জর্জিয়া ২: ০ পর্তুগাল
তুরস্ক ২: ১ চেক প্রজাতন্ত্র
‘কাভারাডোনা’ বা ‘নতুন ম্যারাডোনা’ নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন আরও আগে। নাপোলির তিন দশক পর সিরি ‘আ’র শিরোপা জয়ের অন্যতম নায়কও ছিলেন তিনি। সেই খিচা কাভারাস্কেইয়া এবার ইউরোর ম্যাচে ম্লান করে দিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। কাভারাস্কেইয়ার আলো ছড়ানোর রাতে পর্তুগালকে ২–০ গোলে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে জর্জিয়া।
এ জয়ে গ্রুপ ‘এফ’ থেকে তৃতীয় সেরা দলগুলোর একটি হয়ে পরের পর্বে গেল জর্জিয়া। এই গ্রুপের অন্য ম্যাচে চেক প্রজাতন্ত্রকে ২–১ গোলে হারিয়েছে তুরস্ক। এ জয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে তুরস্কও।
ইউরো খেলতে আসার দলগুলোর মাঝে র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা (৭৪ নম্বর) দল হলো জর্জিয়া। এমনকি এবারই প্রথম বড় টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ পেয়েছে দেশটি। কিন্তু সেই জর্জিয়াই ইউরোর ইতিহাসে অন্যতম সেরা অঘটনের জন্ম দিয়ে পৌঁছে গেল শেষ ষোলোয়। কাভারাস্কেইয়ার পাশাপাশি কৃতিত্ব দিতে হবে আরেক ফরোয়ার্ড গিওর্গে মিকাওতাদজেও। প্রথম গোলে সহায়তার পাশাপাশি পেনাল্টি থেকে দ্বিতীয় গোলটি করেছেন তিনি।
প্রথম দুই ম্যাচে জিতে আগেই গ্রুপসেরা হয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছিল পতুর্গাল। সে কারণেই হয়তো আগের ম্যাচ থেকে ৮ পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজান পর্তুগাল কোচ রবার্তো মার্তিনেজ। তবে নিয়মিত একাদশের বেশিরভাগ খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দিলেও, রেখে দেন অধিনায়ক রোনালদোকে। কিন্তু রোনালদোও এ ম্যাচে বিশেষ কোনো পার্থক্য গড়তে পারেননি। রূপকথার দুর্দান্ত এক গল্প লিখেই মাঠ ছেড়েছে জর্জিয়া।
জার্মান ক্লাব শালকের মাঠে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই দেখা মেলে জর্জিয়ার চমকের। পর্তুগিজ ডিফেন্ডার আন্তোনিও সিলভার ভুলে মাঝমাঠের কাছাকাছি জায়গায় বল পান জর্জিয়ার গিওর্গে মিকাওতাদজে। একটু এগিয়ে গিয়ে তিনি বল বাড়ান কাভারাস্কেইয়ার উদ্দেশ্য। সুবিধাজনক জায়গায় বল পেয়ে ভুল করেননি নাপোলির এই উইঙ্গার। জায়গা বের করে দুর্দান্ত এক ফিনিশিংয়ে গোল করে এগিয়ে দেন জর্জিয়াকে।
ম্যাচের শুরুতে গোল হওয়ায় দুইদলই মরিয়া হয়ে ওঠে। পর্তুগাল একদিকে সমতা ফেরানোর জন্য আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করে, বিপরীতে জর্জিয়ার চোখ ছিল আরেক গোল করে ম্যাচে নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার। যে কারণে আক্রমণ ও প্রতি–আক্রমণে জমে ওঠে লড়াই। ১৬ মিনিটে রোনালদোর নেওয়া দুর্দান্ত এক ফ্রি–কিক ঠেকিয়ে জর্জিয়াকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক। ২৮ মিনিটে আবারও গোলের কাছাকাছি পৌঁছেও গোলের দেখা পায়নি পর্তুগাল।
৩০ মিনিটে জোয়াও ফেলিক্সের শট পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। এ সময় জর্জিয়ান রক্ষণের ওপর বেশ চাপ তৈরি করে পর্তুগাল। ৩৩ মিনিটে প্রতি–আক্রমণে কাভারাস্কেইয়ার প্রচেষ্টা অল্পের জন্য গোল হয়নি। ৩৫ মিনিটে রোনালদোর শট আটকে যায় জর্জিয়ার রক্ষণ জালে। একটু পর প্রতি–আক্রমণে কাভারস্কেইয়া ফাউলের শিকার হলে ফ্রি–কিক পায় জর্জিয়া। নাপোলি উইঙ্গারের নেওয়া ফ্রি–কিকটি অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়।
প্রতি–আক্রমণে কাভারাস্কেইয়া ছিলেন দুর্দান্ত। তাঁর পায়ে বল গেলেই তৈরি হচ্ছিল দারুণ কিছুর সম্ভাবনা। কাভারাস্কেইয়ার আলো ছড়ানো ফুটবল বাদ দিলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল মূলত পর্তুগালের হতেই। ৪৩ মিনিটে জোয়াও পাউলিনিয়ার শট পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। পিছিয়ে থেকেই শেষ পর্যন্ত বিরতিতে যেতে হয় পর্তুগালকে।
বিরতির পরপর রোনালদোর শট পোস্টের ওপর দিয়ে যায়। ৫০ মিনিটে দারুণ এক আক্রমণ থেকে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন কাভারাস্কেইয়া। এ সময় আক্রমণের জবাব প্রতি-আক্রমণ দিয়েই দিচ্ছিল জর্জিয়া। তেমনই এক প্রতি-আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে প্রথম গোলে ভুল করা সেই আন্তোনিও সিলভা এবার বক্সের ভেতর ফাউল করে বসেন লুকা লোশোভিলিকে। ভিএআরে যাচাই করে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। স্পট কিকে ভুল করেননি মিকাওতাদজে। জর্জিয়াকে এগিয়ে দেন ২–০ গোলে।
দুই গোল হজম করে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠে পর্তুগাল। একের পর এক আক্রমণে কাঁপিয়ে দিচ্ছিল জর্জিয়াকে। কিন্তু অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক ফুটবলে বিপদও তৈরি হচ্ছিল পতুর্গালের জন্য। প্রতি–আক্রমণে জর্জিয়া বারবার হুমকি তৈরি করছিল। শেষ দিকে অবশ্য ম্যাচে ফেরার জন্য একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যায় পর্তুগাল। একাধিকবার খুব কাছাকাছিও পৌঁছৈ গিয়েছিল তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেও ভাঙতে পারেনি জর্জিয়ার রক্ষণ–দুর্গ। হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে পতুর্গালকে।