ম্যান সিটির বিপদ ডেকে আনতে পারে ‘ট্রেবল’ জয়ের সুযোগ

এই ম্যান সিটি যেন অপ্রতিরোধ্যছবি: টুইটার

বাজির দর থেকে শুরু করে সবকিছুতেই ম্যানচেস্টার সিটি এগিয়ে। এমনকি ফুটবলের পরিসংখ্যানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘অপ্টা’র সুপারকম্পিউটারও পেপ গার্দিওলার দলের পক্ষে। কম্পিউটার বলছে, ৭৪.১ শতাংশ জয়ের সম্ভাবনা সিটির। ইন্টার মিলানের কি তাহলে কোনো সুযোগই নেই? আছে, সেটা ২৫.৯ শতাংশ। অর্থাৎ আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের আগেই এই ম্যাচে অনেকের চোখে বিজয়ী দল ম্যানচেস্টার সিটি।

তা না ভাবাটাই বরং অনেকের চোখে বোকামি। মৌসুমজুড়েই দুর্দান্ত ফর্মে ছিল সিটি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ জিতে এখন ‘ট্রেবল’ জয়ের সামনে। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় দল হিসেবে সিটি মর্যাদার এই ‘ট্রেবল’ জিততে পারবে যদি আজ ইন্টারকে হারাতে পারে। চ্যাম্পিয়নস লিগের এ মৌসুমে অপরাজিত থাকা সিটিকে ইন্টার আটকাতে পারবে না, এমন ভেবে নিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু ইন্টার মিলানেরও আশার জায়গা আছে। আর সেই আশা দেখাচ্ছে তাদের অতীত সাফল্যের ইতিহাস।

আরও পড়ুন

ইউরোপিয়ান কাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে ইউরোপ–সেরার মুকুট তিনবার জিতেছে ইন্টার। এই তিনবারই তাদের কাছে হেরে যাওয়া প্রতিপক্ষ দলগুলোর ‘ট্রেবল’ জয়ের সুযোগ ছিল। ইন্টারের কাছে হারে তা পণ্ড হয়েছে। সেই একই চ্যালেঞ্জ এখন ম্যানচেস্টার সিটির সামনেও। লিগ ও এফএ কাপ জিতে নেওয়া সিটি এরই মধ্যে ‘ডাবল’ জয় সম্পন্ন করেছে। বাকি আছে শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগ। এই টুর্নামেন্টে ইন্টারের আগের তিনবারের জয়ে যেহেতু প্রতিপক্ষের ‘ট্রেবল’ জয়ের সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে, তাই কে জানে আজও সেই ইতিহাসের হয়তো পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে! ইন্টারের সমর্থকদের অন্তত আশা করাটা তো দোষের কিছু নয়।

আজ কি উৎসবে মাততে পারবে ইন্টার
রয়টার্স

১৯৬৩–৬৪ মৌসুমে প্রথম ইউরোপ–সেরা হয়েছিল ইন্টার। সেবার ইউরোপিয়ান কাপের (চ্যাম্পিয়নস লিগের পূর্ববর্তী সংস্করণ) ফাইনালে তাদের কাছে ৩–১ গোলে হেরেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। মিগুয়েল মুনোজের রিয়াল সেবার এপ্রিলের মধ্যে লিগ জিতে নেয়। এর পাশাপাশি কোপা দেল রের কোয়ার্টার ফাইনালেও উঠেছিল। সে বছর (১৯৬৪) ১৯ মে কোপা দেল রে টুর্নামেন্টের শেষ আট নিশ্চিতের পর ২৭ মে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনাল ম্যাচ খেলতে হয় রিয়ালকে। তার আগে ২৩ মে কোপা দেল রে কোয়ার্টার ফাইনাল প্রথম লেগে আতলেতিকো মাদ্রিদের সঙ্গে ২–২ গোলে ড্র করে মুনোজের দল।

আরও পড়ুন

অর্থাৎ ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনাল খেলতে নামার সময় ‘ট্রেবল’ জয়ের সুযোগ ছিল রিয়ালের। কিন্তু ইন্টারের কাছে ফাইনাল হেরে যাওয়ায় সুযোগ হাতছাড়া হয় ফেরেঙ্ক পুসকাস–আলফ্রেডো ডি স্টেফানোদের। পরে ৩ জুন কোপা দেল রে শেষ আটের ফিরতি লেগের রিপ্লে ম্যাচেও অবশ্য পারেনি রিয়াল। কিন্তু সেবার ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনাল খেলতে নামার সময় ‘ট্রেবল’ জয়ের হাতছানি পেয়েছিল মাদ্রিদের ক্লাবটি।
ইউরোপিয়ান কাপে পরের মৌসুমেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইন্টার (১৯৬৪–৬৫)।

সেবার ফাইনালে ইন্টারের প্রতিপক্ষ ছিল পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকা। ইউসেবিওর দলকে ১–০ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইন্টার। আর ওই হারের মধ্য দিয়ে ‘ট্রেবল’ জয়ের সুযোগ হারিয়েছিল বেনফিকা। পর্তুগিজ প্রিমেরা লিগা জয়ের পর সে বছর (১৯৬৫) ২৭ মে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে ইন্টারের কাছে হারে বেনফিকা। তার আগে পর্তুগাল কাপের কোয়ার্টার ফাইনালেও উঠেছিল পর্তুগিজ ক্লাবটি। কিন্তু ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে সে হারের মধ্য দিয়ে ‘ট্রেবল’ জয়ের সুযোগ হাতছাড়া হয় বেনফিকার।

আরও পড়ুন

ইউরোপ–সেরার ফাইনালে ইন্টারকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাওয়ার বছর দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছে বায়ার্ন মিউনিখও। ২০০৯–১০ মৌসুমে সর্বশেষ ইউরোপ–সেরা হয়েছে ইন্টার। সেটি ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল, যেখানে বায়ার্নকে ২–০ গোলে হারিয়ে ‘ট্রেবল’ জিতেছে জোসে মরিনিওর ইন্টার। ‘ট্রেবল’ জয়ের সুযোগ কিন্তু বায়ার্নেরও ছিল।

বুন্দেসলিগা জয়ের পাশাপাশি ২০১০ সালের ১৫ মে জার্মান কাপও জিতে নেয় বায়ার্ন। এরপর ২২ মে মাদ্রিদে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ইন্টারের কাছে হেরে ‘ট্রেবল’ জয়ের স্বপ্ন বিসর্জন দেয় বায়ার্ন। জার্মান ক্লাবটির মতো ম্যানচেস্টার সিটিও কিন্তু এবার লিগ ও কাপ জিতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের অপেক্ষায়। সেখানে জিতলেই ‘ট্রেবল’ জয়ের ইতিহাস গড়বে গার্দিওলার দল।

কিন্তু ইন্টারের ইতিহাস তো অন্য কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে!