১০০ কোটি পাউন্ডের বেশি খরচ করে যে ফল কিনল চেলসি
মার্কিন ধনকুবের টড বোয়েলি গত বছর মে মাসে চেলসি কিনে নেন। এরপর স্কোয়াডের শক্তি বাড়াতে দলবদলের বাজারে ঢেলেছেন ১০০ কোটি পাউন্ডের বেশি। স্টামফোর্ড ব্রিজের ক্লাবটির হালনাগাদ খোঁজখবর না রেখে ‘টাকায় কি না হয়’—বহুল প্রচলিত কথাটি বিশ্বাস করলে ভাবতেই পারেন, চেলসি নিশ্চয়ই মাঠে ছড়ি ঘোরাচ্ছে। বটে! যদি বলা হয়, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে যে ২০টি দল খেলছে, তাদের মধ্যে আর কোনো দল ২০২৩ সালে লিগে চেলসির চেয়ে বেশি ম্যাচ হারেনি—তাহলে? তখন অবশ্য মনে হতে পারে, নাহ টাকায় সবকিছু হয় না!
ফুটবলের পরিসংখ্যান–বিষয়ক ‘এক্স’ অ্যাকাউন্ট ‘স্কোয়াকা’ জানিয়েছে, ২০২৩ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে আর কোনো দলই চেলসির চেয়ে বেশি ম্যাচ হারেনি। ‘ট্রান্সফারমার্কেট’ জানাচ্ছে, তথ্যটি সঠিক হলেও লজ্জার এই রেকর্ডে চেলসি নিঃসঙ্গ নয়। বিষয়টি আরেকটু বুঝিয়ে বলা যায়। ২০২৩ সালে প্রিমিয়ার লিগে ১৯ ম্যাচ হেরেছে চেলসি। একই সময়ে প্রিমিয়ার লিগে চেলসির সমান ১৯ ম্যাচ হারা ক্লাব আছে আরও তিনটি—বোর্নমাউথ, ফুলহাম ও নটিংহাম ফরেস্ট। অর্থাৎ ২০২৩ সালে প্রিমিয়ার লিগে আর কোনো দল চেলসির চেয়ে বেশি ম্যাচ হারেনি; তবে সর্বোচ্চ হারের এই তালিকা এক সদস্যবিশিষ্ট নয়।
এই চার দলের হার-জিতের পরিসংখ্যান আরেকটু ব্যাখ্যা করলে সামগ্রিক চিত্রটা পাওয়া যায়। গতকাল রাতে প্রিমিয়ার লিগে উলভসের মাঠে ২-১ গোলের হারে ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ হারের এই তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে চেলসি। এ বছর সেটা ছিল চেলসির ৪১তম লিগ ম্যাচ। ৪১ ম্যাচে ১০ জয়, ১২ ড্র এবং ১৯ হার চেলসির। এ মৌসুমের লিগ টেবিলে তাঁরা দশম। তাদের দুই ধাপ নিচে অবস্থান করা বোর্নমাউথ ২০২৩ সালে ৩৮ ম্যাচ খেলে চেলসির চেয়ে বেশি জয় তুলে নিয়েছে। ১৩ জয়, ৬ ড্রয়ের পাশাপাশি ১৯ হার। ফুলহাম খেলেছে ৩৯ ম্যাচ। এ মৌসুমে লিগ টেবিলে বোর্নমাউথের পরের অবস্থানে থাকা ক্লাবটি (১৩তম) ১৪ জয় ও ৬ ড্রয়ের বিপরীতে ১৯ ম্যাচ হেরেছে।
সত্তর দশকের শেষ দিকে এবং আশির দশকের শুরুতে ইউরোপিয়ান ফুটবল কাঁপানো নটিংহাম ফরেস্ট এবারের মৌসুমে লিগ টেবিলে আছে শোচনীয় অবস্থায়। ১৮তম স্থানে থাকা ক্লাবটি অবনমন অঞ্চল থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে। ১৯৭৯ এবং ১৯৮০ সালে টানা দুবার ইউরোপিয়ান কাপজয়ী (চ্যাম্পিয়নস লিগ) নটিংহাম এ বছর খেলেছে ৪০ ম্যাচ। ৯ জয়ের পাশাপাশি ১২ ড্র এবং ১৯ হার। তবে এ বছর এখনো ২টি করে ম্যাচ বাকি চেলসি, ফুলহাম, বোর্নমাউথ এবং নটিংহামের। এ বছর ৩৯ ম্যাচ খেলে ১৮ হার এভারটনের।
প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর মধ্যে এ বছর এই প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে কম ম্যাচ হেরেছে কে—সে প্রশ্নও উঠতে পারে। বলতে পারেন, কে আবার ম্যানচেস্টার সিটি!
উত্তর সঠিক, তবে পুরোপুরি নয়। আর এ ক্ষেত্রেও ব্যাপার সেই চেলসির মতোই—প্রিমিয়ার লিগে এ বছর সবচেয়ে কম ম্যাচ হারা একমাত্র দল নয় সিটি। পেপ গার্দিওলার দলের সমান ৬ ম্যাচ হেরেছে লিভারপুলও। ৭ ম্যাচ হেরেছে আর্সেনাল এবং ৮ হার অ্যাস্টন ভিলার। প্রিমিয়ার লিগে শুধু এই চারটি দলই এ বছর নিজেদের হারসংখ্যা দুই অঙ্কে পৌঁছাতে দেয়নি। তবে ম্যাচ জয়সংখ্যায় সিটি সবার ওপরে। ৩৯ ম্যাচে ২৭ জয় পেয়েছে গত মৌসুমের ‘ট্রেবল’জয়ীরা। ৪০ ম্যাচে ২৫ জয় নিয়ে দুইয়ে অ্যাস্টন ভিলা। তাদের সমান ম্যাচে ২৪ জয় নিয়ে তিনে আর্সেনাল।
পয়েন্ট পাওয়ার হিসাবে এ বছর প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট সিটির। ৮৭ পয়েন্ট তুলে নিয়েছে গার্দিওলার দল। ৮২ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে অ্যাস্টন ভিলা এবং ৮১ পয়েন্ট নিয়ে এ তালিকায় তৃতীয় আর্সেনাল। এ বছর গোল করার হিসাবেও সিটি এগিয়ে। ৯০ গোল করেছে ‘সিটিজেন’রা। এর বিপরীতে হজম করেছে ৩৭ গোল। প্রিমিয়ার লিগে আর কোনো দল এ বছর নিজেদের গোলসংখ্যা ৯০–এর ঘরে নিতে পারেনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আর্সেনাল করেছে ৮৪ গোল। ৭৯ গোল নিয়ে এ তালিকার তিনে লিভারপুল এবং ৭৮ গোল করে চারে উঠে এসে চমকে দিয়েছে এ মৌসুমে লিগ টেবিলে নবমস্থানীয় ব্রাইটন। তবে ব্রাইটনের গোলপোস্টও যেন ‘চিচিং ফাঁক’ হয়ে ছিল এ বছর—৬০ গোল হজম করেছে ক্লাবটি।
ফুটবলের পরিসংখ্যান–বিষয়ক ‘এক্স’ অ্যাকাউন্ট ‘অপটা জো’ জানিয়েছে, ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগ বিচারে এবারের পঞ্জিকাবর্ষে তিনটি দল চেলসির চেয়ে বেশি ম্যাচ হেরেছে। লা লিগার ক্লাব আলমেরিয়া হেরেছে ২৪ ম্যাচ। ২০ ম্যাচ হেরেছে বুন্দেসলিগার দল ভেরডার ব্রেমেন। ইতালিয়ান সিরি আ দল এম্পোলিও হেরেছে ব্রেমেনের সমান ২০ ম্যাচ।