মেসি কেন উয়েফার বর্ষসেরা তিনে
নাটকীয় কিছু না ঘটলে লিওনেল মেসির ইউরোপীয় ফুটবল অধ্যায় শেষ। প্রায় দুই দশক বার্সেলোনা ও পিএসজিতে কাটিয়ে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক চলে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ফুটবলে। তবে চলে যাওয়ার আগে সর্বশেষ মৌসুমে যে ছাপ রেখেছেন, তাতে ইউরোপীয় ফুটবলের বড় এক অর্জন হাতছানি দিচ্ছে মেসিকে। উয়েফার ২০২২–২৩ মৌসুমের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের সেরা তিনে মনোনয়ন পেয়েছেন মেসি। তাঁর সঙ্গে সেরার দৌড়ে আছেন চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী ম্যানচেস্টার সিটির দুই ফুটবলার আর্লিং হলান্ড ও কেভিন ডি ব্রুইনা।
উয়েফা বর্ষসেরার পুরস্কারের জন্য প্রথমে সংস্থাটির টেকনিক্যাল স্টাডি গ্রুপ ক্লাব ও জাতীয় দলের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিয়ে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে দেয়। তালিকায় থাকা খেলোয়াড়দের ভোট দেন উয়েফা আয়োজিত প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইউরোপা লিগ ও কনফারেন্স লিগের প্রথম রাউন্ডে খেলা দলগুলোর কোচ, নির্বাচক ও নির্বাচিত সাংবাদিকেরা।
এবার সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন হলান্ড, মেসি ও ডি ব্রুইনা। বেশি ভোট পাওয়ার তালিকার সেরা তিনে মেসিকে দেখে অনেকে অবাক হতে পারেন। শেষ মৌসুমে পিএসজির হয়ে লিগ আঁ জিতলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে অর্জন নেই মেসির। তাঁর দল পিএসজি দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বাদ পড়ে। যদিও ৭ ম্যাচ খেলে ৪ গোলের পাশাপাশি ৪ গোলে সাহায্য করে মেসি ছিলেন ছন্দেই। একটিতে হন ম্যাচসেরাও।
উয়েফার ওয়েবসাইটে মেসির মনোনয়নে থাকার বিষয়ে বলা হয়, ‘যদিও মৌসুম শেষ করেছেন পিএসজির হয়ে দ্বিতীয় লিগ আঁ ট্রফি দিয়ে, তবে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জয়ই সত্যিকারের দৃষ্টি কেড়েছে। প্রজন্মের আইকন হিসেবে ডিয়েগো ম্যারাডোনার পর প্রথম আর্জেন্টাইন হিসেবে বিশ্বকাপের ট্রফি হাতে তুলেছেন মেসি, বিশ্বকাপে সাতটি গোল করেছেন, জিতেছেন গোল্ডেন বলের পুরস্কার। মার্চে ইতিহাসের তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ১০০তম আন্তর্জাতিক গোলের মাইলফলকও স্পর্শ করেন।’
মেসি ছাড়া সেরার মনোনয়ন পাওয়া বাকি দুজন অবশ্য চ্যাম্পিয়নস লিগ দিয়েই সেরার তালিকায় এসেছেন। নরওয়েজীয় তারকা সিটিতে যোগ দেওয়া প্রথম মৌসুমেই করেন ৫২ গোল, যার মধ্যে চ্যাম্পিয়নস লিগে ১২টি, প্রিমিয়ার লিগে ৩৬টি। হলান্ডের এই ‘গোলমেশিন’ হয়ে ওঠার পেছনে অন্যতম অবদান ছিল ডি ব্রুইনার। ৩২ বছর বয়সী এই বেলজিয়ান মিডফিল্ডার প্রিমিয়ার লিগে ১৬টি ও চ্যাম্পিয়নস লিগে ৭টি অ্যাসিস্ট করেন। এই দুই প্রতিযোগিতায় গোলও করেন ৯টি।
ডি ব্রুইনা, হলান্ড আর মেসির পর চতুর্থ ও পঞ্চম সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুজনও ম্যানচেস্টার সিটির। ট্রেবলজয়ী দলের অধিনায়ক ইলকায় গুনদোয়ান পান মোট ১২৯ পয়েন্ট। সেরা তিনে মনোনয়ন না পাওয়াকে দুর্ভাগ্য ভাবতে পারেন তাঁর সতীর্থ রদ্রি। ২৮ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার চ্যাম্পিয়নস লিগের মৌসুমসেরা ও ফাইনালসেরা। পাশাপাশি উয়েফা নেশনস লিগজয়ী স্পেন দলেও ছিলেন। মোট ১১০ ভোট পেয়ে রদ্রি হয়েছেন পঞ্চম।
বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করা কিলিয়ান এমবাপ্পে পেয়েছেন ৮২ ভোট, তালিকার ছয় নম্বরে। সেরা দশে থাকা অন্য চার খেলোয়াড় হচ্ছেন লুকা মদরিচ (৩৩ পয়েন্ট), মার্সেলো ব্রজোভিচ (২০ পয়েন্ট), ডেকলান রাইস (১৪ পয়েন্ট) ও অ্যালেক্সিস মাক অ্যালিস্টার (১২ পয়েন্ট)।
বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পাশাপাশি বর্ষসেরা কোচের সেরা তিনের নামও প্রকাশ করেছে উয়েফা। এই তিনজন হচ্ছেন ম্যানচেস্টার সিটির পেপ গার্দিওলা, ইন্টার মিলানের সিমন ইনজাগি এবং নাপোলির লুসিয়ানো স্পালেত্তি।
৩১ আগস্ট মোনাকোয় চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বের ড্র অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।