ফেডারেশন কাপ: মোহামেডানের ‘মোজাফফরভময়’ জয়

ম্যাচসেরার পুরস্কার নিচ্ছেন মোজাফফরভবাফুফে

সেই স্বাধীনতা কাপ থেকেই মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের প্রাণভোমরা হয়ে উঠেছেন উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার মোজাফফরজন মোজাফফরভ। মাঠজুড়ে নিজে খেলার পাশাপাশি দলকেও খেলান। সেই সঙ্গে সেট পিসেরও ওস্তাদ। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত স্বাধীনতা কাপে মোজাফফরভের দুটি ফ্রি–কিক থেকে করা গোলই সাদা–কালোদের ফাইনালে তুলেছিল।

আজ গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মণি স্টেডিয়াম মোজাফফরভের আরও একটি দুর্দান্ত ফ্রি–কিকের গোল হয়তো দেখা যেতে পারত। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বল পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়েছে। তবে উজবেক ফুটবলারের সেই ফ্রি–কিক থেকেই চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে শুরুতে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়া মোহামেডান ম্যাচে ফিরেছিল। গোল করেন জাফর ইকবাল। পরে মোজাফফরভের গোলেই ফেডারেশন কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছে আলফাজ আহমেদের শিষ্যরা।

আরও পড়ুন

ম্যাচে আগাগোড়াই প্রাধান্য ছিল মোহামেডানের। দলের সেরা স্ট্রাইকার সোলেমান দিয়াবাতে খেলেননি। গোপালগঞ্জে মোহামেডান একটু অন্য ধরনের দল নিয়েই নেমেছিল। ডিফেন্ডার কামরুল ইসলাম খেলেননি। খেলেননি নাইজেরিয়ান ডিফেন্ডার ইমানুয়েল টনিও। দুজনের জায়গায় খেলেছেন মাহবুব আলম ও জাহিদ শান্ত। মধ্যমাঠে আরিফুর রহমানও খেলেননি। ছিলেন আইভরিকোস্টের মিডফিল্ডার দোসো সিদিক। সব মিলিয়ে কিছুটা নতুন চেহারার দলই। কিন্তু আজও মোজাফফরভ খেলেছেন তাঁর মতোই।

নতুন চেহারার দল মাঠে নামিয়েছিলেন মোহামেডান কোচ আলফাজ আহমেদ
বাফুফে

ম্যাচের ১৩তম মিনিটে অনেকটাই রক্ষণের ভুলে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে মোহামেডান। চট্টগ্রাম আবাহনীকে এগিয়ে দেন অনেকটাই অরক্ষিত জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড আজিজ আবোলাজি আবু। গোল খেয়ে হতোদ্যম হয়নি মোহামেডান। উল্টো চেপে ধরেছিল চট্টগ্রাম আবাহনীকে। মোহামেডানের আক্রমণভাগ নিয়ে যে সমস্যার কথা আগেও আলোচিত হয়েছে, সেই সমস্যা ছিল আজও। নিচ থেকে বল নিয়ে নিজেদের মধ্যে দারুণ আদান-প্রদান করে প্রতিপক্ষের গোলমুখে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলাটা মোহামেডানের সমস্যা।

আজও তেমনটাই দেখা যাচ্ছিল। শাহরিয়ার ইমন, মোজাফফরভ, দোসো সিদিকরা বলের জোগান দিচ্ছিলেন ঠিকই, কিন্তু গোলের সুযোগ সেভাবে তৈরি হচ্ছিল না।

আরও পড়ুন

অবশেষে ৪৬ মিনিটে মোজাফফরভের কল্যাণে ম্যাচে ফেরে মোহামেডান। চট্টগ্রাম আবাহনীর বক্সের ঠিক বাইরে থেকে পাওয়া ফ্রি–কিকে মোজাফফরভের শটটি বাঁক খেয়ে ঢুকছিল চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলে। গোলকিপার আশরাফুল ইসলাম রানা পুরোপুরি পরাস্তই ছিলেন। কিন্তু বলটি পোস্টে লেগে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তখনই সুযোগের অপেক্ষায় ওত পেতে ছিলেন জাফর ইকবাল। ফিরতি বল পেয়ে তিনি ঠেলে দেন পোস্টে।

১-১ অবস্থায় দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু করে মোহামেডান ছিল আরও আক্রমণাত্মক। ৫৫ মিনিটে মোহামেডান পেয়ে যায় জয়সূচক গোল। একটি ফ্রি–কিকের বল চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলমুখে উড়ে এলে হেড করেছিলেন ইমানুয়েল সানডে। তবে সেটি গোলকিপার রানা ফেরালেও ফিরতি বলে গোল করেন মোজাফফরভ।

মোহামেডানে সময়টা ভালোই যাচ্ছে উজবেক ফুটবলার মোজাফফরভের
প্রথম আলো

বাকি সময়টা চট্টগ্রাম আবাহনী চেষ্টা করেছে ম্যাচে ফেরার। কিন্তু মোহামেডানের রক্ষণ আর শুরুর ভুলে নিজেদের জড়ায়নি। তবে এই সময় মোহামেডানও গোল হওয়ার মতো দারুণ সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি। মৌসুমের বাকি সময়টা মোহামেডানের আক্রমণভাগ নিয়ে কোচ আলফাজ আহমেদকে যে বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে, সেটি আজ আবারও প্রমাণিত। তবে তিনি আজ অন্তত খুশি হবেন পিছিয়ে পড়েও ম্যাচটা বের করে নেওয়ায়। ‘মোজাফফরভময়’ মোহামেডানের আরও একটি ম্যাচ—এটাও বলতে বাধা নেই। কারণ, ম্যাচ শেষে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার উঠেছে উজবেক মিডফিল্ডারের হাতেই।

আরও পড়ুন