ঘরোয়া ফুটবলে আবাহনী-মোহামেডান ফাইনাল দেখার চেয়ে আর আনন্দের কিছু নেই ফুটবলপ্রেমীদের কাছে। সর্বশেষ দুই দলের ফাইনাল হয়েছে গত ৩০ মে কুমিল্লায় ফেডারেশন কাপে।
দুই দলের আরেকটি ফাইনালের সম্ভাবনা কিছুটা উঁকি দিয়েছিল স্বাধীনতা কাপের প্রথম সেমিফাইনালে আজ গোপালগঞ্জে রহমতগঞ্জের বিপক্ষে মোহামেডান ১-০ গোলে জিতে যাওয়ায়। কিন্তু কিংস অ্যারেনায় বসুন্ধরা কিংস আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে রীতিমতো ধ্বংস করে দিয়েছে আবাহনী লিমিটেডকে। গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধে কিংসের রুদ্রমূর্তি দেখেছেন দর্শকেরা। বিরতির পর গুনে গুনে ৪ গোল দিয়েছে কিংস।
২০১৮ সালে শীর্ষ ফুটবলে আসার পর এ নিয়ে স্বাধীনতা কাপে টানা চারটি ফাইনালেই উঠল কিংস। প্রথম ও তৃতীয় ফাইনালে তারা জিতেছিল। ১৮ ডিসেম্বর কিংস চতুর্থ ফাইনালে পাবে নতুন প্রতিপক্ষ মোহামেডানকে। ৯ বছর পর এই প্রথম মোহামেডান উঠেছে এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে। ঘরোয়া ফুটবলে কিংস-মোহামেডান ফাইনালও নতুন ঘটনাই।
কিংস আজ ম্যাচের শুরুতে কিছুটা চাপের মুখে থাকলেও খেলাটা ধরে নিয়েছে আস্তে আস্তে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দুটি গোল করে ছিনিয়ে নিয়েছে ম্যাচ। এই সময় কিংসের গতির কাছে হার মেনেছে প্রথমার্ধে ভালো খেলা আবাহনী। ডিফেন্সিভ থার্ডে কিংসের ফুটবলারদের বল পায়ে রাখার সামর্থ্যই তাদের গোল এনে দিয়েছে। বিশেষ করে জুনিয়র সোহেল রানা ও রাকিব হোসেন ছিলেন দুর্দান্ত। প্রথমজন গোল করেছেন। রাকিব গোল না করলেও দ্বিতীয় গোলটির ৮০ শতাংশ কৃতিত্বই তাঁর।
৪৮ মিনিটে সোহেল রানা বল দেন মিগুয়েলকে। মিগুয়েল দেন আবার সোহেল রানাকে। জায়গা বানিয়ে বাঁ পায়ে শট নেন সোহেল। আবাহনীর ডিফেন্ডার রেজাউল রেজার গায়ে হালকা ছোঁয়া নিয়ে বলে কিছুটা দিক পাল্টে জালে জড়ায়। আক্রমণটা গড়েছেন যেমন সোহেল রানা, সফল ইতিও টেনেছেন তিনি। কিংসের হয়ে এটি তাঁর প্রথম গোল।
৫৩ মিনিটে রাকিব দুজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোলমুখে বল ঠেলেন। দরিয়েলতন ফাঁকা পোস্টে বল ঠেলেছেন শুধু। এই গোলে রাকিবের অবদানই বেশি।
২-০ গোলে এগিয়েও কিংসের আক্রমণ থামেনি।
৭৭ মিনেটে সাদউদ্দিনের ক্রস থেকে মিগুয়েলের হেডে স্কোরলাইন হয়ে যায় ৩-০। ৮৮ মিনিটে রবসনের পেনাল্টি গোলে হয়েছে ৪-০। এর আগে একবারই কিংসের কাছে চার গোল খেয়েছে আবাহনী। ২০২০-২১ লিগে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সেই ম্যাচ ছিল ৪-১। কিংসের কাছে বড় হারেই ১৬ বছর পর আবাহনীর কোচ হিসেবে নিজের প্রথম টুর্নামেন্টটা শেষ করলেন আর্জেন্টাইন কোচ ডিয়েগো ক্রুসিয়ানি। অস্কার ব্রুজোনের কাছে আজ তিনি দাঁড়াতেই পারলেন না।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্রুজোন শেখ মোরছালিনকে তুলে মাঠে পাঠান ফরোয়ার্ড রফিকুল ইসলামকে। মোরছালিন আজ অনেকটাই নিচে নেমে খেলেছেন। গোলের জন্যই রফিককে মাঠে পাঠিয়ে বাজিমাত করেন কিংস কোচ।
এই জয়ের কৃতিত্ব দাবি করতে কিংসের তরুণ গোলকিপার মেহেদী হাসান শ্রাবণ। প্রথম ২০ মিনিটে আবাহনীর গোটা চারেক আক্রমণ আটকে দলকে ম্যাচে রাখেন তিনি। ২৬ মিনিটেই ৫টি সেভ করে ফেলেন মেহেদী। ম্যাচসেরাও হয়েছেন কিংসের তরুণ এই গোলকিপার।
মাত্রই ওডিশা এফসির কাপে হেরে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্ব পেরোনার ব্যর্থতা নিয়ে ভারত থেকে ফিরেছে কিংস। সেই দুঃখ ভুলে ঘরোয়া ফুটবলে নিজেদের দাপট আবারও প্রতিষ্ঠা করল লাল জার্সিধারীরা।
আবাহনী প্রথম ২০ মিনিট চার-পাঁচটি গোলের সুযোগ হারিয়েছে। ৪ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ওয়াশিংটন দস সান্তোস দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করেন। বিশ্বনাথের কাছ থেকে বলটা ছোঁ মেরে কেড়ে নেন। এরপর কোনাকুনি জায়গা থেকে তাঁর শট পোস্টে বাতাস লাগিয়ে বাইরে চলে যায়। যদিও বল কিংস গোলকিপার মেহেদীর হাতেও লেগেছিল। ১৫ মিনিটে ওয়াশিংটনের দারুণ শট আটকান কিংস গোলকিপার। ববুরবেককে গতিতে যেভাবে পেছনে ফেলেছিলেন, তাতে গোলটা পেতেই পারতেন ওয়াশিংটন। তাঁর গতি চোখ কেড়েছে আলাদাভাবে। অবশ্য সময়ের সঙ্গে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
২১ মিনিটে আবাহনী গোল প্রায় খেয়েই যাচ্ছিল। আবাহনীর এক খেলোয়াড় অনেক দূর থেকে ব্যাক পাস দেন গোলকিপার পাপ্পু হোসেনকে। সেই বল ধরে নেন মোরছালিন। পাপ্পুকে কাটিয়ে চলে যান গোলের কাছে। গোলবার ছিল ফাঁকা। শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত দৌড়ে পোস্টে গিয়ে মোরছালিনের শট গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন জোনাথন। এই জোনাথন বাংলাদেশের ফুটবলে খেলা শুরু করেছিলেন কিংসের হয়েই। কিংসের মাঠ তাঁর কাছে তাই চেনাই। সেই চেনা মাঠই বড় হারের হতাশা নিয়ে ছাড়তে হলো। আবাহনীর জন্য এমন হার বিব্রতকরই।