মাত্র ৮ দিন আগে কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে নেপালকে হারিয়ে প্রথমবার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন সাবিনা খাতুনরা। নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই জয়ে উজ্জীবিত হতে পারলেন কই জামাল ভূঁইয়ারা! উল্টো আজ দশরথ স্টেডিয়ামে ফিফা প্রীতি ম্যাচে নেপালের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে ৩-১ গোলে।
এলোমেলো রক্ষণের মাশুল গুনে বাংলাদেশ ৩৭ মিনিটের মধ্যেই খেয়ে বসে তিন গোল। নেপালের দ্রুতগতির ফরোয়ার্ডদের আটকাতে পারেননি বাংলাদেশে নামীদামি ডিফেন্ডাররা। বিশ্বনাথ, টুটুল হোসেন, রহমত মিয়ারা কোনো প্রতিরোধই তৈরি করতে পারেননি। বিশেষ করে ফরোয়ার্ড অঞ্জন বিস্তাকে আটকানো যায়নি। অঞ্জন হ্যাটট্রিক করে নেপালকে দিয়েছেন বড় জয়ের স্বাদ।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে বেশির ভাগ গোলই বাংলাদেশ হজম করে ফ্রি কিকে, কর্নারে। তাই ভয় ছিল সেট পিচ নিয়ে। কিন্তু সেট পিচ আটকানোর প্রতিরোধের কোনো উপায় বের করতে পারেনি বাংলাদেশ। অঞ্জনের প্রথম ও তৃতীয় গোলটি আসে ফ্রি কিক থেকে হেডে। ৩-০ হওয়ার পর ম্যাচটা আসলে ওখানেই শেষ। বিরতির পর বাংলাদেশ দলের স্ট্রাইকার সাজ্জাদ হোসেন একটি গোল শোধ করলেও ম্যাচে ফেরার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।
১৮ মিনিটে আজ গোলের সূচনা করে নেপাল। বক্সের বাঁ পাশ থেকে বিমল ঘারতি মাগারের ফ্রি কিকে বক্সে লাফিয়ে ওঠেন দুই দলের খেলোয়াড়েরাই। ভিড়ের মধ্যে অঞ্জন বিস্তার হেড চলে যায় জালে, ১-০। গোল খাওয়ার ঠিক আগের মিনিটেই জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি কিক লাগে নেপালের ক্রসবারে।
২৬ মিনিটে হয়ে যায় ২-০। দ্রুতগতির পাল্টা আক্রমণে এই গোল করেছে নেপাল। বিমলের শট বাংলাদেশ গোলকিপার আনিসুর ফিস্ট করেন, সেই বল গিয়ে পড়ে ফাঁকায় দাঁড়ানো অঞ্জন বিস্তার পায়ে। ভুল করেননি তিনি। সহজেই বল পাঠান জালে। ৩৭ মিনিটে তৃতীয় গোলটা ফ্রি কিক থেকে হেডে করেন অঞ্জন।
বিরতির পর রাইট ব্যাক রিমন হোসেনকে তুলে ইয়াছিন আরাফাতকে মাঠে নামান বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। একটু পরই রাকিবের ক্রসে হেডে সাজ্জাদ হোসেন করেন ৩-১। এরপরই মতিনকে তুলে মাঠে পাঠানো হয় ইব্রাহিমকে। কিন্তু গোলের আর দেখা পায়নি বাংলাদেশ।
১৯৮৪ সাফ গেমসে নেপালকে তাদেরই মাঠে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই গেমসের ফাইনালে নেপাল ৪-২ গোলে বাংলাদেশকে হারিয়ে প্রতিশোধ নেয়। গত ৩৮ বছরে এই প্রথম বাংলাদেশের জালে তিন গোল দিল নেপাল।
আজকের ম্যাচের আগে দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল ৫টি ম্যাচে। দুই দলের একটি করে জয়। বাকি তিন ম্যাচ ড্র। সর্বশেষ ম্যাচে গত বছর মালদ্বীপ সাফে ৮৭ মিনিটে বাংলাদেশ গোল খেয়ে ড্র করে ১-১ গোলে। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা ড্র করায় বাংলাদেশ খেলতে পারেনি সাফের ফাইনালে। গত বছরই কাঠমান্ডুতে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে নেপালের কাছে বাংলাদেশ হারে ২-১ গোলে। সেই জয়ের পর আজ আবার বাংলাদেশকে হারিয়েছে নেপাল।
হাভিয়ের কাবরেরার অধীন অষ্টম ম্যাচে এটি বাংলাদেশের পঞ্চম হার। একটি জয়, দুটি ড্র। একমাত্র জয় এসেছে ২২ সেপ্টেম্বর কম্বোডিয়ার বিপক্ষে। সেই জয়ের অনুপ্রেরণা নিয়ে কাঠমান্ডুতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। লক্ষ্য ছিল কাঠমান্ডুতেও জয়। কিন্তু পূরণ হলো না সেই আশা। নতুন চুক্তি না হলে কাবরেরার অধীন হয়তো শেষ ম্যাচটি আজ খেলে ফেলেছে বাংলাদেশ। এ বছর আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ নেই জামাল ভূঁইয়াদের।
বাংলাদেশ দল: আনিসুর, বিশ্বনাথ, রহমত, রিমন ( ইয়াছিন আরাফাত), টুটুল (তারিক কাজী), জামাল, হেমন্ত (আতিকুর), বিপলু (সুমন রেজা), রাকিব, মতিন মিয়া (ইব্রাহিম), সাজ্জাদ হোসেন (ফয়সাল আহমেদ)।