চিরনিদ্রায় শায়িত ফুটবলের রাজা পেলে
আগেই জানিয়ে রাখা হয়েছিল, সান্তোসের মাঠ ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে পেলের মরদেহ রাখা হবে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা পর্যন্ত। তৃতীয়বারের মতো ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভাও এদিন পেলেকে শেষশ্রদ্ধা জানাবেন—সরকারি ঘোষণা ছিল এমনই। হেলিকপ্টারে করে লুলা সান্তোসের পাশের ক্লাব আতলেতিকো পর্তুগিজার স্টেডিয়াম উলরিকো মুরসায় নেমেছেন সকাল ৯টার দিকে।
সেখান থেকে গাড়িতে করে ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। লুলার শ্রদ্ধা জানানোর আগে–পরে শেষবারের মতো পেলেকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন আরও কিছু সাধারণ মানুষ। এর কিছুক্ষণ পরেই পূর্বঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী পেলের মরদেহ নিয়ে গাড়ি রওনা দেয় মেমোরিয়া নেকরোপোল একিউমেনিকা সমাধিস্থলের দিকে।
কোলন ক্যানসার ও বার্ধক্যজনিত আরও অনেক রোগে ভুগে গত ২৯ ডিসেম্বর ৮২ বছর বয়সে অন্যলোকে চলে যাওয়া পেলের দুই দিনব্যাপী শেষকৃত্যে বিভিন্নভাবে অংশগ্রহণ করেছেন প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। সোমবারই শেষকৃত্যে গিয়ে ফুটবলের রাজাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো, দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল ফেডারেশনের (কনমেবল) সভাপতি আলেহান্দ্রো দমিনগেজ, কনফেডারেশন অব ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের (সিবিএফ) সভাপতি এদনালদো রদ্রিগেজ। ছিলেন ব্রাজিলের সাবেক ও বর্তমান অনেক খেলোয়াড়।
ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাব থেকেও প্রতিনিধিদল গিয়েছিলেন পেলের শেষকৃত্যে অংশ নিতে। তাঁরা সহমর্মিতা জানিয়েছেন পেলের স্ত্রী মার্সিয়া আওকি, তিন সন্তান—এদিনহো, সিলেস্তে ও কেলি নাসিমেন্তোকে।
মঙ্গলবার তাঁর মরদেহ সান্তোসের মাঠ ভিলা বেলমিরো থেকে মেমোরিয়া নেকরোপোল একিউমেনিকা সমাধিস্থলে যাওয়ার পথেও রাস্তায় দুই পাশে হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কারও হাতে ছিল পেলেকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে লিখে আনা পোস্টার-প্ল্যাকার্ড, কেউ গায়ে দিয়ে এসেছিলেন সান্তোসে পেলের সেই বিখ্যাত ১০ নম্বর জার্সি। কেউ কেঁদেছেন অঝোরে, কেউ তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মরদেহ বহনকারী গাড়িতে ফুল ছিটিয়ে।
সান্তোস স্টেডিয়াম থেকে সাও পাওলোর ফায়ার সার্ভিসের বিশেষ গাড়িতে করে পেলের মরদেহ নিয়ে শহরের বড় রাস্তাগুলো প্রদক্ষিণ করা হয়। একপর্যায়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় পেলের মায়ের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে। শতবর্ষী পেলের মা সেলেস্তে এখনো থাকেন সেই বাড়িতে।
বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে পেলের অন্য আত্মীয়স্বজনেরা শেষবিদায় জানিয়েছেন তাঁকে। স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত সেলেস্তে তাঁর পুত্রের চলে যাওয়াটা এখনো বুঝে উঠতে পারেননি বলে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানিয়েছিল ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যমগুলো।
শবযাত্রার শেষে পেলেকে সমাধিস্থ করা হয় মেমোরিয়া নেকরোপোল একিউমেনিকার প্রথম তলায়। তবে সেখানে সাধারণ মানুষদের প্রবেশাধিকার ছিল না। শুধু পরিবারের সদস্য ও আমন্ত্রিত অতিথিরা। ব্রাজিলিয়ান দৈনিক ও’গ্লোবো তাদের অনলাইন সংস্করণে জানিয়েছে, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্থানীয় সময় বেলা দুইটার দিকে পেলেকে সমাধিস্থ করা হয়।
শুরুতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পেলেকে মেমোরিয়া নেকরোপোল একিউমেনিকার নবম তলায় সমাধিস্থ করা হবে, যেখানে তাঁর বাবা ও ভাই সমাহিত আছেন। তবে ভবিষ্যতে সর্বসাধারণ যাতে সহজেই ফুটবলের রাজাকে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন, সে জন্য প্রথম তলাতেই পেলেকে সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তা ছাড়া পেলের সমাধিস্থল ঘিরে একটি জাদুঘর তৈরিরও পরিকল্পনা আছে কর্তৃপক্ষের।