এবার অভিষেক রাঙালেন মেসি, কেমন ছিল তাঁর আগের অভিষেক ম্যাচগুলো
লিওনেল মেসির অভিষেককে ঘিরে কয়েক দিন ধরেই উত্তাপ বাড়ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে। মেসির পায়ে বল দেখতে মুখিয়ে ছিলেন ভক্ত-সমর্থকেরা। সেই সঙ্গে কিছুটা শঙ্কাও কি ছিল না! আগের অভিষেকগুলোতে সেভাবে নিজেকে রাঙাতে পারেননি আর্জেন্টাইন এই মহাতারকা। এবারও তেমন কিছু হয় কি না, তাই নিয়ে ছিল যত শঙ্কা।
লিগস কাপে মেক্সিকান ক্লাব ক্রুজ আজুলের বিপক্ষে মেসি মাঠে নামেন ম্যাচের ৫৪ মিনিটে। এরপর ৯৪ মিনিট পর্যন্ত একরকম সাদামাটা মেসিকেই দেখা গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, আরও একবার হতাশা নিয়েই অভিষেক ম্যাচ শেষ করবেন মেসি।
কিন্তু কে জানত এবারের গল্পটা ভিন্নভাবে শেষ হবে! অন্তিম মুহূর্তে ২০ গজ দূর থেকে মেসি আবির্ভূত হলেন দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিক নিয়ে। টপ কর্নার দিয়ে বল জালে জড়িয়ে নিজের অভিষেক রাঙানোর সঙ্গে দুই মাসের বেশি সময় পর জয়ও এনে দিলেন ইন্টার মায়ামিকে। দুর্দান্ত এ গোলে মেসি প্রলেপ দিয়েছেন আগের অভিষেক ম্যাচগুলোর ক্ষতেও। এখন মেসির দুর্দান্ত অভিষেকের দিনে দেখে নেওয়া যাক তাঁর আগের অভিষেকগুলো কেমন ছিল।
বার্সেলোনা
বার্সেলোনা লিওনেল মেসির আঁতুড়ঘর। এখান থেকেই শ্রেষ্ঠত্বের পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। কাতালান এই ক্লাবের ব্যক্তিগত ও দলীয় পর্যায়ের সবকিছুই জিতেছেন মেসি। ২০০৪ সালের ১৬ অক্টোবর প্রথমবার বার্সার সিনিয়র দলের জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন মেসি। মহাকাব্যিক এক যাত্রা শুরুর পথে মেসি নিজের প্রথম ম্যাচটি খেলেছিলেন বার্সার নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী এসপানিওলের বিপক্ষে। ১৭ বছর বয়সী মেসি সেদিন পরেছিলেন ৩০ নম্বর জার্সি।
তবে মেসিকে সেদিন অভিষেকের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল ম্যাচের ৮২ মিনিট পর্যন্ত। বার্সার সে সময়ের তারকা খেলোয়াড় ডেকোর বদলি হিসেবে নেমেছিলেন ‘এলএম টেন’। মাঠে নেমে নিজের ছাপ রাখার তেমন কোনো সুযোগই পাননি মেসি। যাঁর বদলি হিসেবে নেমেছিলেন সেই ডেকোর করা গোলই সেদিন বার্সাকে জিতিয়েছিল।
আর্জেন্টিনা
বার্সেলোনার হয়ে অভিষেকের প্রায় এক বছর পর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন মেসি। বিশ্বকাপ জয়ের প্রায় ১৭ বছর আগে শুরু হয় মেসির এ যাত্রা। তবে বুদাপেস্টে হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে সেই ম্যাচ মেসির জন্য ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। সেদিনও বদলি হিসেবে নামেন ৬৩ মিনিটে। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সিতে মেসির অভিষেক স্থায়িত্ব পেয়েছিল মাত্র ৪৩ সেকেন্ড। বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে মেসির জার্সি টেনে ধরেন হাঙ্গেরির ভিলমোস ফনজাক। জবাবে ক্ষুব্ধ মেসি হাত দিয়ে গুঁতো দেন ফনজাককে। শাস্তিস্বরূপ লাল কার্ড দেখিয়ে মেসিকে বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দেন রেফারি। রেফারির এমন সিদ্ধান্তে হতাশা ও অবিশ্বাস নিয়ে মাঠ ছেড়ে যান মেসি। তবে মেসির ক্যারিয়ার শেষ পর্যন্ত তাঁর অভিষেকের প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকেনি। জাতীয় দলের হয়ে উত্থান পতনের সময় পার করে কোপা আমেরিকা, ফিনালিসিমা, সর্বোপরি বিশ্বকাপ শিরোপাও জিতেছেন মেসি।
পিএসজি
২০২১ সালের দলবদলে অনেক বেদনা নিয়ে বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে গিয়েছিলেন মেসি। বার্সা ছাড়ার বেদনা মনে ক্ষত তৈরি করলেও পিএসজিতে দারুণ কিছু করতে চেয়েছিলেন মেসি। প্যারিসের ক্লাবটির হয়ে মেসির অভিষেক হয় ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট রেঁসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। এ ম্যাচেও যথারীতি বদলি হিসেবে মাঠে নামানো হয়েছিল মেসিকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে বার্সার মতো পিএসজিতেও অভিষেকে মেসির পরনে ছিল ৩০ নম্বর জার্সি, পিএসজিতে ১০ নম্বর জার্সি পরেন নেইমার।
সেদিন পিএসজির এই ব্রাজিলিয়ান তারকার বদলি হিসেবেই ম্যাচের ৬৬ মিনিটে মাঠে নেমেছিলেন মেসি। বল পায়ে দারুণ কিছু ঝলক দেখালেও গোলের দেখা পাননি এই মহাতারকা। উল্টো মেসি মাঠে নামার আগেই জোড়া গোল করে সব আলো নিজের দিকে টেনে নেওয়ার আয়োজন সেরে রাখেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। পিএসজিতে মেসির যাত্রাটা তাঁর অভিষেকের মতোই সাদামাটা ছিল। পরে অবশ্য মেসি নিজেও বলেছেন ক্লাবটিতে তিনি ভালো ছিলেন না।