প্রিমিয়ার লিগে চোখ থাকবে যে ৫ নতুন মুখে
২৪৮ রাত পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকার পরও মৌসুমের শেষ দিকে পা হড়কানোয় গত বছর প্রিমিয়ার লিগ জিততে পারেনি আর্সেনাল। মিকেল আরতেতার দল সামনের মৌসুমে মাঠে নামছে আরও আটঘাট বেঁধে। চলতি দলবদলে এরই মধ্যে ২০ কোটি পাউন্ডের বেশি (প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা) খরচ করেছে আর্সেনাল। যার মধ্যে জুরিয়েন টিম্বার ও জ্যাকবল কিয়িওররা আছেন, যাঁরা প্রিমিয়ার লিগে খেলবেন এই প্রথম।
শুধু আর্সেনাল নয়, ২০২৩–২৪ মৌসুমের জন্য ভিন্ন লিগ থেকে খেলোয়াড় কিনে এনেছে অন্য দলগুলোও। প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগ মাতানোর অপেক্ষায় থাকা এমনই পাঁচ মুখকে দেখে নিন এবার।
রাসমুস হয়লুন্দ (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)
হ্যারি কেইনকে ওল্ড ট্রাফোর্ডে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তবে টটেনহাম তাঁকে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবে বিক্রি করতে না চাওয়ায় হাল ছাড়তে হয়েছে ইউনাইটেডের। এরপরই আতালান্তায় খেলা ডেনিশ তরুণ রাসমুস হয়লুন্দের দিকে হাত বাড়ায় এরিক টেন হাগের দল। তবে ২০ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারকেও সহজে পায়নি ইউনাইটেড। এক মৌসুম আগের যার দাম ছিল ১ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড, তাঁকে কিনতে খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৪০ লাখ। তা–ও তিন দফায় প্রস্তাবের পর।
কেইনকে না পাওয়ার পর যার জন্য এত দরকষাকষি, সেই হয়লুন্দ অবশ্য ব্যাপক প্রতিশ্রুতিশীলই। সিরি ‘আ’তে এক মৌসুম খেলে গোল বেশি করতে পারেননি, মাত্র ৯টি। তবে জাতীয় দলের হয়ে ৬ ম্যাচে ৬ গোল করে চমৎকার ভবিষ্যতের ইঙ্গিত রেখেছেন। গতি, শারীরিক গঠন আর স্ক্যান্ডেনেভিয়ান উৎস মিলিয়ে হয়লুন্দকে অনেকে ম্যানচেস্টার সিটির নরওয়েজীয় তারকা আর্লিং হলান্ডের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। সেটা যদি সত্যি হয়, ম্যানচেস্টারে ইউনাইটে ও সিটির দ্বৈরথের মধ্যে হলান্ড–হয়লুন্দও নতুন দ্বৈরথ তৈরি করতে পারে।
ইওস্কো গাভারদিওল (ম্যানচেস্টার সিটি)
ম্যানচেস্টার সিটিতে সেন্টার ব্যাকের অভাব নেই। জাসকো গাভারদিওল আসার আগে থেকেই আছেন পাঁচজন। পেপ গার্দিওলা অবশ্য তাঁর দলের সেন্টার ব্যাক ‘খুব বেশি নয়’ বলে মনে করেন। গত মৌসুমের শেষ দিকে কয়েকটি ম্যাচে একসঙ্গে চারজন সেন্টার ব্যাক খেলিয়েছেন তিনি।
নতুন কেনা গাভারদিওলও সিটি কোচের রক্ষণ পরিকল্পনায় ভালোভাবেই আছেন, সেটি বোঝা যায় তাঁর জন্য করা খরচের অঙ্কে। কাতার বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার জার্সিতে আলো ছড়ানো এই ডিফেন্ডারকে আনা হয়েছে লাইপজিগ থেকে। এ জন্য সিটির খরচ হয়েছে ৯ কোটি ইউরো, যা ফুটবল ইতিহাসে কোনো ডিফেন্ডারের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দাম।
ডমিনিক সোবোসলাই (লিভারপুল)
লিভারপুল যে গত মৌসুমে সেরা চারে থেকে লিগ শেষ করতে পারেনি, তার সবচেয়ে বড় কারণই মনে করা হয় মাঝমাঠের দুর্বলতা। আবার যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসন, ফ্যাবিনিও, নাবি কেইতা, জেমস মিলনাররা ক্লাব ছেড়ে গেছেন। যে কারণে এবারের দলবদলে মাঝমাঠেই বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে লিভারপুল। কাতার বিশ্বকাপে নজরকাড়া আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার অ্যালেক্সিস মাক–আলিস্টারকে নিয়ে আসা হয়েছে ব্রাইটন থেকে।
তবে ইয়ুর্গেন ক্লপের ‘মাস্টার স্ট্রোক’ হতে পারে ডমিনিক সোবোসলাইকে চুক্তিবদ্ধকরণ। হাঙ্গেরিয়ান এই মিডফিল্ডার বুন্দেসলিগার ক্লাব লাইপজিগে ছিলেন। গত মৌসুমে জার্মান ক্লাবটির হয়ে ৪৬ ম্যাচে ১০ গোলের পাশাপাশি করেছেন ১৩টি অ্যাসিস্ট। মাঝমাঠে খেলা বানানোর পাশাপাশি আক্রমণে উঠে ভূমিকা রাখার সামর্থ্যের কারণে সোবোসলাইকে সম্ভাবনাময়ীদের তালিকায় প্রথম দিকেই রাখা হচ্ছে। এখন প্রিমিয়ার লিগে তা দেখার অপেক্ষা লিভারপুল সমর্থকদের।
সান্দ্রো তোনালি (নিউক্যাসল)
২৩ বছর বয়সী এই ইতালিয়ানকে বলা হচ্ছে ‘নতুন আন্দ্রেয়া পিরলো’। ২০২২ সালে এসি মিলানের সিরি ‘আ’ জয় আর সর্বশেষ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ওঠার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই মিডফিল্ডারের। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব নিউক্যাসল সামনের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলবে। প্রিমিয়ার লিগে শিরোপা লড়াইয়ে নামার অপেক্ষায় থাকা নিউক্যাসল তোনালিকে কিনেছে ৭ কোটি ইউরোয়। ইতালিতে ছন্দে থাকা তোনালি প্রিমিয়ার লিগেও নিজের সামর্থ্য দেখাতে পারবেন বলে আশাবাদ শুনিয়েছেন নিউক্যাসল কোচ এডি হাউ।
আন্দ্রে ওনানা (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)
এক দশকের বেশি সময় ধরে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গোল পোস্ট সামলেছেন দাভিড দে হেয়া। ৩২ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ গোলরক্ষকের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করে ২৭ বছর বয়সী আন্দ্রে ওনানাকে দলে ভিড়িয়েছে ইউনাইটেড। ক্যামেরুনের এই গোলরক্ষক ছিলেন ইন্টার মিলানে। গত মৌসুমে সিরি ‘আ’তে ২৪ ম্যাচে গোলবার সামলে ৮টিতেই ক্লিনশিট (কোনো গোল খাননি) রাখেন ওনানা। এ ছাড়া ইন্টারের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ওঠার পথেও ছিল ভালো অবদান।
সব মিলিয়ে গত মৌসুমের পারফরম্যান্সই তাঁর প্রতি ইউনাইটেডকে আগ্রহী করে তুলেছে। এ জন্য প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটির খরচ হয়েছে ৫ কোটি ২৫ লাখ ইউরো। কেপা আরিসাবালাগা, আলিসন ও জিয়ানলুইজি বুফনের পর চতুর্থ দামি গোলরক্ষক হিসেবে ইউনাইটেডে যোগ দেওয়া ওনানাকে বড় চ্যালেঞ্জই মোকাবিলা করতে হবে।