মৌসুমের জন্য ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলেছিলেন আনহেল দি মারিয়া। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে এসেছিলেন। প্রত্যাশা অনেক ছিল কিন্তু তেমন ভালো করতে পারেননি। ইউনাইটেড শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টাইন তারকাকে ২০১৫ সালে ৪ কোটি ৪৩ লাখ পাউন্ডে বেচে দেয় পিএসজির কাছে।
ফরাসি ক্লাসে সাত মৌসুম খেলে দি মারিয়া জিতেছেন পাঁচটি লিগ শিরোপা। পাঁচটি ফ্রেঞ্চ কাপের শিরোপা ও চারটি লিগ কাপ। ২০২২ সালে জুভেন্টাসে যাওয়ার আগপর্যন্ত পিএসজির জার্সিতে ২৯৫টি ম্যাচ খেলেছিলেন দি মারিয়া।
দি মারিয়াই ২০১৪ সালে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলতে এসেছিলেন ৫ কোটি ৯৭ লাখ পাউন্ডে। সেটি সে সময়ে ছিল ইংলিশ ফুটবলে রেকর্ড অর্থের দলবদল। আর আর্জেন্টিনার তখন সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ও ছিলেন দি মারিয়াই। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে আগের মৌসুমেই দি মারিয়া জিতেছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা।
মাউরো ইকার্দি (ইন্টার থেকে পিএসজি—৪ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড)
২০১৯ সালে ইন্টার মিলান থেকে পিএসজিতে যোগ দেন মাউরো ইকার্দি। এর আগে ইন্টার মিলানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা মোটেও ভালো যাচ্ছিল না। লুসিয়ানো স্পালেত্তির অধীন অধিনায়কত্ব হারিয়েছিলেন। আন্তোনিও কন্তে কোচ হয়ে আসার পর দল থেকেই বাদ পড়ে যান। ১৮১টি লিগ ম্যাচ খেলে গোল করেছিলেন ১১১টি। এরপর ধারে পিএসজিতে যান। সেখানে করোনাভাইরাস মহামারিতে মৌসুম সংক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়ার আগপর্যন্ত পিএসজির হয়ে ৩১ ম্যাচে করেছিলেন ২০ গোল।
পিএসজি পরবর্তীকালে তাঁর সঙ্গে ৪ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ডের চুক্তি করে। তবে এরপর তিনি ফরাসি রাজধানীতে সেভাবে আলো ছড়াতে পারেননি। মোট ৯২টি ম্যাচে পিএসজির হয়ে গোল করেছেন ৩৮টি।
লিসান্দ্রো মার্তিনেজ (আয়াক্স থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড—৫ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড)
গত বছর লিসান্দ্রো মার্তিনেজ যখন আয়াক্স থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আসেন, তিনি পরিণত হন আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসের তৃতীয় দামি ফুটবলারে। ওল্ডট্রাফোর্ডে তাঁর ট্রান্সফার মূল্য ছিল ৫ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড।
এরিক টেন হাগ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ হয়ে এসেছিলেন আয়াক্স থেকেই। তিনিই রক্ষণের শক্তি বাড়াতে ইউনাইটেডে টেনে নেন আর্জেন্টাইন তারকাকে। তখন কি তিনি জানতেন, লিসান্দ্রো মার্তিনেজ বছর শেষে দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জিতবেন! ২০২১-২২ মৌসুমে আয়াক্সের জার্সিতে তিনি ডাচ লিগের ‘মৌসুমের সেরা খেলোয়াড়’ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
গঞ্জালো হিগুয়েইন (নাপোলি থেকে জুভেন্টাস-৭ কোটি ৫৩ লাখ পাউন্ড)
২০১৬ সালে ৭ কোটি ৫৩ লাখ পাউন্ডে নাপোলি থেকে জুভেন্টাসে যোগ দিয়ে আর্জেন্টিনার ফুটবলের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছিলেন গঞ্জালো হিগুয়েইন। এই রেকর্ড তিনি ধরে রেখেছিলেন গতকাল পর্যন্ত। তাঁকে সরিয়ে এনজো ফার্নান্দেজ দখলে নিয়েছেন রেকর্ডটি।
১৪৬ ম্যাচ খেলে নাপোলিতে তিনি গোল করেছিলেন ৯১টি। এক মৌসুমে ৩৬ গোল করে রেকর্ডও করেছিলেন। হিগুয়েইন ভেঙেছিলেন ১৯২৮-২৯ মৌসুমে সিরি ‘আ’তে জিনো রোসেত্তির গোলের রেকর্ড। জুভেন্টাসে এসে তিনি প্রথম মৌসুমেই ৩২ গোল করেছিলেন। তুরিনে তিনি সিরি ‘আ’ শিরোপা জিতেছেন তিনটি। ২০১৮ সালে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো জুভেন্টাসে যোগ দেওয়ার পর তিনি জুভেন্টাস থেকে প্রথমে ধারে এসি মিলানে যান, সেখান থেকে চেলসিতে কিছুদিন কাটিয়ে যোগ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মিয়ামিতে।