সিটি-আর্সেনালের সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা পেতে পারে আর কোন দুই দল
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফুটবল লিগের কথা এলে সবাই একবাক্যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের নামই বলবেন। সবচেয়ে বেশি পরাশক্তি ক্লাব এ লিগেই খেলে।
প্রিমিয়ার লিগ কেন এত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, সেটা পয়েন্ট তালিকায় চোখ রাখলেই বোঝা যায়। এপ্রিলের শুরুর দিকেও মনে হচ্ছিল আর্সেনাল এবার লিগ শিরোপা জিতে ১৯ বছরের আক্ষেপ ঘোচাতে যাচ্ছে। কিন্তু আজ নতুন মাসের প্রথম দিন সবার ওপরে ম্যানচেস্টার সিটি।
টানা তিন ড্রয়ের পর গত মঙ্গলবার সিটির সঙ্গে ‘অঘোষিত ফাইনালে’ বাজেভাবে হেরে নিজেদেরই ডুবিয়েছে আর্সেনাল। সেদিন ৪–১ গোলের জয়ে গানারদের সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধানে দুইয়ে নামিয়ে এনেছিল পেপ গার্দিওলার দল। তবে দুই ম্যাচ কম খেলায় মিকেল আরতেতার দলকে টপকে যাওয়া সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কাল ফুলহামকে ২–১ গোলে হারিয়ে সেটিও করে ফেলেছে সিটি। ৭৬ পয়েন্ট নিয়ে প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা উঠে এসেছে শীর্ষে, ৭৫ পয়েন্টে থেমে থাকা আর্সেনাল নেমে গেছে দুইয়ে।
দুই দলের কারা লিগ শিরোপা জিতবে, সেটা জানতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে বড় একটা কাজ এরই মধ্যে করে ফেলেছে ম্যান সিটি ও আর্সেনাল। ইংল্যান্ড থেকে চ্যাম্পিয়ন লিগে সরাসরি খেলার সুযোগ পায় প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ চার দল, সেটা তো সবারই জানা। সে হিসেবে সিটি ও আর্সেনাল আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলা নিশ্চিত করে ফেলেছে। সিটি ব্যাপারটাকে অভ্যাস বানিয়ে ফেললেও আর্সেনালের জন্য বড় অর্জনই বলা চলে। গানাররা যে ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসরে ফিরছে অর্ধযুগ পর!
বাকি দুটি জায়গার জন্য চলছে ‘ষষ্ঠমুখী’ লড়াই। নিউক্যাসল ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, টটেনহাম হটস্পার, অ্যাস্টন ভিলা এমনকি ব্রাইটনও চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নেওয়ার লড়াইয়ে টিকে আছে।
মাঝে খেই হারালেও এপ্রিলে সাত ম্যাচের ছয়টিতেই জেতা নিউক্যাসল এখন ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার তিনে। তাদের বাকি আর পাঁচটি ম্যাচ। এই পাঁচ ম্যাচ থেকে ন্যূনতম ৯ পয়েন্ট পেলেই দুই দশক পর চ্যাম্পিয়ন লিগের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্লাব।
৬৩ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার চারে আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এরিক টেন হাগের দলের ম্যাচ বাকি আরও ছয়টি। ছয় ম্যাচ থেকে ১১ পয়েন্ট পেলে তাদেরও শীর্ষ চারে থাকা নিশ্চিত হবে। তাই ইংল্যান্ড থেকে সিটি ও আর্সেনালের সঙ্গী হিসেবে আপাতদৃষ্টে নিউক্যাসল ও ইউনাইটেডেরই চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
তবে পয়েন্ট তালিকার পরের চার দল লিভারপুল, টটেনহাম, অ্যাস্টন ভিলা ও ব্রাইটনকে কোনোভাবেই গণনার বাইরে রাখা যায় না। শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগ কেন, ইউরোপা লিগ এমনকি কনফারেন্স লিগের আশাও একসময় ছেড়ে দিয়েছিলেন লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ। তবে অলরেডরা টানা চার জয়ে পাশার দান পাল্টে দিয়েছে। গত রাতে মহানাটকীয় ম্যাচে টটেনহামকে ৪–৩ ব্যবধানে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ পাঁচে উঠে এসেছে তারা।
এপ্রিলে মাত্র একটি ম্যাচে জয় পাওয়া টটেনহাম নেমে গেছে ছয়ে। দেড় মাসের ব্যবধানে তৃতীয় কোচের অধীনে খেলতে নামা উত্তর লন্ডনের ক্লাবটির পয়েন্ট ৫৪, লিভারপুলের ৫৬। তবে লিভারপুল এক ম্যাচ কম খেলায় সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।
৪০ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগে ফেরার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল অ্যাস্টন ভিলা। তবে গত রাতে ইউনাইটেডের কাছে হেরে স্বপ্নটা ধূসর হয়ে গেছে। পয়েন্ট তালিকার পাঁচ থেকে সাতে নেমে গেছে উনাই এমেরির দল। তাদের ম্যাচ বাকি আর চারটি। সব কটি জিতলেও ৬৬ পয়েন্টের বেশি হবে না। গোল পার্থক্যেও বাকিদের চেয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে। তার মানে নিউক্যাসল আর ১ পয়েন্ট পেলে কিংবা ইউনাইটেড একটি ম্যাচ জিতলেই অ্যাস্টন ভিলার কিঞ্চিৎ সম্ভাবটুকুও শেষ হয়ে যাবে।
সম্ভাবনা জিইয়ে রাখার দিক থেকে বরং ব্রাইটনকেই এগিয়ে রাখতে হয়। ৫২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার আটে থাকলেও বাকিদের চেয়ে তিন ম্যাচ কম খেলেছে তারা। দলটির ম্যাচ বাকি আরও সাতটি। সব কটি জিতলে পয়েন্ট হবে ৭৩। তবে আরও ২১ পয়েন্ট তুলে নেওয়া ব্রাইটনের জন্য অকল্পনীয় ব্যাপারই মনে হবে। কারণ, শেষ সাত ম্যাচের চারটিতেই তাদের প্রতিপক্ষ কারা, জানেন? সিটি, আর্সেনাল, নিউক্যাসল, ইউনাইটেড—মানে এ মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ চার দল।
ইংল্যান্ড থেকে পাঁচটি দলকেও চ্যাম্পিয়নস লিগের মূল পর্বে খেলতে দেখা গেছে। সর্বশেষ এমনটা হয়েছে ২০১৭–১৮ মৌসুমে। প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে থাকা চার দলের সঙ্গে ইউরোপা লিগজয়ী দল চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার সুযোগ পায়। সেবার লিগে শীর্ষ চারে না থাকলেও ইউরোপা লিগ জেতায় চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নিয়েছিল ইউনাইটেড। তবে এবার ইউরোপা লিগ থেকে ইংলিশ ক্লাবগুলো আগেই ছিটকে পাড়ায় এ ধরনের কোনো সম্ভাবনা নেই।