সালাহদের বদলি হিসেবে নামিয়েই বেশি লাভ লিভারপুলের
২০১১–১২ প্রিমিয়ার লিগের শেষ দিনে ম্যানচেস্টার সিটি–কিউপিআরের ম্যাচের কথা অনেকেরই মনে থাকার কথা। সিটি বা প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ম্যাচ ছিল সেটি। সেদিন ৯০ মিনিট পর্যন্ত ২–১ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা সিটি যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে এডিন জেকো আর চতুর্থ মিনিটে সের্হিও আগুয়েরোর গোলে ৩–২ ব্যবধানের নাটকীয় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে, যা শুধু একটা জয়ই ছিল না, এ জয় সিটিকে এনে দেয় ক্লাব ইতিহাসের প্রথম প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা।
সেদিন সিটির পক্ষে সমতার গোল করা জেকো আর আগুয়েরোর জয় নিশ্চিতের গোলে অ্যাসিস্ট করা মারিও বালোতেল্লি ছিলেন বদলি খেলোয়াড়। শুধু রোমাঞ্চকর সমাপ্তির লিগ শিরোপাজয়ের ম্যাচেই নয়, সেবার মৌসুমজুড়েই সিটিকে বারবার উদ্ধার করেছিলেন বদলি খেলোয়াড়েরা। মানুয়েল পেলেগ্রিনির সেই সিটির স্মৃতিই ফিরিয়ে আনছে এবারের লিভারপুল। ইয়ুর্গেন ক্লপের বিদায়ী মৌসুমে কখনো দারউইন নুনিয়েজ, কখনো কোডি গাকপো, কখনোবা আবার দিয়েগো জোতা বদলি নেমে শেষ মুহূর্তের গোলে জয় এনে দিচ্ছেন দলকে। লিভারপুলের বদলি খেলোয়াড়দের গোল করা বা করানোর পরিমাণ এতই বেশি যে এরই মধ্যে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ইউরোপা লিগে স্পার্তা প্রাহার বিপক্ষে ৯৪ মিনিটে দমিনিক সোবোসলাইয়ের করা গোলটি ছিল চলতি মৌসুমে লিভারপুলের বদলি খেলোয়াড়দের অবদানে হওয়া ৪৪তম গোল। প্রিমিয়ার লিগে সংখ্যাটা ২২। ইংলিশ লিগের এক মৌসুমে বদলি খেলোয়াড়দের এর চেয়ে বেশি গোলে অবদানের কীর্তি আছে মাত্র দুটি—২০১১–১২ মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির ২৪ গোল, ২০০৯–১০ মৌসুমে আর্সেনালের ২৩ গোল।
এবারের মৌসুমে এখনো ১১ ম্যাচ বাকি লিভারপুলের। ক্লপের দল যদি আর্সেনাল ও সিটিকে না ছাড়িয়ে যেতে পারে, বিস্ময়করই হবে সেটা। লিগকেন্দ্রিক হিসাব করলে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে লিভারপুলের কাছাকাছি আছে শুধু আতালান্তা। সিরি আর ক্লাবটি লিগে এখন পর্যন্ত বদলি খেলোয়াড়দের অবদানে পেয়েছে ২১ গোল। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৭ গোলে অবদান আতলেতিকো মাদ্রিদ, জিরোনা, রোমা ও কালিয়ারির বদলি খেলোয়াড়দের। শীর্ষ ছয়ের তিনটি দলই সিরি আর হওয়ার বড় কারণ, ম্যাচপ্রতি সর্বোচ্চ ৪.৭ জন খেলোয়াড় বদলি করায়। যে কারণে চলতি মৌসুমে সিরি আর ১৯.৩ শতাংশ গোলই এসেছে বদলিদের কাছ থেকে।
প্রিমিয়ার লিগে মোট গোলে বদলি খেলোয়াড়দের অবদান ১৩.৮ শতাংশ (আত্মঘাতী বাদে)। লিগটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ (ছাড়িয়ে গেছে সর্বশেষ মৌসুমের ১২.৭%)। ২০২২–২৩ মৌসুম থেকে প্রিমিয়ার লিগে প্রতিটি দল পাঁচজন খেলোয়াড় বদলি করতে পারে। লিভারপুল কোচ এখন পর্যন্ত ম্যাচপ্রতি বদলি করেছেন গড়ে ৪.৫ জনকে। সব মিলিয়ে মোট ১১৯ বার খেলোয়াড় বদলি করেছে লিভারপুল। যদিও ব্রাইটন (১২৮) ও বার্নলির (১২২) তুলনায় তা কম।
লিগ তুলনায় আতালান্তা কাছাকাছি হলেও সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে লিভারপুলের ধারেকাছেই কোনো দল নেই। শীর্ষ পাঁচ লিগের দলগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ গোলে অবদান রেখেছেন আতলেতিকো মাদ্রিদের বদলি খেলোয়াড়েরা, লিভারপুলের চেয়ে ১৫টি কম। আর তৃতীয় স্থানে থাকা অ্যাস্টন ভিলার অবস্থান ২১ গোল পেছনে (২৩)।
লিভারপুলের এই ৪৪ গোলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চারটি করে গোল ও অ্যাসিস্ট নুনিয়েজের, তিনটি করে গোল ও অ্যাসিস্টে এর পরেই নাম গাকপোর। আফ্রিকা কাপ অব নেশনস থেকে চোট নিয়ে ফেরা মোহাম্মদ সালাহও বদলি নেমেছেন কয়েকটি ম্যাচে। এর মধ্যে বদলি হিসেবে তারকা ফরোয়ার্ড করেছেন চার গোল, সঙ্গে একটি অ্যাসিস্টও। সব মিলিয়ে লিভারপুলের হয়ে বদলি নামা ৩১ ফুটবলারের ১৫ জনই দলের হয়ে গোল বা গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন।
কে জানে, বদলি খেলোয়াড়দের এই অবদানই মৌসুম শেষে লিভারপুলকে লিগ এনে দেয় কি না! ২০১১–১২ মৌসুমে সিটি বদলিতে ভর করেই জিতেছিল লিগ শিরোপা!