চুমু–কাণ্ড: রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য হেরমোসোর
ঘটনাটা গত বছরের ২০ আগস্ট। সিডনিতে নারী বিশ্বকাপ ফাইনালের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। সেখানে মঞ্চে স্পেনের ফরোয়ার্ড হেনি হেরমোসোর ঠোঁটে চুমু খেয়ে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন লুইস রুবিয়ালেস। সে ঘটনায় রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) সভাপতির পদ থেকে সরেও দাঁড়াতে হয়েছিল তাঁকে। ব্যাপারটা গড়ায় আদালত পর্যন্তও। আজ আদালতে সেই চুমু–কাণ্ড নিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন হেরমোসো।
সাক্ষ্য দিতে লম্বা ধূসর ওভারকোট পরে মাদ্রিদে স্পেনের প্রধান ফৌজদারি আদালত অডিয়েন্সিয়া ন্যাসিওনালে সকাল ১০টার একটু আগে পৌঁছান ৩৩ বছর বয়সী হেরমোসো। রুবিয়ালেস জবরদস্তি করেছেন কি না এবং হেরমোসো যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন কি না, সেটি তদন্ত করছেন বিচারক ফ্রান্সিসকো দে জর্জ।
আদালতের এক বিচারিক সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘সাক্ষ্য দেওয়ার শেষ ধাপে তিনি (হেরমোসো) সরকারি কৌঁসুলির অফিসে দেওয়া বিবৃতিকে অনুমোদন দিয়ে বলেছেন, চুমুটা একদমই অপ্রত্যাশিত ছিল এবং কোনো অবস্থাতেই সেটি সম্মতির ভিত্তিতে হয়নি।’
সিডনির স্টেডিয়াম অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ১–০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় স্পেন। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে দুই হাত দিয়ে হেরমোসোর মাথাটা ধরে তাঁর ঠোঁটে চুমু খান রুবিয়ালেস। এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু পর রুবিয়ালেস বলেছিলেন, ব্যাপারটা ‘সম্মতির ভিত্তি’তে ঘটেছে। যদিও হেরমোসো দাবি করেন উল্টো—সম্মতি ছিল না।
গত সেপ্টেম্বরে রুবিয়ালেসের বিপক্ষে আদালতে মামলা করেন হেরমোসো। তখন তিনি বিচারককে বলেছিলেন, রুবিয়ালেসের পক্ষে কথা বলার জন্য তাঁর ওপর চাপ তৈরি করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরার পথে ফ্লাইটে এবং ইবিজা সৈকতে দলের সঙ্গে ছুটি কাটানোর সময় এই চাপ তৈরি করা হয় তাঁর ওপর। হেরমোসোর সাক্ষ্যের বরাত দিয়ে সূত্রটি এএফপিকে বলেছেন, ‘ঘটনার (চুমু) পর, ভুক্তভোগী ফ্লাইটে স্পেনে ফেরার পথে এবং ইবিজায় সময় কাটানোর সময় তদন্তের মুখে থাকা পক্ষের তরফ থেকে অহর্নিশ চাপের সম্মুখীন হয়েছেন।’
স্পেনের আইন অনুযায়ী, সম্মতি ছাড়া চুমুকে যৌন হয়রানি হিসেবে ধরা হয়। এই অপরাধের তালিকায় যৌন হয়রানি–সম্পর্কিত সব রকম অপরাধই আওতাভুক্ত। এই অপরাধের জন্য জরিমানা থেকে চার বছর জেলবাসের শাস্তিও হতে পারে। ৪৬ বছর বয়সী রুবিয়ালেসকে এর আগে আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন, হেরমোসোর ২০০ মিটারের মধ্যে তিনি যেতে পারবেন না। তাঁর বিরুদ্ধে হেরমোসোকে ‘জবরদস্তি’র অভিযোগও আছে। চুমু–কাণ্ডে হেরমোসো যেন রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে কিছু না বলেন, সে জন্য চাপ তৈরি করা হয়েছিল।
সেই চুমুর পর রুবিয়ালেসকে নিষিদ্ধও করেছিল ফিফা। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরে আদালতে হাজিরা দিয়েছেন রুবিয়ালেস। হেরমোসোর ওপর চাপ তৈরির অভিযোগে বিচারক আরও তিনজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাঁরা হলেন স্পেন নারী দলের কোচ হোর্হে ভিলদা, ছেলেদের দলের পরিচালক আলবার্ট লুকু ও আরএফইএফের বিপণনপ্রধান রুবেন রিভেরা।
হেরমোসোর ওপর চাপ তৈরির অভিযোগে আদালতে আরও বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন দুবার ব্যালন ডি’অরজয়ী স্পেন নারী দলের তারকা অ্যালেক্সি পুতেয়াস এবং জাতীয় দলের আরও দুজন সতীর্থ।