‘মার্তিনেজকে অশ্লীল ভাঁড় মনে হয়েছে’
আর্জেন্টিনা ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জিতেছে, উদ্যাপনটা তাই বাঁধভাঙা হওয়াই স্বাভাবিক। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ বিশ্বকাপ জয় উদ্যাপনে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন।
ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশন (এফএফএফ) থেকে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনে (এএফএ)। ফ্রান্সের ক্রীড়ামন্ত্রীও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া ফ্রান্সের আরও অনেকে মার্তিনেজের উদ্যাপনের ধরন নিয়ে সমালোচনা করেন।
লিভারপুলের হয়ে তিনবার ইউরোপিয়ান কাপ ও পাঁচবার ইংল্যান্ডের প্রথম বিভাগজয়ী সাবেক মিডফিল্ডার গ্রায়েম সুনেসও চুপ থাকতে পারেননি। উদ্যাপনের কিছু মুহূর্তে মার্তিনেজকে ‘অশ্লীল ভাঁড়’ মনে হয়েছে স্কটিশ কিংবদন্তির।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘মেইল অনলাইন’–এ লেখা কলামে মার্তিনেজের সমালোচনা করেছেন সত্তর ও আশির দশকের ফুটবলার সুনেস, ‘বিশ্বকাপ ফাইনালের পর আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজের পেনাল্টি শুটআউটের সময়ের আচরণ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। একটা সীমানা পর্যন্ত এটা মেনে নিতে পারি। তবে টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপারের পুরস্কার নেওয়ার সময় মার্তিনেজ যে আচরণ করেছে, সেটা নিয়ে বেশি কথা বলা উচিত আমাদের।’
গত রোববার বিশ্বকাপের ফাইনালে টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে ৪–২ ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত ম্যাচটি ৩–৩ গোলে ড্র ছিল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বিশ্বকাপে সেরা গোলকিপারের পুরস্কার ‘গোল্ডেন গ্লোভ’ও জিতে নেন মার্তিনেজ। পুরস্কারটি নিয়ে মঞ্চ থেকে নামার সময় অদ্ভুতভাবে উদ্যাপন করেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল অ্যাস্টন ভিলার এই গোলকিপার।
গোল্ডেন গ্লোভ ট্রফিটা কোমরের সামনের অংশে ধরে উদ্যাপনের দৃশ্যটা অনেকেরই ভালো লাগেনি। সুনেস এ নিয়ে লিখেছেন, ‘এমন কিছু দেখে আনন্দ পাওয়ার মতো মানুষ সত্যিই আছে নাকি? মার্তিনেজ নিজেকে এবং তার দেশকে ছোট করেছে। তাকে দেখে অশ্লীল ভাঁড় মনে হয়েছে। সে যদি চায়, সবাই তাকে এভাবে মনে রাখুক, তাহলে সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন। অ্যাস্টন ভিলা ও আর্জেন্টিনার গোলকিপার হিসেবে আমি তাকে পছন্দ করি। তবে সে ভেবেছে, ঠিক কাজটাই করেছে, এটা অবিশ্বাস্য।’
সুনেস বুঝতে পারছেন না, মার্তিনেজ মঞ্চে ওভাবে উদ্যাপন করলেন কেন! তাঁর ভাষায়, ‘সবার সামনে সে অমন কিছু করার সিদ্ধান্ত নিল কীভাবে, তা আমার বুঝে আসছে না। এর মধ্য দিয়ে আয়োজকদের প্রতি সে কীভাবে সম্মান দেখাল? নিজের সম্মানটাও তো রাখল না! সম্ভবত সে এসবকে পাত্তা দেয় না। তবে পাত্তা দেওয়া উচিত। ওই ছবি তো ফাইনালে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। অদূর ভবিষ্যতে ওই ছবি দেখে তার কিন্তু ভালো লাগবে না।’
এর আগে ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি (এফএফএফ) নোয়েল লে গ্রায়েত মার্তিনেজের উদ্যাপন নিয়ে অভিযোগ করে একটি চিঠি পাঠান আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে (এএফএ)। কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে করা মার্তিনেজের উদ্যাপনকে ঠিক স্বাভাবিক মনে করেননি এফএফএফ–প্রধান গ্রায়েত।
বিশ্বকাপ জয়ের পর আর্জেন্টিনার ড্রেসিংরুমে মেসিরা যখন উদ্যাপন করছিলেন, তখন হুট করে সবাইকে থামিয়ে দেন মার্তিনেজ। সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে ওঠেন, ‘এক মিনিটের নীরবতা।’ এটুকু বলে মার্তিনেজ ক্ষণিকের জন্য থামেন। এরপর গানের সুরে বলেন, ‘এমবাপ্পের জন্য, যে মরে গেছে!’
কাতার থেকে আর্জেন্টিনায় ফেরার পরও এমবাপ্পেকে নিয়ে মজা করা থামাননি মার্তিনেজ। ছাদখোলা বাসে বুয়েনস এইরেসে মেসি-মার্তিনেজদের নিয়ে শোভাযাত্রা বের করা হয়েছিল। সেদিন ছিল (২০ ডিসেম্বর) এমবাপ্পের জন্মদিনও। তাঁকে নিয়ে মজা করতে ছাদখোলা বাসে একটি পুতুল হাতে নিয়ে দাঁড়ান মার্তিনেজ। সেই পুতুলের মুখটা ছিল এমবাপ্পের। অর্থাৎ পুতুলের মুখে এমবাপ্পের মুখের ছবি বসানো হয়।