জবাব চাই! জবাব চাই!
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিওনেল মেসির ভক্তদের গলায় এখন অনেকটাই এমন সুর। ফরাসি সাময়িকী ফ্রান্স ফুটবলের দেওয়া বর্ষসেরার পুরস্কার ব্যালন ডি’অরের জন্য মনোনীত ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা হয়নি মেসির। কিন্তু আছেন ফুটবল মাঠে তাঁর তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। কেন আর কোন যুক্তিতে?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যখন এসব প্রশ্নের ঝড় বইছে, তখন এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিল সাময়িকীটি।
পিএসজিতে মেসির সতীর্থ নেইমারেরও জায়গা হয়নি ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকায়। তবে মেসির বাদ পড়া নিয়েই আলোচনা হচ্ছে বেশি। পিএসজির হয়ে গত মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৪ ম্যাচে ১১ গোল করেন মেসি। বোঝাই যাচ্ছে, পিএসজিতে নিজের প্রথম মৌসুমে আশানুরূপ পারফরম্যান্স করতে পারেননি সাতবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী। গত মৌসুমের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আর তাতে ২০০৫ সালের পর এই প্রথমবারের মতো ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা হয়নি মেসির।
১৯৫৬ সাল থেকে ব্যালন ডি’অর পুরস্কারের প্রচলন করা সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’ মেসিকে তালিকার বাইরে রাখার ব্যাখ্যা দিয়েছে ফরাসি সংবাদমাধ্যম লেকিপ। সংবাদমাধ্যমটিতে প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করা হয় এবং ফ্রান্স ফুটবলের হয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন সাময়িকীটির উপ-প্রধান সম্পাদক এমানুয়েল বোয়ান। মেসির বাদ পড়া প্রসঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘২০০৬ থেকে মেসি টানা ১৫ বার জায়গা পেয়েছেন (তালিকায়), সাতবার জিতেছেন ব্যালন ডি’অর এবং এত এত শিরোপা জিতেছেন যে অবশ্যম্ভাবীভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তাঁর নামটা চলে আসে। ৩০ জনের এ তালিকা প্রস্তুতের সময় মেসি আলোচনায়ও ছিলেন। কিন্তু ব্যালন ডি’অরের জন্য নতুন যে মানদণ্ড ঠিক করা হয়েছে, তা মেসির পক্ষে ছিল না; খেলোয়াড়ের পুরো ক্যারিয়ার বিবেচনার বিষয়টি উঠে গেছে, নতুন মডেলে পুরো বছরও নয়, একটা মৌসুম বিবেচনা করা হয়েছে, যে কারণে ২০২১ সালের ১১ জুলাই কোপা আমেরিকা জয় বিবেচনায় আসেনি।’
এমানুয়েল বোয়ান ফ্রান্স ফুটবলের পক্ষ থেকে দেওয়া এই যুক্তির সঙ্গে পিএসজিতে তাঁর প্রথম মৌসুমের পারফরম্যান্সও যোগ করেন, ‘আর এটা স্বীকার করতেই হবে, পিএসজিতে তাঁর প্রথম মৌসুম খুব বাজে কেটেছে, সেটি পরিসংখ্যান এবং (খেলা) দেখার সৌন্দর্য বিচারে।’
ব্যালন ডি’অরে গত বছর সংশোধিত নিয়ম অনুযায়ী, সেরা খেলোয়াড় বিচারের জন্য সবার আগে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দেখা হবে। দলগত পারফরম্যান্স আসবে পরে। সে হিসেবে মেসি গত মৌসুমে লিগ জিতলেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ভালো ছিল না।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর্তুগিজ তারকা রোনালদোর সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ব্যাখ্যাও দেন বোয়ান। মেসি নেই, কিন্তু রোনালদো কীভাবে জায়গা পেলেন—এ নিয়ে তুমুল শোরগোলের মাঝে বোয়ানের দাবি, ‘পরিসংখ্যান ঠিক উল্টোটা বলছে।’ অর্থাৎ পরিসংখ্যান রোনালদোর পক্ষে বলে দাবি করেন বোয়ান। তাঁর যুক্তি, ‘এই মৌসুমে রোনালদো জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোল করেন (১১৭)। চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বেও দারুণ ছিলেন রোনালদো, তাঁর ৪ গোলে ৭ পয়েন্ট পেয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। প্রিমিয়ার লিগে দুটি হ্যাটট্রিকসহ ১৮ গোল করেছেন। সব মিলিয়ে ৪৯ ম্যাচে ৩২ গোল হয়তো তাঁর সেরা মৌসুম নয়, কিন্তু বিশ্বের সেরা ৩০ খেলোয়াড়ের তালিকায় থাকতে যথেষ্ট।’
ব্যালন ডি’অর এর আগে দেওয়া হতো বছরের পারফরম্যান্স দেখে—বিবেচিত হতো জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর। অর্থাৎ দুটি মৌসুমের অর্ধেক অংশ বিবেচনা করা হতো, পুরো এক মৌসুম নয়। কিন্তু এবার থেকে নিয়ম হয়েছে, পুরো এক মৌসুমের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নেওয়ার—সেটি আগস্ট থেকে জুলাই পর্যন্ত।
যেমন ধরুন, এবার বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে নভেম্বরে। আগের নিয়ম চালু থাকলে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স এ বছরের ব্যালন ডি’অরে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু মৌসুম বিবেচনা করায় কাতার বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স বিবেচিত হবে ২০২৩ ব্যালন ডি’অরের নির্বাচনের সময়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে যেহেতু খেলা হবে, তাই স্বাভাবিকভাবেই তা ২০২২–২৩ মৌসুমে পরে যাবে। এবারের ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকায় খেলোয়াড়েরা যেমন জায়গা পেয়েছেন গত বছরের আগস্ট থেকে এ বছরের জুলাই পর্যন্ত এক মৌসুমের পারফরম্যান্স বিচারে।
আর এ বিষয়ই মেসিকে ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে ছিটকে ফেলেছে। মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকা জিতেছেন গত বছর জুলাইয়ে। গত মৌসুমে বাদ পড়েন চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো থেকে। লি আঁতেও পিএসজির হয়ে ভালো খেলতে পারেননি। লিগে ২৬ ম্যাচে মাত্র ৬ গোল করেন।
এবারের ব্যালন ডি’অর পুরস্কার দেওয়া হবে ১৭ অক্টোবর প্যারিসে।