গার্দিওলার সিটি এবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন
এই একটা ট্রফিই বাকি ছিল ম্যানচেস্টার সিটির।
পেপ গার্দিওলার অধীনে ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী দল হয়ে উঠার পরও বড় দুটি ট্রফি গত মৌসুমের আগ পর্যন্ত অধরা রয়ে গিয়েছিল—চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ক্লাব বিশ্বকাপ। অবশেষে গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরন হয় সিটির। তারপর বাকি ছিল শুধু ক্লাব বিশ্বকাপ, যেখানে সুযোগ পেতে হয় আসলে মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে। ইউরোপ-সেরা হওয়ায় সিটি সেই সুযোগটা পেল এবার প্রথম। আর সেই প্রথম সুযোগেই বিশ্বজয়ও করল পেপ গার্দিওলার দল। সৌদি আরবের জেদ্দায় কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামের ফাইনালে আজ সিটি ৪-০ গোলে হারিয়েছে ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সকে।
ইংল্যান্ডের চতুর্থ দল হিসেবে ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল সিটি। এর আগে এই কৃতিত্ব ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি ও লিভারপুলের। প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ, চ্যাম্পিয়নস লিগ, উয়েফা সুপার কাপের পর এই বছর এটি সিটির পঞ্চম শিরোপা।
এ জয়ে সিটির যেমন ট্রফিকেস পূর্নতা পেল, তেমনি একটা বৃত্তপূরণ হলো গার্দিওলারও। ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত বার্সেলোনার কোচ থাকা অবস্থায় জিতেছিলেন সম্ভাব্য সব শিরোপা। এবার সিটির হয়েও আর সব জেতা হয়ে গেল তাঁর। ক্লাব বিশ্বকাপ অবশ্য তিনি আগেই জিতেছিলেন তিনবার। দুইবার বার্সেলোনার হয়ে দুইবার, একবার বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে। চতুর্থবার জেতায় তাঁর একটা বিশ্বরেকর্ডও হয়ে গেল। এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে এখন তিনিই সবচেয়ে সফল কোচ। তিনবার ক্লাব বিশ্বকাপ জিতে দ্বিতীয় স্থানে কার্লো আনচেলত্তি।
ফ্লুমিনেন্স কোচ ফার্নান্দো দিনিজ, যিনি একই সঙ্গে আবার ব্রাজিল জাতীয় দলেরও অন্তর্বর্তীকালীন কোচ, তাঁর ফুটবল দর্শন কিছুটা গার্দিওলার কাছাকাছি। অনেকের চোখে তাই তিনি ‘ব্রাজিলের গার্দিওলা’। জেদ্দার আজ ফাইনালটাকেও তাই মনে করা হচ্ছিল পেপ গার্দিওলার সঙ্গে ‘ব্রাজিলের গার্দিওলা’র লড়াই। অবশ্য সেই লড়াইয়ে দিনিজ জিতে গেলে সেটা বড় চমকই হতো। ফ্লুমিনেন্স যতই দক্ষিণ আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন হোক, ইউরোপের চ্যাম্পিয়নদের চেয়ে ওরা ঢের পিছিয়ে। মঠের লড়াইয়েও সেটা স্পষ্ট হয়ে গেল ম্যাচ শুরুর পরই।
৪০ সেকেন্ডের মধ্যে সিটির আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড হুলিয়ান আলভারেজের গোল! থ্রো ইন থেকে পাওয়া বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে ফ্লুমিনেন্স ডিফেন্ডার মার্সেলো বল দিয়ে দিয়ে দিলেন সিটি ডিফেন্ডার নাথান আকের পায়ে। বক্সের অনেক বাইরে থেকে নেওয়া আকের শট ফ্লুমিনেন্স গোলরক্ষক ফ্যাবিও ফিরিয়ে দিলেও তাঁর সামনেই থাকা আলভারেজ ফিরতি বলটা বুকে লাগিয়ে পাঠিয়ে দেন জালে।
এরপর বিরতির আগেই সিটি মিডফিল্ডার ফোডেনের শট ক্লিয়ার করতে গিয়ে ফ্লুমিনেন্সের ডিফেন্ডার ও অধিনায়ক নিনো পাঠিয়ে দিলেন নিজেদের জালে।
সিটির কাজটা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল তখনই। বিরতির পর সিটি করেছে আরও দুটি গোল। ৭২ মিনিটে ফোডেন, ৮৮ মিনিটে আলভারেজ। তারপর শেষ বাঁশি এবং যথারীতি সিটির উৎসব।
দারুণ দুটি গোল করে ম্যাচসেরা হয়েছেন হুলিয়ান আলভারেজ। একই মৌসুমে দেশের হয়ে বিশ্বকাপ ও ক্লাবের হয়ে ট্রেবল জেতার অনন্য কীর্তি তো আগেই গড়েছিলেন, এবার ক্লাবের হয়েও জিতলেন বিশ্বকাপ। ২৩ বছর বয়সেই আর কিছু জেতার বাকি রইল না তাঁর!