ইংল্যান্ডের ‘সোনালি প্রজন্মের’ খেলোয়াড়দের যে ভূমিকায় পায়ের তলায় মাটি নেই

ওয়েইন রুনি, ফ্র‍্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, স্টিভেন জেরার্ডএএফপি, ইনস্টাগ্রাম

ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, স্টিভেন জেরার্ড, ওয়েইন রুনি, গ্যারি নেভিল, পল স্কোলস ও সোল ক্যাম্পবেল—নব্বই দশক এবং তার পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের সোনালি প্রজন্মের কথা বললে অবধারিতভাবেই আসবে এই নামগুলো। জাতীয় দলের জার্সিতে অর্জনের টালিখাতা সমৃদ্ধ না হলেও ক্লাব ফুটবলে তাঁরা হয়ে উঠেছিলেন মহারথী।

ইংলিশ ফুটবলে আলো ছড়িয়ে নিজেদের সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন তাঁরা। নামের পাশে জুটেছে কিংবদন্তি মর্যাদাও। নিজ নিজ ক্লাবের হয়ে জিতেছেন গুরুত্বপূর্ণ সব ট্রফিও। খেলোয়াড় হিসেবে দারুণ সফল এই তারকারা পরবর্তী সময় হেঁটেছেন কোচিংয়ের পথে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোচ হিসেবে পায়ের নিচে মাটি পাননি কেউই। শুরুতেই ব্যর্থ হয়ে কেউ কেউ অবশ্য কোচিংয়ের পথ থেকেই সরে গেছেন। মজার ব্যাপার, এই ৬ জন মিলে জিতেছেন মাত্র ১টি ট্রফি।

আরও পড়ুন

ইংল্যান্ডের সোনালি প্রজন্মের তারকাদের অন্যতম ওয়েইন রুনি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে ৫টি প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি ও ১টি চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফিসহ জিতেছে সম্ভাব্য সব শিরোপা। ইউনাইটেডের সবচেয়ে বেশি গোল এবং ইংল্যান্ডের জার্সিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডসহ অসংখ্য রেকর্ড আছে রুনির দখলে। ২০২০ সালে ডার্বি কাউন্টির দায়িত্ব নেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু করেন কোচিংয়ের পথে যাত্রা।

বার্মিংহাম থেকে ছাঁটাই হলেন ওয়েইন রুনি
এক্স

কিন্তু খেলোয়াড় রুনির সাফল্যের ছিটেফোঁটার দেখাও কোচ হিসেবে তিনি পাননি।
এখন পর্যন্ত তিনটি ক্লাবের হয়ে কোচিং করে কিছুই জিততে পারেননি রুনি। সবশেষ ২ জানুয়ারি রুনিকে ছাঁটাই করে চ্যাম্পিয়নশিপের ক্লাব বার্মিংহাম সিটি। মাত্র ১৫ ও ৮৩ দিন দায়িত্বে থাকার পর ছাঁটাই করা হয়েছে এই কিংবদন্তিকে। এর আগে ডিসি ইউনাইটেডের কোচ হিসেবেও কাজ করেছেন রুনি। কিন্তু সেখানেও থিতু হতে পারেনি। এক বছর হওয়ার আগেই হারাতে হয়েছে চাকরি। কোচ হিসেবে এখন পর্যন্ত ১৫৫ ম্যাচে কোচিং করিয়ে রুনি জিতেছেন মাত্র ৪০ ম্যাচে। জয়ের হার মাত্র ২৫.৮। ভবিষ্যৎ এখন রুনিকে কোথায় নিয়ে যায়, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

লিভারপুল কিংবদন্তি স্টিভেন জেরার্ডের গল্পটা অবশ্য ভিন্ন। লিভারপুলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগসহ একাধিক ট্রফি আছে জেরার্ডের দখলে। সাবেক এই ইংলিশ মিডফিল্ড জেনারেল ২০১৬ সালে ফুটবলকে বিদায় বলে শুরু করেন কোচিং ক্যারিয়ার। শুরুতে লিভারপুলের বয়সভিত্তিক দলের কোচ হিসেবে কাজ করেন জেরার্ড। ২০১৮ সালে দায়িত্ব নেন স্কটিশ ক্লাব রেঞ্জার্সের। ২০২০-২১ সালে স্কটিশ প্রিমিয়ারশিপের শিরোপাও জেতেন জেরার্ড।

আল ইত্তিফাকের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জেরার্ড
এক্স

এই সাফল্য তাঁকে নিয়ে আসে ইংলিশ ক্লাব অ্যাস্টন ভিলায়। কিন্তু ভিলা পার্কের ক্লাবটির হয়ে ভালো করতে পারেননি জেরার্ড। একপর্যায়ের ব্যর্থতার দায় নিয়ে ক্লাব ছাড়তে হয় তাঁকে। বর্তমানে সৌদি আরবের ক্লাব আল ইত্তিফাকের কোচ হিসেবে কাজ করছেন জেরার্ড। সেখানেও অবশ্য প্রথম মৌসুমে ভালো অবস্থায় নেই তাঁর দল। সৌদি প্রো লিগে জেরার্ডের দলের অবস্থান ১৯ ম্যাচ শেষে ৮ নম্বরে। কোচ হিসেবে এখন পর্যন্ত ২৫৪ ম্যাচে জেরার্ড জয়ের দেখা পেয়েছেন ১৪৫ ম্যাচে। তবে ৫৭.১ শতাংশ জয়ের হার নিয়েও একটির বেশি শিরোপা জেতা হয়নি তাঁর।

আরও পড়ুন

৩টি প্রিমিয়ার ও ১টি চ্যাম্পিয়নস লিগসহ ২০১৬ সালে অবসরে যান ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড। চেলসির এই কিংবদন্তি খেলোয়াড় কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। রুনির মতো তাঁরও প্রথম ক্লাব ছিল ডার্বি কাউন্টি। সেখান থেকে ২০১৯ সালে আসেন চেলসিতে। ঘরের ছেলে বলেই ল্যাম্পার্ডের ওপর আস্থা রেখেছিল চেলসি। কিন্তু সেই আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি সাবেক এই মিডফিল্ডার। তাঁর অধীন দুটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলে হেরেছে চেলসি। ব্যর্থতার দায়ে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে মাঝ মৌসুমেই ছাঁটাই করা হয় তাঁকে।

কোচ হিসেবে এখনো তেমন কোনো সাফল্য পাননি ল্যাম্পার্ড
এক্স

এরপর ২০২২ সালে জানুয়ারিতে ল্যাম্পার্ডকে কোচ বানায় এভারটন। কিন্তু সেখানেও তেমন কিছু করতে পারেননি। আবার মাঝ মৌসুমে ছাঁটাই। গত বছরের এপ্রিলে ভারপ্রাপ্ত কোচ হিসেবে আবার চেলসিতে আসেন ল্যাম্পার্ড। তবে মরিসিও পচেত্তিনো দায়িত্ব নেওয়ার পর সরতে হয় তাঁকে। কোচিং ক্যারিয়ারে ১৯৬ ম্যাচে জিতেছেন ৮১টি, হেরেছেন ৭১ ম্যাচে এবং ড্র করেছেন ৪৪ ম্যাচে। এখনো অবশ্য কোনো দলের দায়িত্বে নেই ল্যাম্পার্ড। সামনে নিজের ভাগ্য বদলাতে পারেন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

বর্তমানে ফুটবল–পণ্ডিত হিসেবে বিশেষ পরিচিত হলেও গ্যারি নেভিলেরও আছে কোচিংয়ের ইতিহাস। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি এই রাইটব্যাক ২০১২ সালে ইংল্যান্ডের সহকারী কোচ হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। এরপর ২০১৫-১৬ মৌসুমে স্প্যানিশ ক্লাব ভ্যালেন্সিয়ার কোচের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সেই দায়িত্ব অবশ্য ২৮ ম্যাচের বেশি স্থায়ী হয়নি। ১০ জয়, ১১ হার ও ৭ ড্র নিয়ে থামতে হয় তাঁকে। এরপর অবশ্য আর কোচিংয়ে ফেরা হয়নি নেভিলের।

আরও পড়ুন

নিজের সময়ের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার বিবেচনা করা হতো পল স্কোলসকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ১১টি লিগ শিরোপা এবং ২টি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাসহ বেশ কিছু ট্রফি আছে তাঁর দখলে। অবসরের পর স্কোলস ২০১৫ সালে এক ম্যাচের জন্য ভারপ্রাপ্ত কোচ হন সালফোর্ড সিটির। নেভিল, রায়ান গিগস ও নিকি বাটের সঙ্গে এই ক্লাবের মালিকানাও আছে তাঁর। লম্বা বিরতির পর ২০১৯ সালে ওল্ডহ্যাম অ্যাথলেটিকের দায়িত্ব নিয়ে আবার ফিরেন কোচিংয়ে। এবার তাঁর দায়িত্বের স্থায়িত্ব হয় ৭ ম্যাচ। সময়ের বিবেচনায় এক মাসেরও কম। পরে আবার অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হন সালফোর্ডের। স্কোলসের ক্যারিয়ার গ্রাফই অবশ্য বলছে যে কোচিং নিয়ে তিনি সেভাবে মনোযোগী ছিলেন না।

স্কোলসের তুলনায় ক্যাম্পবেলের কোচিং ক্যারিয়ার অবশ্য বেশ দীর্ঘই ছিল। সাবেক এই আর্সেনাল তারকা নিচের স্তরের ক্লাব ম্যাকলেসফিল্ডের কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। এই ক্লাবের ৩০ ম্যাচে দায়িত্ব পালন করে মাত্র ৮ ম্যাচে জয়ের দেখা পান ক্যাম্পবেল। এরপর তিনি কোচের দায়িত্ব পালন করেন সাউথহেন্ডের হয়ে। এবার ২৩ ম্যাচে তিনি দলকে জেতাতে পারেন মাত্র ৪ ম্যাচে। ৫৩ ম্যাচে তাঁর জয় ছিল মাত্র ২২.৬ শতাংশ ম্যাচে।