ইউরোর ফাইনালে মুখোমুখি স্পেন–ইংল্যান্ড: লড়াইটা আগুন ও জলের
স্পেন জিততে চায় চতুর্থ শিরোপা, ইংল্যান্ড প্রথম। ইংল্যান্ডের কাছে এটি শিরোপার জন্য ৫৮ বছরের আক্ষেপ ঘোচানোর ম্যাচও।
আগুন ও জলের লড়াই। আগুনে জল পড়লে নিভে যাবে। কিংবা আগুনের তাপে জলও উবে যেতে পারে! ‘আগুন’ ও জলের এই লড়াই নিয়েই বার্লিন ইউরো-ফাইনাল জ্বরে ভুগছে।
দহন অসম্পূর্ণ হলে নাকি আগুনের শিখা লাল। সেটা স্পেনের জার্সির মতোই। খেলার ধরনেও আগুনেরই উত্তাপ। লুইস দে লা ফুয়েন্তের স্পেন তিকিতাকা নয়, খেলছে আগুনে ফুটবল। আক্রমণে ক্ষুরধার ও গতিময়। ঢিমেতালে তিকিতাকার ছন্দ ভুলে খেলছে সরাসরি ফুটবল। লামিনে ইয়ামাল-দানি ওলমোরা মাঠে নিজেদের ‘পুড়িয়ে’ উপহার দিয়েছেন এবার ইউরোয় সেরা আক্রমণভাগ। সর্বোচ্চ ১৩ গোল করেছে স্পেন। ফাইনালে এই দহন সম্পূর্ণ হবে তো?
আর ‘জল’? সেটা টেমসে বইছে ৫৮ বছর ধরে। ’৬৬ বিশ্বকাপের পর প্রায় ছয় দশক হতে চলল কিছু জেতে না ইংল্যান্ড। বার্লিনের অলিম্পিয়াস্তাদিওনে আজ এই ‘আগুন এবং ‘জল’–এর লড়াইয়েরই ফয়সালা। কী হবে? কিছু জিততে না পারার অমোচনীয় কষ্টের ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুতে আগুন নিভবে, নাকি জল-ই উবে যাবে আগুনের উত্তাপে!
অথচ উয়েফা আজ রাতের ইউরোর ফাইনালে দুই দলের সমর্থকের জন্য টিকিট বরাদ্দ দিয়েছে মাত্র ১০ হাজার করে। বাকি সমর্থকেরা কী করবেন, সেই প্রশ্ন না তোলাই ভালো। সমর্থকেরা সব সময়ই কোনো না কোনো উপায় খুঁজে নেন। স্পেন উইঙ্গার দানি ওলমো অবশ্য তাঁর দলের সমর্থকদের পাশেই আছেন। সমর্থকসংখ্যা তুলনামূলক কম বুঝেই সম্ভবত অভয় দিয়ে বলেছেন, মাঠের খেলায় ইংল্যান্ডের শত্রুভাবাপন্ন সমর্থকদের সামলে রাখতে পারবে স্পেন।
ওলমোর এমন আত্মবিশ্বাসের পেছনে রয়েছে দুর্দান্ত কিছু পরিসংখ্যান। প্রথমত, স্পেনের গোল করার লোকের অভাব নেই। আলাদা আলাদা ১০ জন খেলোয়াড় গোল করেছেন। গতকাল ১৭তম জন্মদিনের কেক কাটা উইঙ্গার লামিনে ইয়ামাল–এর মধ্যে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ—যা ইংল্যান্ডের জন্য আবার দুশ্চিন্তার অপর নাম। সেই দুশ্চিন্তাকে নির্ঘুম রাতে পরিণত করতে পারে ইংল্যান্ডের জন্য ভয়ংকর এক পরিসংখ্যান।
২০০২ থেকে ২০২৪—এই ২২ বছরে বড় টুর্নামেন্টে মোট ২৬টি ফাইনাল খেলেছে স্পেনের দলগুলো। জাতীয় এবং স্পেনের ক্লাবগুলো মিলিয়ে এই দুই দশকের বেশি সময়ে স্পেনের কোনো দল ফাইনালে হারেনি। এর মধ্যে ৯ বার স্পেনের দলগুলোর কাছে হেরেছে ইংল্যান্ডের দল। দশমবারে কি ঘুচবে খরা?
প্রশ্নটির উত্তর মেলানোর দায়িত্ব জুড বেলিংহাম, হ্যারি কেইন, ওলি ওয়াটকিন্সদের কাঁধে। যদিও সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথমার্ধ ছাড়া গোটা ইউরোয় ইংল্যান্ড নজরকাড়া ফুটবল খেলতে পারেনি। গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের একাদশ বাছাই ও কৌশলও সমালোচিত হয়। উঠেছিল ছাঁটাইয়ের দাবিও। কিন্তু ইংল্যান্ড ফাইনালে ওঠার পর এসব সমর্থকদেরই ক্ষমা চাইতে হয় তাঁর কাছে। এখন প্রয়োজন একটু সৌভাগ্যের। হ্যারি কেইনের গায়ে যে ‘অভিশাপ।’ কি ক্লাব, কি জাতীয় দল; ১৫ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ারে ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা কখনো বড় শিরোপা জিততে পারেননি। প্রতিপক্ষ শিবিরে ওলমোকে দেখে দুশ্চিন্তাটা আরও বেড়ে যেতে পারে কেইনের।
সেটি শুধু ইউরোর গোল্ডেন বুট জয়ের (ওলমোরও ৩ গোল) প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা ভেবে নয়। গত আগস্টে জার্মান সুপার কাপে বায়ার্নের হয়ে অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে কেইনের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করেছিলেন লাইপজিগের এই ওলমোই।
সেই যে ’৬৬ বিশ্বকাপ জিতল এরপর পৃথিবী পাল্টে গেলেও ইংল্যান্ডের শিরোপার খাতায় কিছুই যোগ হয়নি। এর মাঝে ইউরোর সেমিফাইনালে (১৯৬৮, ১৯৯৬) খেলেছে, ফাইনালেও খেলেছে সর্বশেষবার। ইংল্যান্ডকে টানা দ্বিতীয় ফাইনালে তোলা কোচ গ্যারেথ সাউথগেট কি পারবেন স্বপ্ন পূরণ করতে? নইলে কিন্তু টেমসের জল বাড়বে।
ফিফা ও উয়েফার প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ১২ বারের মুখোমুখিতে ইংল্যান্ড জিতেছে ৫ বার, স্পেন ৪ বার। বাকি ৩টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। কিন্তু অপটা অ্যানালিস্টের অ্যালগরিদম বলছে, টেমসে জল বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি—স্পেনের ফাইনাল জয়ের সম্ভাবনা ৬০.৩৮ শতাংশ। ইংল্যান্ডের ৩৯.২২ শতাংশ।
তবে কেউ বলছে না, ইংল্যান্ড এই পরিসংখ্যান উল্টে দিতে পারলেও কিন্তু টেমসে জল বাড়বে। আনন্দাশ্রু!