ফ্রান্স কি আর্জেন্টিনার জন্য ‘কঠিন’ প্রতিপক্ষ
আর্জেন্টিনার জন্য ফ্রান্স কি খুব কঠিন প্রতিপক্ষ?
অনেকেই এমন কথা বলছেন। তবে ‘কঠিন’ যদি না–ও হয়, বিশ্বকাপ জেতার পথে আর্জেন্টিনার সামনে মহাশক্তিশালী ফ্রান্স বড় বাধাই। ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়েই মেসিদের লড়তে হবে কিলিয়ান এমবাপ্পে, আতোয়াঁন গ্রিজমানদের ফ্রান্সের সঙ্গে।
এবার বিশ্বকাপে কিন্তু একটি জায়গায় আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের দারুণ মিল। গ্রুপ পর্বে দুই দলই নিজেদের ‘আরব’ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে হেরেছে। আর্জেন্টিনা নিজেদের প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে হেরে গিয়েছিল। ফ্রান্স হেরেছে তিউনিসিয়ার কাছে, গ্রুপের শেষ ম্যাচে। এর বাইরে অবশ্য যথেষ্ট দাপট দেখিয়েই দুই দল গ্রুপ পর্বের বাধা ডিঙিয়েছে। আর্জেন্টিনা পেছনে ফেলেছে মেক্সিকো ও পোল্যান্ডকে। ফ্রান্স ডেনমার্ক ও অস্ট্রেলিয়াকে।
১৮ ডিসেম্বরের ফাইনালটি ফ্রান্স–আর্জেন্টিনা ম্যাচের আবরণে মেসি–এমবাপ্পে লড়াইও। পিএসজির দুই সতীর্থ ফাইনালে দেশের শ্রেষ্ঠত্বের পাশাপাশি নিজেদের অর্জনের লড়াইয়েও মেতে উঠবেন।
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত মেসি ও এমবাপ্পে—দুজনেই পাঁচটি করে গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে আছেন। ‘গোল্ডেন বুট’ নিয়ে তো তাঁরা দুজন লড়ছেনই, তাঁরা খুব ভালোভাবেই আছেন ‘গোল্ডেন বল’ বা সেরা খেলোয়াড় হওয়ার লড়াইয়েও।
তবে দিনের শেষে দুজনেরই মূল লক্ষ্য ২৪ ক্যারেট ওজনের সোনার ওই ট্রফিটি। যেটি দিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে নিজেদের ঘোষণা করবেন তাঁরা। এই জায়গায় এমবাপ্পে ‘অভিজ্ঞ’। তিনি ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ জিতেছেন। এবার জিতলে টানা দ্বিতীয়বার সেই অভিজ্ঞতা হবে। ২০১৪ সালে মেসি আর্জেন্টিনাকে নিয়ে ফাইনালে উঠেছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপ জেতা হয়নি তাঁর।
এবারের বিশ্বকাপে এমবাপ্পের যে পারফরম্যান্স, তাতে আর্জেন্টিনা–সমর্থকেরা চিন্তিত হতেই পারেন। বিশেষ করে গোটা সময় বোতলবন্দী থাকার পরও এমবাপ্পের যেকোনো ফাকফোঁকর বের করে প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দেওয়ার যে প্রবণতা, সেটিই চিন্তার মূল কারণ। ফাইনাল জিততে হলে আর্জেন্টিনাকে যেকোনো মূল্যে এমবাপ্পেকে ঠেকাতে হবে। কোচ লিওনেল স্কালোনির মূল চিন্তা যে এমবাপ্পে, সেটি না বললেও চলছে।
তবে আগের ম্যাচগুলোতে ইংল্যান্ড কিংবা মরক্কো যেভাবে এমবাপ্পেকে সামলেছে, স্কালোনি সমাধান খুঁজে নিতে পারেন। আর্জেন্টিনার রক্ষণে থাকবেন নিকোলাস ওতামেন্দি ও ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো। এমবাপ্পেকে সামলানোর দায়িত্ব থাকবে হয়তো লিসান্দ্রো মার্তিনেজের কাঁধে। তাঁকে নিচে নামিয়ে রক্ষণকে জমাট করতে পারেন স্কালোনি। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার গিদো রদ্রিগেজকে এ ম্যাচে খেলানো হতে পারে। তিনি মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচে খেলেছিলেন। খুব যে ভালো খেলেছিলেন তা নয়, তবে ফ্রান্সের বিপক্ষে তিনি কাজে লাগতে পারেন। তবে স্কালোনি নিশ্চয়ই বিশেষ পরিকল্পনা আঁটছেন। তবে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে সেই পরিকল্পনা ঠিকঠাক কাজে লাগবে কি না, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
তবে আর্জেন্টিনার বড় ভরসা অবশ্যই মেসি। তিনি যে ম্যাচের পরিস্থিতি খুব ভালো পড়তে পারেন, সেটি তিনি তাঁর ক্যারিয়ারজুড়েই প্রমাণ করে দিয়েছেন। মেসি যেকোনো কিছুই করতে পারেন। আর্জেন্টিনার জন্য এটা একটা শক্তির দিক। তারা নিজেরা যেমন এমবাপ্পেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, ঠিক তেমনি ফ্রান্সকেও ব্যস্ত থাকতে হবে মেসিকে নিয়ে। এমবাপ্পে যেমন যেকোনো সুযোগে যেকোনো কাণ্ড ঘটিয়ে দিতে পারেন, মেসিও তা–ই। মেসি অনেক বেশি অভিজ্ঞও।