কাজী সালাহউদ্দিন সরবেন কোন পথে
২০২৩ সালের মার্চে হঠাৎ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আরিফ হোসেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেও মূলত বাফুফের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড ও নীতিনির্ধারকদের ওপর নাখোশ হয়েই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
১৬ মাস পর আবারও বাফুফেতে পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পিতবার রাতে বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আবদুস সালাম মুর্শেদী। পদত্যাগপত্রে সরে দাঁড়ানোর কারণটা ব্যক্তিগত বলা হলেও দেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তনই যে এর নেপথ্য, তা পরিষ্কারই।
সালাম মুর্শেদী খুলনা-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। বাফুফের বর্তমান কমিটির সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদও যশোর-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া আরও দুই সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া, মহিউদ্দিন আহমেদও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন, নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তারসহ অন্যরাও আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ। ফলে দেশের পরিবর্তিত অবস্থায় বাফুফেতে সংস্কার চান অনেকেই। সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থকদের সংগঠন ‘ফুটবল বাংলাদেশ আলট্রাস’ কাজী সালাহউদ্দিন, সালাম মুর্শেদী ও মাহফুজা আক্তারের পদত্যাগের দাবি তোলে। তিনজনের মধ্যে এখন পর্যন্ত শুধু সালাম মুর্শেদীই পদত্যাগ করেছেন।
সালাম মুর্শেদীর পদত্যাগ নিয়ে বাফুফের ভেতরে নানা আলোচনা চলছে। এ ব্যাপারে জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন।
তবে সালাম মুর্শেদীর পদত্যাগে বাফুফের অনেকেই নাকি অবাক হয়েছেন। বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্য জাকির হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ‘সালাম ভাইয়ের পদত্যাগে ফেডারেশনের অনেকে অবাক হয়েছেন। কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি তিনি। ফেডারেশনের নির্বাচনের ঠিক আগে এভাবে কেন গেলেন, বুঝতে পারছি না। তিনি বাফুফের নতুন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলে না-ই করতেন, কিন্তু এভাবে সরে যাবেন, ভাবতে পারিনি।’
বাফুফের বর্তমান কমিটির সদস্য সাবেক ফুটবলার ইলিয়াস হোসেন জানিয়েছেন, সভাপতি কী সিদ্ধান্ত নেন, তার ওপরই নির্ভর করবে অনেক কিছু। ইলিয়াস বলেছেন, ‘দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরলে বাফুফে সভাপতি হয়তো কথা বলবেন সবার সঙ্গে। সভাপতি সবার সঙ্গে বসার পর বোঝা যাবে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়। তবে এটা বলতেই পারি, নির্বাচনই বাফুফের ক্ষমতাবদলের একমাত্র পথ। সে পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে।’ বাফুফের আরেক সদস্য আমের খানেরও একই মত, ‘ফিফা যেহেতু অন্য কমিটি গ্রহণ করবে না, তাই নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত।’
বাফুফের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩ অক্টোবর। ২৬ অক্টোবর নির্বাচনের তারিখ ঠিক করে ফিফার অনুমোদন আগেই চেয়েছে বাফুফে। ফিফা অনুমোদনও দিয়েছে। ওদিকে টানা পঞ্চম মেয়াদে বাফুফের নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন কাজী সালাহউদ্দিন। কিন্তু পরিবর্তিত অবস্থায় তিনি নির্বাচন করবেন কি না, তা পরিষ্কার নয়। যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কাজী সালাহউদ্দিন ফোন ধরেননি। তবে জানা গেছে, তিনি দেশেই আছেন।
সাবেক ফুটবলার আশরাফউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, কাজী সালাহউদ্দিনসহ বাফুফের পুরো কমিটিরই এখন সরে যাওয়া উচিত। ফিফার অনুমোদন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন একটা কমিটি করার পরামর্শ তাঁর। আশরাফউদ্দিন বলছেন, ‘সালাম বুদ্ধিমান, তাই সরে গেছে। বাফুফেতে যেহেতু পদত্যাগ শুরু হয়েছে, এ মুহূর্তে সবার পদত্যাগ করে চলে যাওয়া উচিত। শূন্যতা কাটাতে ফিফার সঙ্গে যোগাযোগ করে তিন মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন একটি কমিটি করা যেতে পারে। ২৬ অক্টোবর নির্বাচন করে তারা চলে যাবে। এ সময়ে রুটিন কাজগুলো করবে বাফুফের বেতনভুক্ত কর্মীরা।’
সেই অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির রূপরেখাও দিলেন আশরাফউদ্দিন, ‘ফুটবল–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ৭-১০ জনের ছোট একটি কমিটি হতে পারে। কমিটির সদস্যরা নির্বাচন করতে পারবেন না। তবে ফিফার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমেই যেন এ কমিটি করা হয়। নইলে দেশের ফুটবলকে ফিফার নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হতে পারে।’