বার্সার খরচের হাতকে আরও ছোট করল লা লিগা
দুঃসংবাদ পেল বার্সেলোনা। ক্লাবটির বার্ষিক খরচসীমা আরও ৬ কোটি ৬০ লাখ ইউরো কমিয়েছে লা লিগা কর্তৃপক্ষ। এর আগে বার্সার বার্ষিক খরচের সীমা ২৭ কোটি ইউরো বেঁধে দিয়েছিল লা লিগা। গতকাল সেটি ২০ কোটি ৪০ লাখ ইউরোয় নামিয়ে আনার কথা জানিয়েছে স্পেনের শীর্ষ লিগ।
লা লিগায় সর্বোচ্চ বার্ষিক খরচসীমা রিয়াল মাদ্রিদের ৭২ কোটি ৭০ লাখ ইউরো। আতলেতিকো মাদ্রিদের বার্ষিক খরচসীমা বার্সার চেয়ে বেশি—৩০ কোটি ৩০ লাখ ইউরো। বার্সার খরচসীমা গত সেপ্টেম্বরেই একবার কমিয়েছে লা লিগা। তখন প্রায় ৪০ কোটি ইউরো খরচ কমিয়ে ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ইউরো থেকে ২৭ কোটিতে নামিয়ে আনা হয়েছিল বার্সার বার্ষিক খরচসীমা।
লা লিগার ক্লাবগুলোর বার্ষিক খরচসীমায় রিয়াল, আতলেতিকো এবং বার্সার পরই সেভিয়া (১৫ কোটি ৫০ লাখ ইউরো) ও রিয়াল সোসিয়েদাদ (১৪ কোটি ৪০ লাখ ইউরো)। লিগের মোট ২০টি দলের মধ্যে সবচেয়ে কম খরচসীমা আলাভেসের—৩ কোটি ১০ লাখ ইউরো।
লা লিগা কর্তৃপক্ষ খরচসীমা আরও কমানোয় নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলো বার্সা। কারণ, দলবদলের বাজারে টাকা ঢেলে স্কোয়াড আরও শক্তিশালী করতে চেয়েছিল ক্লাবটি। ইএসপিএনকে একটি সূত্র জানিয়েছে, বার্সার বর্তমান স্কোয়াডের খরচসীমা ৪০ কোটি ইউরোর বেশি, যা লা লিগার বর্তমান বেঁধে দেওয়া খরচসীমার দ্বিগুণের বেশি। এ কারণে আর্থিক বিধিনিষেধ এখন চোখ রাঙাচ্ছে বার্সাকে। তারা বেতন ও দলবদলের জন্য যে অর্থ জমিয়ে রেখেছে, সেখান থেকে কিছু অংশ খরচ করতে পারবে। আর এ অংশের পরিমাণ নির্ভর করছে জমানো টাকার পরিমাণের ওপর।
ইএসপিএন জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে খরচসীমা টপকে যাওয়া ক্লাবগুলো তাদের জমানো অর্থের ৫০ শতাংশ খরচ করতে পারবে। আগামী মৌসুম শুরুর আগে এই নিয়মের কোনো পরিবর্তন না করা হলে খেলোয়াড় নিবন্ধনে সমস্যায় পড়বে বার্সা। ক্লাবের বর্তমান খেলোয়াড় থেকে নতুন সাইনিংয়ের ক্ষেত্রে নিবন্ধনে জটিলতায় পড়বে কাতালান ক্লাবটি। ইনিগো মার্তিনেজ এবং ভিতর রককে যেমন শুধু এই মৌসুমের জন্য নিবন্ধিত করা হয়েছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের নতুন করে বার্সার খরচসীমা বেঁধে দেওয়ার পেছনে কিছু কারণ আছে। ২০২২ সালে নিজেদের সম্পদ বিক্রি করে বার্সা আর্থিক দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিল। এতে ২০২২-২৩ মৌসুম শুরুর আগে বার্সার খরচসীমা বেশ বেড়েছিল ৬৫ কোটি ৬০ লাখ ইউরো। কিন্তু বার্সা ধাপে ধাপে যেসব সম্পদ বিক্রি করেছিল, তার মধ্যে বার্সা স্টুডিওস—যার নাম এখন বার্সা ভিশন—থেকে পুরো টাকাটা তারা পায়নি। এতে লিবেরো নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে নিজেদের স্টুডিও পুনরায় বিক্রি করেছিল তারা, কিন্তু সেখান থেকেও পুরো টাকাটা পায়নি তারা।
চলতি মৌসুমেও রাজস্ব আয়ে মার খেয়ে যাবে বার্সা। ক্যাম্প ন্যু পুনঃসংস্কার করায় এ মৌসুমে বার্সার ম্যাচগুলো খেলা হচ্ছে অলিম্পিক স্টেডিয়ামে। এতে রাজস্ব আয় কমবে বলেই মনে করা হচ্ছে। আর সেটি ফেব্রুয়ারির শুরুতেই জানিয়েছিলেন বার্সা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা। বলেছিলেন, টিকিট বিক্রি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না।
লা লিগায় ক্লাবগুলো এই খরচসীমা কর্তৃপক্ষ বেঁধে দেয় একটি নিয়মের ওপর ভিত্তি করে। ক্লাবগুলোর বার্ষিক আয় থেকে ঋণ পরিশোধ এবং খেলার বাইরে বিভিন্ন খরচ বাদ দিলে যে টাকার অঙ্কটা থাকে তার ওপর ভিত্তি করে ক্লাবগুলোর খরচসীমা বেঁধে দেয় লা লিগা কর্তৃপক্ষ।
একটি ক্লাব এক মৌসুমে বেতন, বোনাস, দলবদলের ঋণ কিস্তিতে পরিশোধ—এসব বিষয়ে কত খরচ করবে, সেটাই লা লিগার বেঁধে দেওয়া খরচসীমা। তবে এক মৌসুমে কোনো কোনো ক্লাবের এর চেয়ে বেশি অর্থের প্রয়োজন হতে পারে। লা লিগার এই বেঁধে দেওয়া খরচসীমা কোনো ক্লাব অতিক্রম করলে তাদের ওপর আর্থিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।