চ্যাম্পিয়নস লিগ
ইংলিশ ক্লাবকে হারানো তো রিয়াল মাদ্রিদের অভ্যাসই
সেমিফাইনালের প্রথম লেগে আজ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল মাদ্রিদের প্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টার সিটি।
‘ম্যানচেস্টার সিটি শুধু রিয়াল মাদ্রিদকে হারাবেই না, উড়িয়ে দেবে।’
চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল নিয়ে এই সাহসী ভবিষ্যদ্বাণীটা এমন একজনের, যাঁর সিটি-ভক্ত হওয়ার কোনো কারণই নেই। বরং ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময় তিনি এমন একটা দলের হয়ে খেলেছেন, যারা শুধু সিটির নগর প্রতিদ্বন্দ্বীই নয়, বলা যায় আজীবনের ‘শত্রু’। ভদ্রলোক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং তাঁর প্রজন্মের সেরা স্ট্রাইকারদের একজন—ওয়েইন রুনি।
পেপ গার্দিওলার এই সিটি দলটাই এমন—নিজেদের খেলা দিয়ে প্রবল প্রতিপক্ষকেও তাদের গুণমুগ্ধ বানিয়ে ফেলতে পারে। লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের কথাই ধরুন না। লিগে গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে তাঁর দলটা গার্দিওলার দলের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। সিটির এই দলটা না থাকলে হয়তো সর্বশেষ পাঁচ মৌসুমে অন্তত তিন বা চারবার ক্লপের লিভারপুলই প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতত। এমন প্রতিপক্ষ হওয়ার পরেও ক্লপ বরাবরই সিটি-মুগ্ধ, তাঁর চোখে গার্দিওলার এই দলটা এই সময়ে ইউরোপের সেরা। রুনিও এ রকমই একজন গার্দিওলা ও সিটি ভক্ত হয়ে উঠেছেন সাম্প্রতিক সময়ে।
তবে সিটিকে নিয়ে রুনি যে ভবিষ্যদ্বাণীটা করেছেন, সেটা এমন একটা দলের বিপক্ষে যাচ্ছে, যাদের উড়িয়ে দেওয়া তো দূরের কথা, হারানোর চিন্তা করতে গেলেও পৃথিবীর সেরা দল বা সেরা কোচের ঘুম নষ্ট হওয়ার কথা। দলটা যে রিয়াল মাদ্রিদ এবং টুর্নামেন্টটা চ্যাম্পিয়নস লিগ! প্রতিবছর ৩২টি দল ইউরোপের নানা দেশ থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে যায়, তবে জিততে যায় সম্ভবত একমাত্র রিয়াল মাদ্রিদই।
লিগ কিংবা ঘরোয়া অন্য টুর্নামেন্টে যে অবস্থাই থাকুক, চ্যাম্পিয়নস লিগে গেলে রিয়াল যেন অন্য এক দল। লুকা মদরিচ-টনি ক্রুস-করিম বেনজেমাদের কথা বাদ দিন, এই বছর তিনেক আগে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়া ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রদ্রিগোর কথা শুনলেই সেটি বুঝতে পারবেন, ‘আমি আসলে ব্যাখ্যা করতে পারব না, চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে নামলে আমাদের কী হয়ে যায়, কীভাবে আমরা এমন পারফর্ম করি! এটা আমাদের জন্য খুব বিশেষ এক টুর্নামেন্ট।’
ওয়েইন রুনি কি তা জানেন না? অবশ্যই জানেন। জানেন বলেই সানডে টাইমস-এ লেখা যে কলামে তিনি এই ভবিষ্যদ্বাণীটা করেছেন, সেখানেই ইউনাইটেড কিংবদন্তি পরে এই লাইনটাও লিখেছেন, ‘তাদের বিপক্ষে বলা কোনো কথা ভুল প্রমাণ করার জন্য কার্লো আনচেলত্তির রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে ভালো আর কোনো দল নেই।’
গার্দিওলার এই প্রবল দাপুটে সিটির জন্যও এটাই সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা—চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদ নামটা। গত মৌসুমের কথাই মনে করে দেখুন। এবারের মতো গত বছরও এই সেমিফাইনালেই মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। প্রথম লেগে ৪-৩ গোলে জেতা সিটি ফিরতি লেগেও ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল ৯০ মিনিট। তারপর যোগ হওয়া সময়ে ৫ মিনিটের এক ঝড়ে সব ওলট-পালট, ওই সময়ে তিন গোল করে রিয়াল ম্যাচ জিতে নিল ৩-১ গোলে, চলে গেল ফাইনালে, পরে জিতে গেল টুর্নামেন্টও।
সেই সিটি এবং এই সিটির মধ্যে অবশ্য একটা বড় পার্থক্য আছে। তখন সিটিতে ‘আর্লিং হলান্ড’ নামে কেউ ছিলেন না। মৌসুমের শুরু থেকে গোলের পর গোল করে যিনি রেকর্ডের পর রেকর্ড ভেঙে যাচ্ছেন। তাঁকে রুখতে গিয়ে প্রিমিয়ার লিগের ডাকসাইটে সব ডিফেন্ডারের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে এবং তাঁরা ব্যর্থ হচ্ছেন।
লিগে এরই মধ্যে ৩২ ম্যাচে ৩৫ গোল করে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড ভেঙে দেওয়া হলান্ডের এবার চ্যাম্পিয়নস লিগে ৮ ম্যাচে গোল ১২টি। এখন আর সিটিকে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ম্যাচ হাতছাড়া করার ভয় পেতে হচ্ছে না, হলান্ড আগেই প্রতিপক্ষকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিচ্ছেন। তাই বলা হচ্ছে, সিটির হয়ে গার্দিওলার চ্যাম্পিয়নস লিগে জয়ের ধাঁধায় একটাই ‘মিসিং পাজল’ ছিল, হলান্ডের মধ্যেই সেটা খুঁজে পেয়েছেন গার্দিওলা।
এটা শুনলে রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়েরা খেপে যেতে পারেন। তাঁদের টুর্নামেন্ট অন্য কোনো দল জিতবে, এটা হয় নাকি! আর চ্যাম্পিয়নস লিগে ইংলিশ ক্লাবকে হারানোর একটা অভ্যাসই তো এখন হয়ে গেছে রিয়াল মাদ্রিদের। গত মৌসুমে শিরোপা জয়ের পথে একে একে হারিয়েছে চেলসি, ম্যান সিটি ও লিভারপুলকে। এবার এরই মধ্যে শেষ ষোলোতে লিভারপুল ও কোয়ার্টার ফাইনালে চেলসিকে হারিয়ে এসেছে।
সুতরাং আজকের সেমিফাইনাল নিয়ে ওয়েইন রুনির ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে একমত হবেন কি না, এটা আপনার ব্যাপার।