মেসির মতো প্রতিভা, ব্রাজিলের নতুন বিস্ময়–বালকের নাম তাই ‘মেসিনিও’
এস্তেভাও উইলিয়ানের বয়স ১৫ বছর। পালমেইরাস এখনো তাঁর সঙ্গে পেশাদার চুক্তি সই করেনি। ২০২১ সালে শিক্ষানবিশ চুক্তিতে তাঁকে পালমেইরাসের একাডেমিতে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিভার দ্যুতিটা আরও পাঁচ বছর আগেই ছড়িয়েছেন এই উইঙ্গার।
মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁর সঙ্গে পেশাদার চুক্তি করেছে বিশ্বখ্যাত ক্রীড়াসরঞ্জাম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নাইকি। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে প্রতিভা পেলেই তাঁকে সবার আগে নিজেদের দলে টানার চেষ্টা করে নাইকি। রোনালদো থেকে ভিনিসিয়ুস...প্রায় সবার ক্ষেত্রেই এমন হয়েছে। কিন্তু এস্তেভাও উইলিয়ানকে কেউ টপকে যেতে পারেননি।
নাইকির সঙ্গে পেশাদার চুক্তি করা ব্রাজিলের সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার পালমেইরাসের বয়সভিত্তিক দলের এই উইঙ্গার। তাঁর আরও একটি নাম আছে। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের খোঁজখবর রাখলে উইলিয়ানের সেই নাম বলামাত্রই তাঁকে কেউ কেউ চিনে ফেলতে পারেন। ব্রাজিলের পরবর্তী ‘ওয়ান্ডার বয়’!
মেসিনিও—এস্তেভাওয়ের এই নামকে নাম না বলে তকমা বলাই ভালো। কারণ, আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসির মতোই তাঁর খেলার ধরন। বাঁ পা–টা ছুরির মতো চলে প্রতিপক্ষের রক্ষণে। এস্তেভাও নিজেও মেসির বড় ভক্ত। তাই ওই তকমা, ‘আমাকে এস্তেভাও উইলিয়ান নামে ডাকলেই খুশি হব। কারণ, ওটাই আমার নাম। লোকে ওই তকমা দিয়েছে, কারণ, আমি মেসিকে খুব পছন্দ করি।’
ব্রাজিলের লোকজন এস্তেভাওকে যেমন পছন্দ করেন, তেমনি ইউরোপের বড় কিছু ক্লাবও তাঁর ওপর নজর রাখছে। স্পেনের সংবাদমাধ্যম ‘মুন্দো দেপোর্তিভো’ জানিয়েছে, পিএসজি এরই মধ্যে তাঁকে কেনার জন্য যোগাযোগ করেছে পালমেইরাসের সঙ্গে। ‘গোল ব্রাজিল’ জানিয়েছে, শুধু পিএসজি নয়, আর্সেনাল আর বার্সেলোনাও এস্তেভাওয়ের জন্য ধরনা দিয়েছে পালমেইরাসে। ক্লাবটির ম্যানেজার হোয়াও পাওলো সাম্পাইয়োর সূত্র মারফত আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘ক্লারিন’ জানিয়েছে, পিএসজি তিন–তিনবার যোগাযোগ করেছে পালমেইরাসে।
এস্তেভাওকে কিনতে তিন ধাপে দাম বাড়িয়েছে পিএসজি। প্রথমে ৩০ (মিলিয়ন ইউরো), তারপর ৩৫ এবং শেষে ৪০ মিলিয়ন ইউরো দাম বলেছে। পালমেইরাস রাজি হয়নি। এস্তেভাওয়ের প্রতিভার নিক্তিতে পালমেইরাস সম্ভবত মনে করছে, তাঁর দাম আরও বেশি। ব্রাজিলের শীর্ষ লিগের এই ক্লাব এস্তেভাওয়ের সঙ্গে আপাতত চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে তাঁর গায়ে ‘রিলিজ ক্লজ’–এর চড়া মূল্য সেঁটে দিতে চায়। আর এস্তেভাও চাইলেই এখন খেলার জন্য দেশ ছাড়তে পারবেন না।
২০০৭ সালের ২৪ এপ্রিলে তাঁর জন্ম। ২০২৫ সালের ২৪ এপ্রিলের আগপর্যন্ত, অর্থাৎ ১৮ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে ব্রাজিলেই খেলতে হবে। পালমেইরাসেরই মূল দলে খেলা ব্রাজিলের ১৬ বছর বয়সী আরেক ‘বিস্ময় বালক’ এনদ্রিকের ক্ষেত্রেও ঠিক তা–ই হয়েছে। গত বছর ১৫ ডিসেম্বর তাঁকে কেনার খবর নিশ্চিত করে রিয়াল মাদ্রিদ। মাদ্রিদের ক্লাবটির পক্ষ থেকে বলা হয়, পালমেইরাস ও এনদ্রিকের পরিবারের সঙ্গে সম্মত হয়েছে রিয়াল। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগপর্যন্ত পালমেইরাসেই থাকবেন এনদ্রিকে। রিয়ালে আসবেন ১৮ বছর বয়স পূর্ণ করে।
এনদ্রিকের দলবদলের জন্য ৩৫ মিলিয়ন ইউরো এবং অন্যান্য শর্ত মিলিয়ে আরও ২৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ হবে রিয়ালের।
ব্রাজিলের অনূর্ধ্ব–১৭ দলে গত বছর অক্টোবরে ডাক পান এস্তেভাও। সাও পাওলোয় অনূর্ধ্ব–২০ বছর বয়সীদের নিয়ে টুর্নামেন্ট ‘কোপিনহা’য় (লিটল কাপ) আলো ছড়িয়ে সবার নজরে পড়েছেন। ব্রাজিলের অনূর্ধ্ব–২০ বছর বয়সী সেরা ফুটবলারদের নিয়ে এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০০৬ সাল থেকে। ১৯৬৯ সাল থেকে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টে আগে অনূর্ধ্ব–২১ দলের খেলোয়াড়েরা অংশ নিতেন।
কোপিনহায় গত বৃহস্পতিবারই সাম্পাইয়োর বিপক্ষে পালমেইরাসের ৬–০ গোলের জয়ে দারুণ একটি গোল করেন এস্তেভাও। ডান প্রান্তে বল পেয়ে ড্রিবলিংয়ে ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে মেসির মতোই বাঁকানো শটে গোল করেন। এই অল্প বয়সেই ব্রাজিলিয়ান কাপ, সুপার কাপ এবং অনূর্ধ্ব–১৫ ও অনূর্ধ্ব–১৭ বছর বয়সীদের পলিস্তা টুর্নামেন্ট জিতেছেন এস্তেভাও।
‘মুন্দো দেপোর্তিভো’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এস্তেভাও নিজের লক্ষ্য জানাতে গিয়ে মেসির পথেই হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘আমি ইউরোপে গিয়ে বার্সেলোনার হয়ে খেলতে চাই...সে (মেসি) এমন কেউ, যাঁকে দেখে আমি প্রেরণা পাই এবং তাঁর সবকিছু ভালোভাবে খেয়াল করি।’ স্পেনের সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’ জানিয়েছে, এ বছর এপ্রিলে এস্তেভাওয়ের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়াবে পালমেইরাস। আর রিলিজ ক্লজ ধরা হবে পাঁচ কোটি ইউরো।