পিএসজি ৪ : ২ ম্যানচেস্টার সিটি
চ্যাম্পিয়নস লিগে আগের রাতেই প্রত্যাবর্তনের অনবদ্য এক গল্প লিখেছিল বার্সেলোনা। বেনফিকার বিপক্ষে ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়েও ৫-৪ গোলে জিতেছিল বার্সা। বুধবার রাতে সেই বার্সার কাছ থেকে অনুপ্ররেণা নিয়েই হয়তো মাঠে নেমেছিল পিএসজি।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও প্রত্যাবর্তনের দুর্দান্ত এক রূপকথার গল্প লিখল প্যারিসের ক্লাবটি। ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে টিকে থাকার ম্যাচে অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে পিএসজি জিতেছে ৪-২ গোলে। রূপকথা লিখে পাওয়া জয়ে শেষ ষোলোর প্লে-অফ খেলার আশা দারুণভাবে বাঁচিয়ে রাখল পিএসজি। পয়েন্ট তালিকায় ২৬ নম্বর থেকে ৭ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে ২২ নম্বরে এল তারা।
অন্যদিকে প্রিমিয়ার লিগে ধুঁকতে থাকা সিটি চ্যাম্পিয়নস লিগেও পৌঁছে গেল খাদের কিনারায়। শেষ ষোলো নিশ্চিত করার জন্য প্লে–অফ খেলতে হলে শেষ ম্যাচে ক্লাব ব্রুগার বিপক্ষে জিততেই হবে তাদের। তবে ৭ ম্যাচ শেষে ৮ পয়েন্ট নিয়ে ২৫ নম্বরে থাকা সিটি এই মুহূর্তে বাদ পড়াদের কাতারেই আছে।
সকালের সূর্য নাকি দিনে পূর্বাভাস দেয়। প্যারিসেও রোমাঞ্চের ইঙ্গিতটা ম্যাচের শুরু থেকেই ছিল। প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুই দল। ম্যাচের প্রথম সুযোগটা অবশ্য পিএসজিই পেয়েছিল। তবে সিটি গোলরক্ষক এদেরসন সে যাত্রায় বাঁচিয়ে দেন দলকে। ১০ মিনিটে আবার অল্পের জন্য সুযোগ হাতছাড়া করে পিএসজি।
শুরুর ধাক্কা সামলে দ্রুত আক্রমণে যায় সিটিও। ১৩ মিনিটে কেভিন ডি ব্রুইনার শট ঠেকান পিএসজি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা। গোল না পেলেও দুই দলের আক্রমণাত্মক ফুটবল ম্যাচটাকে রোমাঞ্চকর করে তোলে। দুই দলই এ সময় চেষ্টা করে গোল আদায়ের। আক্রমণ, প্রতি-আক্রমণের ধারায় ২৭ মিনিটে আবারও অল্পের জন্য গোল পাওয়া হয়নি পিএসজির। গোললাইন থেকে বল ফেরান সিটি ডিফেন্ডার ইউস্কো গাভারদিওল।
উভয়ে উভয়ের গোল ফিরিয়ে দিলেও আক্রমণের উত্তাপ কিন্তু কমেনি। ঝুম বৃষ্টির মধ্যও দুই দল চেষ্টা করে যাচ্ছিল গোল আদায়ের। ৩৯ মিনিটে আবার আক্রমণে গিয়ে সুযোগ তৈরি করে সিটি। তবে এবারও পোস্টের সামনে দেয়াল তুলে দাঁড়িয়ে যান দোন্নারুম্মা। সিটি না পারলেও প্রথমার্ধের শেষ দিকে ঠিকই গোল আদায় করে নেয় পিএসজি। তবে আশরাফ হাকিমির করা সেই গোলটি বাতিল হয় অফ সাইডের কারণে।
বিরতির পর দুই বদল নিয়ে মাঠে নামে সিটি। জ্যাক গ্রিলিশ আসেন সাভিনিওর জায়গায় আর রিকো লুইস আসেন রুবেন দিয়াজের জায়গায়। এই বদল ম্যাচও বদলে দেয়। ৫০ মিনিটে গোল করেন বদলি নামা গ্রিলিশ। ইংলিশ তারকার গোলের ৩ মিনিট পর সিটিকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেন আর্লিং হলান্ড। তখন মনে হচ্ছিল ম্যাচটা পিএসজির হাত ফসকে গেছে। কিন্তু কে জানত, নাটকের সবটাই তখনো বাকি।
নাটকের প্রথম অঙ্কটা ৫০ থেকে ৫৩ মিনিটের মধ্যে মঞ্চস্থ হওয়ার পর দ্বিতীয় অঙ্ক মঞ্চস্থ হয়েছে ৫৬ থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যে। ৫৬ মিনিটে উসমান দেম্বেলে প্রথমে গোল করে ব্যবধান ২-১ করেন। এরপর ৬০ মিনিটে দারুণ এক গোলে ব্রাডলি বারকোলা অবিশ্বাস্যভাবে সমতায় ফেরান পিএসজিকে। অর্থাৎ ম্যাচের প্রথম ৫০ মিনিট গোল না হওয়া ম্যাচটিতে ১০ মিনিটেই হলো ৪ গোল। মূলত দুই গোল হজম করার পরই দারুণ নৈপুণ্যে ঘুরে দাঁড়ায় প্যারিসের ক্লাবটি। আক্রমণের পর আক্রমণে কাঁপিয়ে দেয় সিটিকে।
সমতা ফিরিয়েও আর গতি কমায়নি দলটি। নান্দনিক ও পাসিং ফুটবল খেলে একের পর এক চেষ্টা চালিয়ে যায় তারা। যার সুফল সিটি পায় ৭৮ মিনিটে, গোল করেন জোয়াও নাভাস। পিছিয়ে পড়া সিটি অবশ্য চেষ্টা করেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। কিন্তু ভাগ্য আর ফেরেনি। উল্টো ম্যাচের শেষ দিকে গনসালো রামোসের গোলে ৪-২ ব্যবধানে হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।