সিটির পক্ষে বাজি ধরেও ১০ লাখ টাকা হেরেছেন আগুয়েরো
ম্যানচেস্টার সিটি গত এক যুগের সমৃদ্ধ ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছেন সের্হিও আগুয়েরো। প্রিমিয়ার লিগ জামানায় সিটির প্রথম শিরোপা জয়ের অবিস্মরণীয় মুহূর্তটা তো এসেছিল আগুয়েরোর সৌজন্যেই। ২০১১-১২ মৌসুমের শেষ দিনে শেষ ম্যাচের যোগ করা সময়ে তাঁর গোলেই প্রিমিয়ার লিগে প্রথম শিরোপা জিতেছিল সিটি। বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার পিটার ড্রুরির সেই ধারাবিবরণী ‘আগুয়েরো...স্ট্যাগেরিং, জাস্ট স্ট্যাগেরিং’ এখনো ফুটবলপ্রেমীদের কানে বাজে।
ওই লিগ শিরোপা ছাড়াও সিটিকে আরও ১৪টি ট্রফি জেতাতে অবদান রেখেছেন সাবেক আর্জেন্টিনা স্ট্রাইকার। তবে প্রিয় ক্লাবের মতো তাঁরও একমাত্র অপ্রাপ্তি ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিততে না পারা। ইস্তাম্বুলে পরশু রাতের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে অবশেষে সেই আক্ষেপ ঘুচিয়েছে সিটি।
খেলোয়াড় হিসেবে সেই স্বাদ না পেলেও পেপ গার্দিওলার দলের ইতিহাস গড়ার মুহূর্তটা মাঠে বসেই দেখেছেন আগুয়েরো। সাবেক সতীর্থদের সঙ্গে উদ্যাপনও করেছেন। যদিও মনে হয়তো একটু খচখচানি ছিলই তাঁর। বাজিতে যে হেরে গেছেন!
প্রশ্ন হচ্ছে, সিটি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও কীভাবে হেরে গেলেন আগুয়েরো? হৃদ্রোগের কারণে অকালে অবসর নেওয়া তারকা হেরেছেন আসলে বাজির শর্তের কারণেই। জুয়ার ওয়েবসাইট ‘স্টেক’-এ সিটির পক্ষে ১০ হাজার ডলার বা ১০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা বাজি ধরেছিলেন। কিন্তু তাঁর বাজিটা ছিল, চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ইন্টার মিলানকে কমপক্ষে ২ বা ৩ গোলের ব্যবধানে হারাবে সিটি। কিন্তু গার্দিওলার দল করতে পেরেছে মাত্র একটি গোল। তাই সিটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলেও ১০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা গচ্চা গেছে আগুয়েরোর।
ম্যাচজুড়ে বেশ কয়েকবার গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল সিটি। তবে দলটির যে মান, তার ধারেকাছেও সেদিন যেতে পারেনি। লক্ষ্যে মাত্র চারটি শট নিতে পেরেছেন আর্লিং হলান্ড, কেভিন ডি ব্রুইনা, ইলকাই গুন্দোয়ান, বের্নার্দো সিলভারা। তবে তাঁদের ছাপিয়ে ফাইনালের নায়ক বনে গেছেন রদ্রি। ৬৮ মিনিটে তাঁর গোলেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সিটি। কিন্তু বাজি জিততে হলে আগুয়েরোর দরকার ছিল আরেকটি গোল। উত্তরসূরিরা কমপক্ষে ২টি গোল করলেই ৯ হাজার ৭০০ ডলার বা ১০ লাখ ৫১ হাজার টাকা জিততেন আগুয়েরো।
ফাইনালের রাতে ম্যানচেস্টার সিটির ড্রেসিংরুমে তোলা একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন আগুয়েরো। সঙ্গে সেই বাজির স্ক্রিনশটও যুক্ত করেছেন। লিখেছেন, ‘এগিয়ে চলো ম্যানচেস্টার সিটি, স্টেক।’ সিটি ঠিকই নিজেদের এগিয়ে নিয়েছে, তবে ১ গোলের বেশি যে করতে পারেনি। যে কারণে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের সঙ্গে আগুয়েরোর বাজিতে জেতার আনন্দটা আর যোগ হয়নি।
আগুয়েরোর খেলোয়াড়ি জীবন কীভাবে শেষ হয়েছে, তা হয়তো জানাই আছে। সেই শেষ অবশ্য বার্সেলোনার জার্সি গায়ে। ম্যানচেস্টারের ক্লাবটিতে ১০ মৌসুম কাটিয়ে ২০২১ সালে বার্সেলোনায় যোগ দিয়েছিলেন আগুয়েরো। কিন্তু ওই বছরের অক্টোবরে লা লিগায় আলাভেসের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথমার্ধে বুকে হাত দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আর্জেন্টাইন তারকা। সেখানে কিছুক্ষণ শুশ্রূষার পর তাঁকে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, তাঁর হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হওয়ায় জটিল সমস্যা দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাই ওই বছরের ডিসেম্বরে পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেন।
খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় বললে কী হবে, আগুয়েরো দলের শুভানুধ্যায়ী হিসেবে সব সময় পাশেই থাকেন। চ্যাম্পিয়নস লিগে ম্যানচেস্টার সিটির আগে কাতার বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গে ছিলেন ৩৫ বছর বয়সী তারকা। আর্জেন্টিনা-সিটি দুই দলই এবার সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছে। বার্সার হয়ে লা লিগায় মাত্র চারটি ম্যাচ খেলতে পেরেছেন আগুয়েরো। সেই বার্সাও এবার জিতেছে লিগ শিরোপা। শর্তের কারণে বাজিতে হারলেও মৌসুমটা তো আগুয়েরোরই!