স্পেনের বিপক্ষে কাল উয়েফা নেশনস লিগে ১–০ গোলে হারের পর মাঠে বসে পড়েন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ হতাশায় বসে ছিলেন পর্তুগিজ তারকা। পেছন থেকে তোলা ছবিটা যে দেখে অনেকেরই খারাপ লাগতে পারে।
দল বাদ পড়েছে টুর্নামেন্ট থেকে, নিজে ভালো সুযোগ পেয়েও গোল পাননি। এদিকে বেলা বাড়তে বাড়তে বয়সও ৩৭ পেরিয়ে গেছে। একসময় দোর্দণ্ডপ্রতাপে ফুটবল–বিশ্ব শাসন করা রোনালদোর বিষাদের এমন ছবি কে দেখতে চায়!
চাইলে ছবিটার আরেকটু গভীর অনুবাদ করা যায়। নভেম্বরেই শুরু হবে কাতার বিশ্বকাপ। তার আগে নেশনস লিগ থেকে পর্তুগালের বাদ পড়া, রোনালদোর নিজেকে হারিয়ে ফেরা—এ সবকিছু মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতার বিদায়ের লগ্নটা যেন আরও কাছাকাছি মনে হয়। তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসির ভক্তরা চাইলে এই ‘কাট ঘায়ে নুনের ছিটা’ দিতে পারেন।
ক্লাব ফুটবলের এই মৌসুমে রোনালদো যত গোল করেছেন, কাল রাতে আর্জেন্টিনার জার্সিতে মাত্র ৩৫ মিনিট মাঠে থেকেই তাঁর চেয়ে বেশি গোল করেছেন মেসি!
হিসাব মিলিয়ে নিন। জ্যামাইকার বিপক্ষে বদলি নেমে জোড়া গোল করেন মেসি। আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে এই মৌসুমে ৮ ম্যাচ খেলে রোনালদোর গোল মাত্র ১টি। ভাবা যায়, এই খেলোয়াড়ই একসময় মৌসুমের পর মৌসুম ধরে গোল করাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন! কিন্তু সবকিছুরই শেষ আছে। একসময় নক্ষত্রেরও যেমন মরণ আসে, তেমনি রোনালদোর মতো তারকারও নিভে যাওয়ার ক্ষণ সমাগত। কে জানে কাতার বিশ্বকাপের পরই হয়তো!
রোনালদো স্পেনের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে অবসর নিয়ে কোনো ইঙ্গিত দেননি। কিন্তু পর্তুগালের সংবাদমাধ্যমগুলো পারলে তাঁকে এখনই অবসরে পাঠায়! স্পেনের বিপক্ষে কাল রোনালদোকে শুরুর একাদশে খেলান কোচ ফার্নান্দো স্যান্টোস। এ নিয়েও আপত্তি তুলেছেন অনেকে। রাফায়েল লেয়াও, পেদ্রো নেতো ও হোয়াও ফেলিক্সের মতো প্রতিভাবানদের রেখে কেন রোনালদোর মতো অফ ফর্মে থাকা কাউকে খেলানো হলো?
শুধু কি তা–ই, পর্তুগিজ সংবাদমাধ্যম ‘এ বোয়া’ স্পেনের বিপক্ষে ম্যাচের আগে শিরোনাম করে, ‘লেস রোনালদো, মোর পর্তুগাল।’ অর্থাৎ রোনালদো যত কম খেলবেন পর্তুগাল দল তত ভালোভাবে নিজেদের খেলাটা খেলতে পারবে।
বাজে ফর্মের কারণে ইউনাইটেডের হয়েও মাঠে রোনালদোকে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এ পর্যন্ত খেলেছেন মাত্র ৬ ম্যাচ। বেশির ভাগ সময়ই ইউনাইটেডের বেঞ্চি গরম করতে হচ্ছে। কিন্তু স্যান্টোস আবার ইউনাইটেড কোচ এরিক টেন হাগের ধাতে গড়া মানুষ নন। পর্তুগাল জাতীয় দলে ৮ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে সব সময়ই রোনালদোর ওপর ভরসা রেখেছেন স্যান্টোস।
কাল হারের পর স্যান্টোস বুঝিয়ে দেন, রোনালদোর ওপর এখনই আস্থা হারাচ্ছেন না এই কোচ, ‘দল কীভাবে খেলেছে সেটাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রোনালদো তিন–চারটি গোলের সুযোগ পেয়েছে, যেসব সুযোগ থেকে সে সাধারণত গোল করে। কিন্তু পারেনি। এটাই ফুটবল।’
অবসর নিয়ে কিছুদিন আগে কথা বলেছেন রোনালদো। ২১ সেপ্টেম্বর পর্তুগালে একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সংবাদমাধ্যমকে রোনালদো বলেছেন, ‘আমি আরও কয়েক বছর (পর্তুগাল ফুটবল) ফেডারেশনের সঙ্গে থাকতে চাই। এখনো খেলা চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পাই। জাতীয় দলে আমার সময় এখনো শেষ হয়নি। আমি বিশ্বকাপে থাকব এবং ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপেও (২০২৪) খেলতে চাই।’