ভালোবাসার ক্লাবে যেতে নিজেই দিলেন দলবদলের খরচ
গাবো লোয়াইজা ফুটবলের কেউ নন। তিনি সুইডিশ বাস্কেটবল লিগের দল উমেয়াও বিএসকেটির সহকারী কোচ। লুকাস পেরেজ যা করেছেন, তা দাগ কেটে গেছে লোয়াইজার মনেও। তাঁর টুইট, ‘একধরনের ফুটবলার আছেন, যাঁরা সৌদি আরব কিংবা কাতারে গিয়ে মিলিয়নের ঘরে আয় করে অবসর নেন। আর আছেন লুকাস পেরেজের মতো ফুটবলার, যিনি ভালোবাসার দলে ফিরতে পকেট থেকে আধা মিলিয়ন খরচ করে শীর্ষ বিভাগ থেকে দুই ধাপ নিচে নামতেও পিছপা হন না।’
নিশ্চয়ই ভাবছেন, এই লুকাস পেরেজটা আবার কে? ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো ডাকাবুকো কেউ নন। তবে ৩৪ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড ক্লাবের প্রতি ভালোবাসার রেফারেন্স পয়েন্ট হতে পারেন। ছোট করে তাঁর কাণ্ডটা আগে জানানো যাক। এলচে ছেড়ে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি কাদিজে যোগ দেন পেরেজ। চুক্তি ছিল দেড় বছরের।
কাদিজ এবার লা লিগা পয়েন্ট টেবিলে অবনমন অঞ্চলে (১৯তম) আছে। কিন্তু লা লিগায় এ মৌসুমে কাদিজের হয়ে পেরেজের চেয়ে বেশি গোল (১৪ ম্যাচে ৩ গোল) কেউ করতে পারেননি। পেরেজ চাইলে স্পেনের শীর্ষ স্তরের এ লিগেই থাকতে পারতেন কিংবা পরে চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পারতেন, অন্তত এখন যে বেতন পান, সেটাও ধরে রাখতে পারতেন। কিন্তু ওই যে, পৃথিবীর সব মানুষ এক হয় না।
আলমেরিয়ার বিপক্ষে গত ৩০ ডিসেম্বর বেঞ্চ থেকে নেমে কাদিজকে সমতাসূচক গোল এনে দেন পেরেজ। পরদিনই তাঁর ক্লাব পাল্টে গেল! পেরেজ যেকোনো মূল্যে কাদিজ ছাড়তে চেয়েছিলেন। তাই নিজের রিলিজ ক্লজের বেশ বড় অংশ (প্রায় ৫ লাখ ইউরো, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা) কাদিজকে দিয়ে ছাড়পত্র নিয়ে নেন। প্রশ্ন করতে পারেন, বড় কোনো ক্লাবে যেতেই কি পেরেজ গাঁট থেকে এত পয়সা খরচ করলেন? অন্য কোনো ক্লাবে আরও বেশি বেতন পেতেই বুঝি এই প্রস্থান?
না। এই প্রস্থান ভালোবাসার টানে। ভালোবাসার ক্লাব দেপোর্তিভো লা করুনা তৃতীয় বিভাগে ধুঁকছে। মনের মধ্যে কিছু একটা করার তাড়না অনুভব করছিলেন পেরেজ।
ভালোবাসার দেপোর্তিভোকে টেনে তুলতে স্প্যানিশ ফুটবলে দুই স্তর নিচে নামতে এতটুকু দ্বিধা করেননি। স্পেনের তৃতীয় বিভাগ লিগে চারে অবস্থান করছে দেপোর্তিভো। শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করতে পারলে দ্বিতীয় বিভাগে উঠবে।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’ জানিয়েছে, পেরেজকে ছাড়তে ১০ লাখ ইউরো দিতে হতো কাদিজকে। আর্সেনাল ও ওয়েস্টহাম ইউনাইটেডে খেলা এই ফুটবলার নিজেই প্রায় অর্ধেক টাকা (৪ লাখ ৯৩ হাজার ইউরো) পরিশোধ করেছেন। বাকি ৫ লাখ ৭ হাজার ইউরো দিয়েছে দেপোর্তিভো। ক্লাবটির পুরো টাকা দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। আর দলবদলের শেষ দিন ছিল ৩১ ডিসেম্বর। বাকি মৌসুমের জন্য পেরেজকে সই করিয়ে দেপোর্তিভো বিবৃতি দিয়েছে, ‘মৌসুমের বাকি সময়ের জন্য লুকাস পেরেজ দেপোর্তিভোর খেলোয়াড়। ব্যক্তিগত ও খেলোয়াড়ি প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে সে ঘরে ফিরেছে।’
দেপোর্তিভো লুকাস পেরেজের শৈশবের ভালোবাসার ক্লাব। তাঁর ১২ বছর বয়সে দেপোর্তিভো (১৯৯৯–২০০০) লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তখন ক্লাবটিতে ব্রাজিলের মাউরো সিলভা, পর্তুগালের পলেতা ও নেদারল্যান্ডসের রয় ম্যাকের মতো খেলোয়াড়েরা ছিলেন। লা লিগায় ওই একবারই চ্যাম্পিয়ন হয় দেপোর্তিভো। ২০০৩–০৪ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালেও উঠেছিল স্পেনের গ্যালিসিয়া অঞ্চলের এই ক্লাব।
সে মৌসুমে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানো কোচ লিওনেল স্কালোনি ও উরুগুয়ের ফরোয়ার্ড ওয়াল্টার পানদিনি ছিলেন ক্লাবটিতে। পেরেজ নিজেও দেপোর্তিভোয় খেলেছেন ২০১৪–১৫ মৌসুমে গ্রিসের ক্লাব পাওক থেসালোনকি থেকে ধারে এসে। পরের মৌসুমে দেপোর্তিভো তাঁকে নিজেদের করে নেয়। দুই মৌসুম সেখানে খেলে দুই কোটি ইউরোয় আর্সেনালে যোগ দিয়েছিলেন।
পেরেজ এবার ভালোবাসার সেই ক্লাবে ফেরার পর তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কাদিজের উইঙ্গার ইভান আলেয়ো। তবে শুভেচ্ছাটা যেভাবে জানিয়েছেন, সেটাই হতে পারে ক্লাবের প্রতি ভালোবাসার উদাহরণ, ‘আশা করি, তোমার মতো ফুটবলার আরও জন্ম নিক।’