ভারত–ম্যাচে নায়ক, এরপর খলনায়ক: আবার ভারতকে পেয়ে নায়ক হতে চান সাদ
বাংলাদেশের ফুটবলে সাদ উদ্দিন নামটা এলেই অনেকের চোখে ভাসে সেই দৃশ্যটা। কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ভারতের বিপক্ষে ২০১৯ সালের অক্টোবরে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি–কিকে সাদের উড়ন্ত হেডে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গ্যালারি।
৪২ মিনিটের গোলে পাওয়া এই অগ্রগামিতা ৮৮ মিনিট পর্যন্ত ধরে রেখেছিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জিততে না পারলেও ওই হেড সাদকে রাতারাতি বাংলাদেশের ফুটবলে তারকা বানিয়ে দেয়।
মাঝে তিনটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রতিপক্ষকে পেনাল্টি দিয়ে সিলেটের এই ফুটবলার হয়েছেন খলনায়কও। সেই সাদের সামনে আবারও নায়ক হওয়ার সুযোগ। ২৫ মার্চ শিলংয়ে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে গোল করতে পারলে সেটি হবে তাঁর জীবনের সেরা প্রাপ্তিগুলোর একটি।
সে কথা গতকাল শিলংয়ের জওহরলাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দলের অনুশীলনের ফাঁকে প্রথম আলোর এক প্রশ্নে বললেনও তিনি, ‘ইনশা আল্লাহ সুযোগ পেলে অবশ্যই গোল করে দলকে জেতাতে চাই।’
কিন্তু জিততে হলে যেমন অনুকূল পরিবেশ পেতে হয়, ২০১৯ সালে তা কলকাতায় পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার নিজেদের মনমতো অনুশীলন করা গেছে। পছন্দনীয় ঘাসের মাঠ পেয়েছেন ফুটবলাররা।
কিন্তু এবার শিলং এসে প্রথম দুদিনে অনুশীলন মাঠ নিয়ে বাংলাদেশ দলে রয়েছে অসন্তোষ। সেটা উল্লেখ করে সাদ বললেন, ‘২০১৯ সালে সল্টলেকে ম্যাচের আগে এমন সমস্যা ছিল না। সুযোগ–সুবিধা ভালো ছিল। ভালো মাঠে অনুশীলন করেছি। কিন্তু এবার যা অবস্থা, এটা আমাদের জন্য ভালো নয়। আমরা জানতাম এমন সমস্যার মুখোমুখি হব। তবে আমরা মানসিকভাবে তৈরি। এবার আমাদের জিততে হবে। জয়ের মানসিকতা নিয়েই আমরা এখানে এসেছি।’
সাদ যখন কথাগুলো বলছিলেন, মনে পড়েছিল ২০১৯–পরবর্তী সময়ে ভিন্ন কারণে তাঁর আলোচনায় আসার সেই দিনগুলো। ২০২১ মালদ্বীপ সাফে নেপালের সঙ্গে জিতলে যেখানে ফাইনালে উঠবে বাংলাদেশ—ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে বক্সে তাঁর ফাউলে পিছিয়ে থাকা নেপাল পেনাল্টিতে ১–১ করে। বাংলাদেশ আর ফাইনালে উঠতে পারেনি।
ওই বছরই শ্রীলঙ্কায় চার জাতি টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ড্র করলে ফাইনালে উঠত বাংলাদেশ, সেই ম্যাচে ৯০তম মিনিটে বক্সে বল লাগে সাদের হাতে। পেনাল্টিতে গোল করে স্বাগতিক দল ২–১ গোলে জিতে ফাইনালে উঠে যায়।
২০২৩ সালের মার্চে সিলেটে ফিফা প্রীতি ম্যাচে সেশেলসের কাছে বাংলাদেশের ১–০ গোলে হারের উৎসও ছিল সাদের ফাউল। ৬১ মিনিটে বক্সে উড়ে আসা বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের মাথার ওপর বিপজ্জনকভাবে পা তুলে দিয়েছিলেন সাদ। পেনাল্টিতে গোল করে জিতে যায় সেশেলস। যার ফলে ২০১৯–এর ভারত–ম্যাচের নায়ক পরে তিনটি ভিন্ন আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রতিপক্ষকে পেনাল্টি উপহার দিয়ে বনে যান খলনায়ক। এখন আবার সুযোগ এসেছে নায়ক হওয়ার। আর তা সেই ভারতের মাটিতেই।
যদিও তিনি ডিফেন্ডার, রাইটব্যাকে খেলেন, কিন্তু সুযোগ থাকলে গোল করতে তো আর বাধা নেই। তাই গোল করেই পাঁচ বছর আগের ভারত–ম্যাচের স্মৃতি আবার ফিরিয়ে আনতে চান ২৬ বছর বয়সী ফুটবলার।
সাদকে জাতীয় দলের আক্রমণভাগে ব্যবহার করেছিলেন জেমি ডে। ভারতের বিপক্ষে আলোচিত গোলটা পান ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলেই। পরে তাঁকে নামিয়ে আনা হয় রক্ষণে। মূলত আবাহনীতে রক্ষণে খেলতেন বলেই পরবর্তী সময়ে জাতীয় দলে রাইটব্যাক হিসেবে তাঁকে ব্যবহার করেন জেমি ডে।
বসুন্ধরা কিংসেও রাইটব্যাকে খেলেন সাদ। তবে ২০২৩ সালে সেশেলসের বিপক্ষে সেই গোলের পর সাদকে আক্রমণ বা মাঝমাঠে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের তৎকালীন সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি সাদ রক্ষণের খেলোয়াড় নয়। তাকে ফরোয়ার্ড বা মাঝমাঠে খেলালে ভালো হবে। রক্ষণে খেলতে থাকলে সে বারবার এমন ভুল করে প্রতিপক্ষকে পেনাল্টি দিতেই থাকবে। এ নিয়ে তিনবার দিল। কাজেই এটা নিয়ে ভাবতে হবে।’
তবে হাভিয়ের কাবরেরা এসে সেভাবে ভাবেননি। সাদকে তিনি রক্ষণেই ব্যবহার করেছেন। সেটিও অবশ্য নিয়মিত নন। ২৫ মার্চ ভারত–ম্যাচে সাদকে যদি কাবরেরা একাদশে রাখেন সেটি রাখবেন রক্ষণভাগেই। আর সুযোগ পেলে সাদ আবার গোল করে নায়ক বনে যাবেন না, তা কে বলতে পারে!