নারী ফুটবল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে প্রথমবারের মতো খেলেছে অস্ট্রেলিয়ার ‘মাটিলডাস’। সেখানে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের কাছে হেরে গেছে ৩–১ গোলে। সেই দুঃখ আছে, থাকবেও কিছুদিন।
তবে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার কোনো ফুটবল দলের বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলা নিয়ে পুরো দেশ যে উন্মাদনা দেখেছে, সেটিকে অভূতপূর্বই বলা যায়। বিশেষ করে সেমিফাইনালের দিন ম্যাচের ভেন্যু সিডনি শহরটাই যেন বদলে গিয়েছিল। সকাল সকাল স্কুলের বাচ্চাদের হলুদ-সবুজ সাজে স্কুলে আসতে দেখা যায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মাথায় ও গলায় দেখা যায় ‘গো মাটিলডাস’ লেখা টুপি আর স্কার্ফ। সিডনির স্থানীয় কাউন্সিলগুলোর মাঠে ছিল বিশাল জনসমাগমের আয়োজন।
খেলা শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত এমন উৎসব-উত্তেজনার আমেজেই আচ্ছন্ন হয়েছিল সিডনি। বিশ্বকাপ কিংবা বড় কোনো খেলা ঘিরে বাংলাদেশের মতো উৎসব-হইহুল্লোড়ের আমেজের স্বাদ পাওয়া যায় না অস্ট্রেলিয়ায়। খেলাপ্রেমী জাতি হলেও অস্ট্রেলিয়ায় মাঠের বাইরে আয়োজন তেমন চোখে পড়ে না। তবে মেয়েদের বিশ্বকাপ নিয়ে সিডনিতে আয়োজন ছিল একটু বেশি রঙিন।
অস্ট্রেলিয়ার নারী ফুটবল দল পরিচিত মাটিলডাস ডাকনামে। এর আগে পুরুষ দলের ডাকনাম ‘সকারুস’ আর নারীদের ‘ফিমেল সকারুস’ বলা হতো। ১৯৯৫ সালে মেয়েদের দলের জন্য ভিন্ন ডাকনাম হিসেবে ভোটের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার একটি লোকসংগীত থেকে ‘মাটিলডাস’ শব্দটির প্রচলন হয়। মাটিলডাস শব্দের অর্থ ‘যুদ্ধে যারা শক্তিশালী’। আর এবারের দলটির স্লোগান ছিল, ‘গো মাটিলডাস, হ্যাশট্যাগ টিল ইট’স ডান’।
সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে সিডনির বিখ্যাত অলিম্পিক পার্কের অ্যাকর স্টেডিয়ামে, যেখানে ছিলেন প্রায় ৭৫ হাজার দর্শক। কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার শ্বাসরুদ্ধকর জয়ের পর সেমিফাইনালের সব টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে যায়। সিডনির প্রায় সব কাউন্সিলের পক্ষ থেকে স্থানীয় মাঠে বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজন করা হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা সবান্ধব খাবারদাবার নিয়ে জড়ো হন মাঠে। ঘরোয়া আয়োজনেও কমতি রাখেনি সিডনির প্রবাসী বাংলাদেশিরা, ঘরেই বড় টেলিভিশনে পরিবার-স্বজন নিয়ে চলেছে খেলা দেখা।
অস্ট্রেলিয়ার কোনো ফুটবল দলই বিশ্বকাপে এত দূর আসতে পারেনি। এর আগে মাটিলডাসের সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা। এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে তাই বাড়তি আমেজ ছিল অস্ট্রেলিয়া জুড়ে।
এমনকি অতি আবেগের বশে দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বিশ্বকাপ জিতলে অস্ট্রেলিয়ায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার কথা বলে বসেন। আর সিডনির রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলসের মুখ্যমন্ত্রী ক্রিস মিনস রাজ্যের জন্য ছুটির ব্যবস্থার পাশাপাশি একটি বিশাল প্যারেড বের করারও আশা ব্যক্ত করেছিলেন। তবে অস্ট্রেলিয়া হেরে যাওয়ায় এসবের কিছুই হয়নি শেষ পর্যন্ত। স্বপ্ন তুলে রাখতে হয়েছে মেয়েদের বিশ্বকাপের পরবর্তী আসরের জন্য।