মোরছালিনের মধ্যে বিশেষ কিছু দেখছেন উচ্ছ্বসিত কাবরেরা
২০২১ সালে মালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ লিগ ম্যাচে নেপালের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে স্কোরলাইন ১-১ হওয়ায় বাংলাদেশ নকআউটে (ফাইনাল) যেতে পারেনি। বেঙ্গালুরু সাফে আর কান্না নয়। বাংলাদেশ আনন্দ নিয়েই আজ ভুটানকে ৩-১ গোলে হারিয়ে ১৪ বছর পর সাফের সেমিফাইনালে উঠেছে।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ছিলেন খুশি। তাঁর প্রতিটি কথায় থাকল আত্মবিশ্বাস আর ফুটবলারদের প্রশংসা। বিশেষ করে তরুণ প্রতিভা শেখ মোরছালিনের প্রশংসা করেছেন। আজ ভুটানের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশকে দুর্দান্ত এক গোল করে ম্যাচে ফেরান ফরিদপুরের ১৮ বছরের তরুণ মোরছালিন। সেটিই মূলত টার্নিং পয়েন্ট এই ম্যাচের। এর পর ভুটানের যে আত্মঘাতী গোলে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়, সেটিতেও রাকিবের কাছে বল বাড়িয়েছিলেন মোরছালিন। আর রাকিবের করা গোলটিতে তো সরাসরি অবদান ছিলই।
টানা দুই ম্যাচে দারুণ খেলা এই তরুণ মিডফিল্ডারকে নিয়ে ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বাংলাদেশ কোচ কাবরেরা, ‘সুযোগ তৈরি করায় মোরছালিনের বিশেষ দক্ষতা আছে। সে গত ম্যাচে গোল করেছে। আজও ২০ মিনিটের (২২ মিনিটে) মধ্যে গোল করেছে।’
কোচের প্রশংসা পেয়েছেন বাংলাদেশের তৃতীয় গোলটি করা রাকিবও, দ্বিতীয় গোলটি আত্মঘাতী হলেও রাকিবের অবদান তাতে অনেক। রাকিবকে নিয়ে কোচের উচ্ছ্বাস,‘ এই মুহূর্তে রাকিব অন্য পর্যায়ের ফুটবল খেলছে। মোরছালিন আর রাকিব আজ দলের জন্য অনেক অবদান রেখেছে। তবে অন্যদেরও সহায়তা ছিল।’
১৪ বছর পর বাংলাদেশকে সাফের সেমিফাইনালে তুলে খুশি কাবরেরা। সেটা প্রকাশ করেন এভাবে,‘ অবশ্যই এই অর্জনে আমি খুব খুশি।’ তারপর ম্যাচটাকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন, ‘আজ শুরুটা কঠিন ছিল আমাদের জন্য। আমরা কিছুটা নড়বড়ে ছিলাম। আত্মবিশ্বাসও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। প্রথম ৪-৫ মিনিট ঠিক ছিল, এরপর আমরা নিজেদের খেলাটা খেলতে পারিনি। ভুটান খুব ভালো খেলেছে। আমরা জানতাম তারা শক্তিশালী। আমরা এক গোলে পিছিয়ে পড়ি। এরপর আমরা ফিরে আসি। তিনটি গোলও করেছি। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ঝুঁকি নেইনি।’
এই জয়টা ঈদের উপহার হিসেবে দেশবাসীকে উজ্জীবিত করবে বলছেন কাবরেরা। এর প্রভাব কতটা পড়বে বাংলাদেশের ফুটবলে কথা বলেন তা নিয়েও, ‘ এটা বাংলাদেশের ফুটবলে জন্যও ভালো হলো। এখন আরও সমর্থন পাবে ফুটবল।’
এই অর্জন সহজে আসেননি, কাবরেরা বলতে ভোলেননি সেটাও, ‘টেকনিক্যাল স্টাফরাও অনেক পরিশ্রম করেছে। আমরা বিপিএলের প্রতিটি ম্যাচ দেখেছি। ক্লাবের অনুশীলনে গেছি। দেখতে চেয়েছি কোন খেলোয়াড়টিকে নিলে দলের জন্য ভালো হবে। সাফের সেমিফাইনালে ওঠা কোনো ভাগ্যের ব্যাপার নয় যে, উঠে গেলাম। এটা সামগ্রিক চেষ্টার ফল । তবে এই দল যা অর্জন করতে পারে তা থেকে এখনো আমরা দূরে আছি। আমাদের আরও সমর্থন দরকার।’
১ জুলাই প্রথম সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী কুয়েত। ম্যাচটা যে কঠিন তা জানেন কাবরেরা। তাই তো ম্যাচ শেষে বলেছেন,‘ সেমিফাইনালটা কঠিন হবে। তবে আমরা লড়াই করব। কাল আমরা আবার প্রস্তুতি নেব।’
এখন সেমিফাইনালের জন্য তৈরি হতে হবে, বলেছেন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও। ম্যাচশেষে উচ্ছ্বসিত অধিনায়ক বলেন,‘ এটা আমাদের জন্য ভালো অর্জন। তবে এখন আমাদের সেমিফাইনালের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা জানি কুয়েত খুব শক্তিশালী দল। তারা গ্রুপের ম্যাচে ভারতের জন্য সমস্যা তৈরি করেছিল। কাজেই তাদের নিয়ে আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে, তারপর তাদের সামনে দাঁড়াব আমরা।’
ফুটবল যারা ভালোবাসে তাদের জন্য আজ অনেক বড় দিন, এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের সেন্টারব্যাক তপু বর্মণ। ২০১৫ থেকে সাফ খেলা এই ডিফেন্ডার বলছিলেন, ‘চারটি সাফ খেলার পর এই এই প্রথম আমি নিজেকে দেখছি সেমিফাইনালে। অবশ্যই এটা আমার জন্য অনেক বড় কিছু। আমাদের টিমের জন্যও বিশেষ কিছু। কারণ, ১৪ বছর পর আমরা সাফের সেমিফাইনাল খেলব। আসলে এটা আমার মনে হয় অনেক বড় প্রাপ্তি। এ জন্য আমরা সবাই খুব খুশি। আশা করি সেমিফাইনালও ভালো খেলব।’
ডিফেন্ডার রহমত মিয়া বলেছেন,‘ আর কিছু না হোক ভুটানকে হারিয়ে একটা ফাড়া তো কাটালাম আমরা।’
ভুল বলেননি রহমত। বাংলাদেশ এমন দিনের জন্যই অপেক্ষায় ছিল ১৪ বছর ধরে।