‘মেসিই হয়তো আমার সন্তানের আশীর্বাদপুষ্ট’—বললেন ইয়ামালের বাবা

স্প্যানিশ তারকা লামিনে ইয়ামালএএফপি

পৃথিবীতে এখন অন্যতম সুখী মানুষের নাম মৌনির নাসরাউয়ি।

ভদ্রলোককে অপরিচিত লাগতেই পারে। যদি বলা হয় তিনি লামিনে ইয়ামালের বাবা, তাহলে সম্ভবত সুখী থাকার কারণটা পরিষ্কার হয়ে যায়। ইউরোয় ইয়ামাল যা দেখাচ্ছেন, তাতে বাবা হিসেবে তাঁর বুকটা গর্বে ভরে যাওয়ার কথা। ইউরোয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে শুধু মাঠে নামার রেকর্ডই গড়েননি ইয়ামাল, সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার রেকর্ডও গড়েছেন চোখধাঁধানো এক গোলে। আর সেটাও সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে। এমন পারফরম্যান্সের পর ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি গ্যারি লিনেকারের কথাটাও নিশ্চয়ই শুনেছেন নাসরাউয়ি, ‘একজন মহাতারকার জন্ম হলো।’ তাহলে বলুন, নাসরাউয়ি কেন গর্ব বোধ করবেন না?

আরও পড়ুন

বাবা হিসেবে তিনি যে এখন ভীষণ গর্বিত, সেটা বোঝা যায় স্পেনের সংবাদমাধ্যম মুন্দো দেপোর্তিভোর সঙ্গে নাসরাউয়ির আলাপচারিতায়ও। এবারের ইউরোয় ছেলের পারফরম্যান্স নিয়ে বলেছেন, ‘আর সবার মতো আমিও আনন্দ নিয়ে উপভোগ করছি। আমরা ফাইনালে উঠেছি এবং স্পেনের সব খেলোয়াড়ের জন্য গর্ব লাগছে।’

কিন্তু ছেলের জন্য গর্বটা একটু বেশি লাগাই তো স্বাভাবিক? নাসরাউয়ি সরাসরি এর উত্তরে যাননি। এটুকু বলেছেন, ইয়ামালের জন্মের পরই বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর ছেলে একদিন বড় কিছুই হবে, ‘আমি জানতাম সে তারকা হয়ে উঠবে। বাবারা এমনই মনে করেন এবং যেকোনো বাবাই চান তাঁর সন্তান সেরা হয়ে উঠুক। আমি তার জীবনে সেরাটাই কামনা করি ও আশা করি যেন ইউরো জিততে পারে, তাতে আমরাও চ্যাম্পিয়ন হব।’

নাসরাউয়ি জানিয়েছেন, ১৬ বছর বয়সী ইয়ামাল নিজেও এখন খোশমেজাজে আছেন। তাঁর বাবার ভাষায়, ‘লামিনে উচ্ছ্বাসের মধ্যে আছে। অন্য সব খুদেদের মতো সে–ও সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে ইউরো জিততে চায়।’

আরও পড়ুন

ইয়ামালের জন্ম ২০০৭ সালের ১৩ জুলাই কাতালুনিয়ান শহর মাতারোয়। তাঁর বাবা মরোক্কান এবং মায়ের বাড়ি বিষুবীয় গিনি। ২০১৪ সালে মাত্র সাত বছর বয়সে ফুটবল পায়ে যাত্রা শুরু এই উইঙ্গারের। বার্সেলোনার ফুটবল একাডেমি ‘লা মাসিয়া’র বয়সভিত্তিক দল থেকে তাঁকে বার্সার মূল দলে তুলে আনেন সাবেক কোচ জাভি হার্নান্দেজ। এর পর থেকেই ধীরে ধীরে পাদপ্রদীপের আলো কাড়ছেন এই কিশোর।

বাবার সঙ্গে লামিনে ইয়ামাল
ইয়ামালের বাবার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট

সেটি এতটাই যে কিছুদিন আগে ইনস্টাগ্রামে নাসরাউয়ির পোস্ট করা একটি ছবি ভাইরাল হয়। ছবিতে দেখা যায়, প্লাস্টিকের একটি বড় গামলার মধ্যে ছয় মাস বয়সী শিশু ইয়ামাল। লিওনেল মেসি সেই গামলার পাশে আয়েশ করে শিশু ইয়ামালকে গোসল করাচ্ছেন। ক্যাপশনে নাসরাউয়ি লিখেছিলেন, ‘দুই কিংবদন্তির যাত্রা শুরু।’ ইউরোর সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ইয়ামালের দুর্দান্ত সেই গোলের পর ছবিটি ভাইরাল হয়।

আরও পড়ুন

নাসরাউয়ির কাছে সেই ছবির ব্যাপারেও জানতে চাওয়া হয়েছিল। কেউ কেউ বলছেন, তখন ২০ বছর বয়সী মেসির স্পর্শ কিংবা আশীর্বাদে ইয়ামাল আজ তারকা হয়ে উঠেছেন। নাসরাউয়ি এ প্রসঙ্গে মজা করলেও তার আগে বলেছেন, ‘মেসির ছবিটি জীবনের কাকতালীয় ব্যাপার। তার যেখানে পৌঁছানোর কথা, সে তা পেরেছে।’ এরপরই নাসরাউয়ির কাছে জানতে চাওয়া হয়, ইয়ামাল কি তবে মেসির আশীর্বাদপুষ্ট?

এই প্রশ্নে শুধু ইয়ামালের বাবা নন, পৃথিবীর সব বাবাই সম্ভবত একই উত্তর দিতেন। নাসরাউয়ির মুখেও একই সুর ফুটেছে, তবে একটু মজার ছলে, ‘কিংবা মেসিই হয়তো আমার সন্তানের কাছ থেকে আশীর্বাদপুষ্ট। আমি জানি না। আমার কাছে আমার সন্তান সবকিছুতেই সেরা। সেটা শুধু ফুটবল নয়, ভালোবাসা, ব্যক্তি—সবকিছুতেই।’

ইউরোর ফাইনাল মাঠে বসে দেখতে চান নাসরাউয়ি। রোববার বাংলাদেশ সময় রাত একটায় বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ফাইনালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে স্পেন। এই ম্যাচ নিয়ে নাসরাউয়ি বলেছেন, ‘শনিবার (স্থানীয় সময়) সকালে আমি জার্মানি যাচ্ছি। আশা করছি (শিরোপা) জেতা পর্যন্ত থাকব।’