অবশেষে পদত্যাগ করলেন ‘চুমু–কাণ্ডে’ সমালোচিত রুবিয়ালেস
অবশেষে পদত্যাগ করতেই হলো স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি লুইস রুবিয়ালেসকে। নারী বিশ্বকাপের পুরস্কার মঞ্চে খেলোয়াড় হেনি হেরমোসোর ঠোঁটে চুমু খাওয়ার পর থেকেই মূলত ঝড় ওঠে বিশ্ব ফুটবলে। সমালোচনা দিয়ে শুরু হলেও পরে আইনি প্রক্রিয়াও নেওয়া হয় তাঁর বিরুদ্ধে। এসবের প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেন রুবিয়ালেস।
পিয়ার্স মরগানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমি আমার কাজ চালিয়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ এ সময় রুবিয়ালেস ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পেদ্রো রোচার কাছে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কথাও বলেছেন রুবিয়ালেস। শুধু স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির পদ থেকেই নয়, উয়েফার নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতির পদ থেকেও সরে দাঁড়িয়েছেন রুবিয়ালেস।
পদত্যাগের ঘোষণার সময় রুবিয়ালেস বলেছেন, তিনি সরে দাঁড়ানোয় ২০৩০ বিশ্বকাপে মরক্কো এবং পর্তুগালের সঙ্গে স্পেনের বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক হওয়ার যে উদ্যোগ, তা ত্বরান্বিত হবে। পাশাপাশি নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে রুবিয়ালেস বলেছেন, ‘আমার নিজের সত্যের ওপর আস্থা আছে এবং জেতার জন্য আমি নিজের শক্তি অনুযায়ী সবকিছু করব। আমার মেয়ে, পরিবার এবং যারা আমাকে ভালোবাসে, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
এত দিন নিজের অবস্থানে অনড় থেকে শেষ পর্যন্ত কেন সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, জানতে চাইলে রুবিয়ালেসের উত্তর ছিল এমন, ‘আমার বাবা এবং মেয়েদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারা জানে, বিষয়টা আমাকে নিয়ে নয়। আর কিছু বন্ধুও বলেছে, “লুইস তোমার নিজের মর্যাদার ওপর মনোযোগ দেওয়া দরকার এবং নিজের জীবন চালিয়ে নেওয়া দরকার। যদি তা না হয় তবে তুমি ভালোবাসার মানুষদের এবং যে খেলাটিকে ভালোবাসো তার ক্ষতি করবে। ” বিষয়টা তাই শুধু আমাকে নিয়ে নয়।’
এর আগে ‘চুমু-কাণ্ডে’র ঘটনায় রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার হেনি হেরমোসো। মঙ্গলবার দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে উপস্থিত হয়ে তিনি এই অভিযোগ করেন। নতুন করে আনা এই অভিযোগের ফলে ৪৬ বছর বয়সী রুবিয়ালেসকে ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হতে হবে। শুধু এটুকুই নয়, বিশ্বকাপের ফাইনালের পর এই ঘটনায় রীতিমতো ঝড় বয়ে গেছে। ঘটনার পর সমালোচনার মুখে ফিফার নিষেধাজ্ঞায় পড়েন রুবিয়ালেস। এরই মধ্যে ছাঁটাই হয়েছেন রুবিয়ালেসের কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত স্পেনকে বিশ্বকাপ জেতানো ৪২ বছর বয়সী কোচ হোর্হে ভিলদাও। যদিও তাঁকে বরখাস্তের কারণ জানানো হয়নি।
এ ঘটনায় স্পেনের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা শুরু রুবিয়ালেসকে সমালোচনার তিরে বিদ্ধ করে আসছেন। স্পেনের সাবেক ও বর্তমান ফুটবলাররাও এই ঘটনা নিজেদের ক্ষোভের কথা জানান। এমনকি তিনি দায়িত্বে থাকলে না খেলার ঘোষণাও দেন অনেক ফুটবলার।
বিবিসির দেওয়া তথ্য বলছে, বিশ্বকাপজয়ী ২৩ ফুটবলারসহ স্পেনের ৮১ জন খেলোয়াড় জানান, রুবিয়ালেস দায়িত্বে থাকলে তাঁরা জাতীয় দলের হয়ে আর খেলবেন না। এসবের পরও দায়িত্ব ছাড়বেন না বলে জানিয়ে আসছিলেন রুবিয়ালেস। এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রুবিয়ালেস বলেছিলেন, চুমুর বিষয়টি ছিল পারস্পরিক, স্বতঃস্ফূর্ত ও উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ, যা অবশ্য অস্বীকার করেন হেরমোসো।
স্পেনের নারী ফুটবলারদের ইউনিয়ন ‘ফুটপ্রো’কে নিয়ে যৌথ বিবৃতিতে হেরমোসো বলেছেন, ‘আমার স্বার্থ রক্ষা করতে এজেন্সি টিএমজের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে ফুটপ্রো এবং তারা এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকায় আছে। এ ধরনের আচরণ করে কেউ যেন পার না পায়, সেটি নিশ্চিত করতেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’