মেসির ১০০তম গোলের বলটি রেফারি সরিয়ে ফেলেছিলেন কেন
কুরাসাওকে ৭–০ গোলে বিধ্বস্ত করার পর মাঠে ছোট্ট একটু আনুষ্ঠানিকতা বাকি ছিল আর্জেন্টিনা দলের। সে জন্যই ম্যাচ শেষে মাঠে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিলেন আনহেল দি মারিয়া–লিওনেল মেসিরা। এস্তাদিও মাদ্রে সিউদাদ স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে নেমে এসেছিলেন আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া। একটু পরই ডাক পড়ল মেসির।
গত ডিসেম্বরে বিশ্বকাপ জয়ের উৎসব হিসেবে দুটি প্রীতি ম্যাচের (পানামা ও কুরাসাও) স্মারক জার্সি পরে এগিয়ে যান মেসি। তাপিয়া সবার আগে তাঁর হাতে তুলে দেন একটি স্মারক জার্সি, তারপর একটি বল এবং সবার শেষে একটি স্মারক প্লেট। এই উপহারগুলো কীসের জন্য, সে প্রশ্ন জাগতে পারে।
মেসি কুরাসাওয়ের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছেন। এর মধ্যে প্রথম গোলটি ছিল আর্জেন্টিনার জার্সিতে তাঁর শততম গোল। সব মিলিয়ে আর্জেন্টিনার জার্সিতে ১৭৪ ম্যাচে তাঁর গোলসংখ্যা ১০২।
কুরাসাওয়ের বিপক্ষে ২০ মিনিটে মেসি শততম গোলটি করার পর রেফারি গুস্তাভো তেজেরা বলটি সংগ্রহ করে তাঁর সহকারীকে দেন। মেসির ১০০তম গোলের স্মারক হিসেবে ম্যাচ শেষে বলটি তাঁকে দেওয়ার জন্যই এই আয়োজন বলে জানিয়েছে আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস। পরে তাপিয়ার মাধ্যমে বলটি স্মারক হিসেবে পেয়েও যান মেসি। জার্সি ও প্লেটটিও ছিল শততম গোলের স্মারক উপহার।
কুরাসাওয়ের বিপক্ষে শততম গোলের মাইলফলকের দেখা পাওয়া ছাড়াও রেকর্ড গড়েছেন মেসি। ম্যাচের ২০ মিনিট থেকে ৩৭ মিনিট—এই ১৮ মিনিটের মধ্যে হ্যাটট্রিক তুলে নেন। আর্জেন্টিনার জার্সিতে এটাই মেসির দ্রুততম হ্যাটট্রিক। এর আগের রেকর্ডটি ছিল ২০১৬ কোপা আমেরিকার শতবর্ষ পূর্তি টুর্নামেন্টে।
পানামার বিপক্ষে ৫–০ গোলের জয়ে বিরতির পর মাঠে নেমে ২১ মিনিটের ব্যবধানে হ্যাটট্রিক করেছিলেন মেসি। তবে আর্জেন্টাইন তারকার ক্যারিয়ারে এটাই (কুরাসাও) দ্রুততম হ্যাটট্রিক নয়। ২০১৫ সালের ৮ মার্চ রায়ো ভায়োকানোর বিপক্ষে ১৩ মিনিটের ব্যবধানে করা হ্যাটট্রিকটি মেসির ক্যারিয়ারে দ্রুততম।
ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ৫৭ হ্যাটট্রিকের মধ্যে ৪৯ বার ৩ গোল করেছেন মেসি। ৬ বার করেছেন ৪ গোল এবং ৫ গোল করেছেন দুবার। তবে আর্জেন্টিনার জার্সিতে প্রথমার্ধে এই প্রথম হ্যাটট্রিক করলেন মেসি। আর সব মিলিয়ে প্রথমার্ধে হ্যাটট্রিক তুলে নিলেন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইবারের বিপক্ষে ম্যাচের পর। আর তাতে শততম গোলের মাইলফলকের দেখা পেয়ে রেকর্ডও গড়েছেন।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে ন্যূনতম ১০০ গোল আছে তিনজনের—পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (১৯৮ ম্যাচে ১২২ গোল), ইরানের সাবেক স্ট্রাইকার আলী দাইয়ি (১৪৮ ম্যাচে ১০৯ গোল) ও লিওনেল মেসির (১৭৪ ম্যাচে ১০২ গোল)। এই তিনজনের মধ্যে মেসিই দেশের হয়ে বিশ্বকাপজয়ী শতগোল করা একমাত্র ফুটবলার। নিজের মহাদেশ দক্ষিণ আমেরিকায়ও ছেলেদের মধ্যে দেশের হয়ে শতগোল করা একমাত্র ফুটবলার মেসি। মেয়েদের ফুটবলে আছেন আরেকজন—ব্রাজিলের ‘স্কার্ট পরা পেলে’–খ্যাত মার্তা। ১০৯ গোল করেছেন।
তবে জাতীয় দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিকের রেকর্ডে রোনালদোকে টপকে যেতে পারেননি। দেশের হয়ে রোনালদোর হ্যাটট্রিক ১০টি, মেসির ৯টি। ক্যারিয়ারে হ্যাটট্রিকসংখ্যায়ও মেসির চেয়ে এগিয়ে রোনালদো। ৬২টি হ্যাটট্রিক করেছেন। মেসির ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত করা ১০২ গোলের মধ্যে ৪৮টি গোল এসেছে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে করেছেন ২৮ গোল, কোপা আমেরিকায় ১৩ গোল, বিশ্বকাপে করেছেন ১৩ গোল।