ফুটবল এমন এক খেলা, যেখানে গোল হওয়া না–হওয়ার আনন্দ-বেদনার সঙ্গে জটিলতম সব ফরমেশন ও কৌশলের মজা পাওয়া যায়। যে যার জায়গা থেকে খেলাটাকে উপভোগ করতে পারার এই দুর্দান্ত সর্বজনীনতা খেলাটাকে দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ইভেন্টে পরিণত করেছে। আর নিঃসন্দেহে ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর হলো বিশ্বকাপ ফুটবল। চার বছর পরপর হওয়া এই টুর্নামেন্টের সময় গোটা পৃথিবীর নজর থাকে কে জিতল, কে হারল। খেলাটির সব রকম মানবীয় আবেগকে ধারণ করার যে ক্ষমতা, এ কারণে বিশ্বকাপ ফুটবল শুধু হার-জিতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই ইতিহাস তো মানুষেরই ইতিহাস। কাতারে আর কিছুদিন পরই শুরু হবে বিশ্বকাপের ২২তম আসর। তার আগে ফিরে তাকিয়ে ১৯৯০ বিশ্বকাপের গল্প শোনা যাক।
এরশাদের যে বছর পতন হলো, সেই ১৯৯০ সালে ইতালিতে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপের ১৮তম আসর।
ইউরোপের ১৪টি এবং আমেরিকা মহাদেশের ৬টি দল এতে অংশ নেয়, সঙ্গে ছিল মিসর, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ক্যামেরুন। শেষের দলটি জগৎকে চমকে দেয় প্রথম ম্যাচেই আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে। ৪০ বছরের ‘প্রবীণ’ রজার মিলা ছিলেন আফ্রিকান ‘অর্কেস্ট্রা’র প্রথম ‘ড্রাম’।
কলম্বিয়ার বিপক্ষে গোল দেওয়ার পর কর্নারের পতাকার সামনে রজার মিলা বিখ্যাত সেই নাচ বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ছবি। তবে আগের আসরের দারুণ এক প্রদর্শনীর পর ১৯৯০ বিশ্বকাপ ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে ম্যাড়মেড়ে আসরগুলোর একটি। এই বিশ্বকাপে ম্যাচপ্রতি সর্বনিম্ন (২.২ গোল) গোলের রেকর্ড এখনো অক্ষত।
ইতালি আয়োজিত সেই বিশ্বকাপে এতটাই রক্ষণাত্মক খেলা হয় যে ওই টুর্নামেন্টের দুই বছর পর ফিফা গোলসংখ্যা বাড়াতে গোলকিপারকে ব্যাকপাস দেওয়া নিষিদ্ধ করে। ড্র নয়, জয় তুলে নেওয়াকে উৎসাহিত করতে বিজয়ী দলকে ২-এর বদলে ৩ পয়েন্ট দেওয়ার নিয়ম করা হয়। ফাউল এবং হিংসাত্মক খেলা বেড়ে গিয়েছিল। গোলের বদলে কোনোভাবেই গোল হজম না করার চেষ্টা এতটাই বেড়েছিল যে সেবারই প্রথম খেলা শুরুর আগে ফিফা ফেয়ার প্লে ব্যানার নিয়ে স্বেচ্ছাসেবকেরা মাঠে প্রবেশ করেন।
আগের আসরে ‘ঈশ্বর’ বনে যাওয়া ম্যারাডোনা কুমড়ার মতো ফুলে ওঠা পা নিয়ে খেলেন একের পর এক ম্যাচ, আর আর্জেন্টিনা খেলে চূড়ান্ত ‘অ্যান্টি ফুটবল’। ছয় খেলায় মাত্র ৫ গোল দেয় দলটি। গ্রুপে তৃতীয় হয়ে কোনোমতে পরের রাউন্ডে যায়, সেখানে ভাগ্য এবং ম্যারাডোনার জাদুতে ব্রাজিলকে হারায় আর্জেন্টিনা। পরের দুই রাউন্ডে আর্জেন্টিনা গোলশূন্য ড্র করে উতরে যায় গয়কোচিয়া নামের এক অদ্ভুত গোলকিপারের কারণে। অথচ গয়কোচিয়ার বিশ্বকাপে খেলার কোনো কারণই ছিল না।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ম্যাচে আর্জেন্টিনার ১ নম্বর গোলকিপার নেরি পম্পিডু পা ভেঙে ফেলেন। আর দলের দ্বিতীয় গোলকিপার হিসেবে লুইস ইসলাসের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়েছিল আর্জেন্টিনার কোচ কার্লোস বিলার্দো। আর তাই গয়কোচিয়াকে সুযোগ দেন বিলার্দো। শেষতক ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির মতো লম্বা হাতের ‘সেইন্ট গয়কো’ সে টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনার নয়নমণিতে পরিণত হন।
কোয়ার্টার আর সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনাকে উতরে ফাইনালে তোলেন গয়কোচিয়া। আর্জেন্টিনা এই দুই ম্যাচে গোল করতে পারেনি। কিন্তু লোকে সেই স্মৃতি ভুলে গিয়েছিল গয়কোচিয়ার বিশ্বস্ত দুটি হাতের মোহে পড়ে।
তবে অনেকেই বলেন, সেবার বিশ্বকাপের ফাইনাল ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে, সবচেয়ে রুক্ষ, গা জোয়ারি ম্যাচ ছিল। আগেরবারের দুই ফাইনালিস্ট আবার মুখোমুখি হয়, শোধ নেয় পশ্চিম জার্মানি। সে জন্য তারা ধন্যবাদ জানাতে পারে উরুগুয়ের রেফারি এদগার্দো কোডেসালকে। সেই রেফারি, যার পেনাল্টির সিদ্ধান্তে উত্তাল হয়েছিলেন বাংলাদেশের আর্জেন্টিনা সমর্থকেরাও!
বিশ্বকাপ শুরু হলো:
মেক্সিকোর পর ইতালি দ্বিতীয় দেশ হিসেবে একাধিকবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পায়। ইতালি প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজন করে ১৯৩৪ সালে, আর সেবারই একমাত্র বিশ্বকাপ খেলা মিসর এবার আবারও খেলার সুযোগ পায়। সেই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বর্ণময় দল ক্যামেরুন ছাড়া মিসরই ছিল একমাত্র আফ্রিকান দল। রজার মিলার ক্যামেরুন রেফারির কল্যাণে ব্রিটিশদের কাছে হেরে বিদায় নিলেও পরের টুর্নামেন্টে থেকে আফ্রিকান দলের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।
বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে বয়স চুরি খেলোয়াড় মাঠে নামানোয় নিষিদ্ধ হওয়া মেক্সিকো বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারেনি। মেক্সিকোর সেই কেলেঙ্কারিতে এমনও হয়েছিল যে যমজ ভাইদের একজনের বয়স অন্যজনের চেয়ে দুই বছর কম দেখানো হয়েছিল। সুইডেনে সে বছর গোথিয়া কাপ নামে অনূর্ধ্ব-১৪ এক বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বিস্ময়করভাবে জেতে বাংলাদেশে। ফাইনালে ব্রাজিলকে হারায় ৬-০ গোলে। সেই ম্যাচেও বয়স চুরি করে খেলোয়াড় নামানোয় বাংলাদেশের সাফল্যেও সমালোচনা করেছিল দেশবাসী।
অন্যদিকে চিলির নিষিদ্ধ হওয়াটা একটু অন্য রকম। বাছাইপর্বে ব্রাজিলের সঙ্গে জিততে হবেই এমন খেলায় চিলি ১-০ গোলে পিছিয়ে ছিল। ম্যাচের ৬৯ মিনিটে মাঠে একটা পটকা ফোটে, এরপর দেখা যায় চিলির গোলরক্ষক রবার্তো রোহাস মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছেন, মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। চিলির খেলোয়াড়েরা খেলা চালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান।
মনে হচ্ছিল, এর ফলে ব্রাজিল শাস্তি পাবে এবং খেলায় চিলিকে জয়ীও ঘোষণা করা হতে পারে। কিন্তু ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পটকাটা ফুটেছিল রোহোর কয়েক গজ সামনে। শুধু তা-ই না, নিজের পকেটে লুকিয়ে রাখা একটা ব্লেড দিয়ে রোহো নিজের কপাল কেটে লুটিয়ে পড়েছিলেন। আরও জানা যায়, কোচ এবং অধিনায়ক এই অভিনয়ের পরিকল্পনা জানতেন। এসব প্রমাণ পাওয়ার পর চিলিকে নিষিদ্ধ করা হয়, রোহোস আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হন।
মেক্সিকো আর চিলি ছাড়াও সে টুর্নামেন্টে ছিল না ফ্রান্স। প্লাতিনিদের যুগাবসনের পর সে সময়টা ফরাসি ফুটবলের জন্য ছিল অনুর্বর। যেমনটা কমিউনিজমের পতনের পর হয় পুরো পূর্ব ইউরোপে। সোভিয়েতদের জন্য শেষ বিশ্বকাপ ছিলই, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ডের মতো দলগুলোও প্রান্তিক দলে পরিণত হয়।
অবশ্য মনে হচ্ছিল সেবারের বিশ্বকাপটা অবশেষে নেদারল্যান্ডসের হতে পারে। বছর দুই আগে দারুণভাবে তারা ইউরোপসেরার টুর্নামেন্ট জেতে। কিন্তু মিসরের সঙ্গে ড্রয়ে শুরু করে দুই ব্রিটিশ দল ইংল্যান্ড এবং রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে কোনোমতে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া দলটি পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নেয়।
আরেক ফেবারিট ব্রাজিলেরও একই পরিণতি হয়, তবে ভিন্নভাবে। গ্রুপ পর্যায়ে সুইডেন, কোস্টারিকা আর স্কটল্যান্ডকে হারায়, কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনার সঙ্গে হেরে যায়। পুরো খেলায় ব্রাজিল আক্রমণ করেছে, বেশ কয়েকবার বল বারে লাগিয়েও গোল পায়নি। কিন্তু ৮১ মিনিটের মাথায় ওপরে উঠে ব্রাজিলের ডিফেন্স চিরে ম্যারাডোনা এক পাস দেন, যা থেকে ক্যানিজিয়া ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন।
এই গোলের জন্য ব্রাজিলের ব্রাংকোকে দায়ী করা হয়, যদিও তাঁর দাবিটা খুব অদ্ভুত। খেলা চলাকালে আর্জেন্টিনার ফিজিও মিগুয়েল ডি লরেনজোনোর দেওয়া পানি পান করে ব্রাংকো নাকি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন!
তাঁর এই কথাকে বেশির ভাগ মানুষ বাজে অজুহাত হিসেবে দেখলেও ১৫ বছর পর ম্যারাডোনা এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন, সেদিন ব্রাজিলিয়ানদের জন্য টাচলাইনে কিছু পানির বোতলে ঘুমের ওষুধ রোইপনোল মেশানো হয়েছিল। ব্রাংকো সেই বোতলগুলোর একটা থেকে পানি পান করেন এবং খেলার মাঝখানেই ম্যারাডোনা তা বুঝতে পারেন। কারণ, ফ্রি কিকের জন্য বিখ্যাত এই ব্রাজিলিয়ান সেদিন শট নিতে গিয়েও টলে পড়ছিলেন। আর্জেন্টিনার কোচ বিলার্দো ব্যাপারটা পুরোপুরি স্বীকার না করলেও সংবাদমাধ্যেমকে জানান যে সেদিন ‘কিছু একটা’ ঘটেছিল। লজ্জার বিশ্বকাপে ব্রাংকোর এই ঘটনাকে অনেকে ‘হোলি ওয়াটার’ স্ক্যান্ডাল নামে আখ্যা দেন।
স্ক্যান্ডালময় এই বিশ্বকাপের আনন্দ-হিল্লোল ছিল ক্যামেরুন। শুরুর দিনেই আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে টেলিভিশনে রেকর্ডসংখ্যক দর্শকের এই আসরে বোমার মতো শুরু করেছিল ক্যামেরুন। অবশ্য দুটি লাল কার্ড সেই দারুণ বিজয়কে কিছুটা কলুষিতও করে।
ক্যামেরুনের ধারাটাই এই! নানা জাত আর বিবাদে বিভক্ত হয়েও সমৃদ্ধ দেশ। একদিকে ফরাসি ভাষাভাষী বনাম ইংরেজ ভাষাভাষী। খ্রিষ্টান, মুসলিম এবং স্থানীয় ধর্মের অনুসারীরা। গৃহযুদ্ধ। দাসী মায়ের মুসলিম সন্তান আহমেদ আহিদজোর নেতৃত্বে ফরাসিদের থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর অন্যান্য অনেক কিছুর পাশাপাশি ফুটবলেও দেশটি নিজেদের সক্ষমতা দেখায়।
স্বাধীন এই দেশেও ফরাসি ভাষাভাষীরা অন্যদের চেয়ে বেশি সুবিধা পেত নিজের আর্থিক অবস্থা অনেক ভালো থাকায়, আর সাবেক কলোনিয়াল প্রভুদের লুটপাট তো ছিলই। এত কিছুর পরও ক্যামেরুনের ক্লাবগুলো আফ্রিকান প্রতিযোগিতাগুলোয় সাফল্য পাওয়া শুরু করল সত্তরের দশকের শেষ দিকে। থিয়োফিল আবেগা আর রজার মিলারের মতো খেলোয়াড়েরা ইউরোপের ক্লাবগুলোতেও সুনাম অর্জন করেন।
আর্জেন্টিনা আর রোমানিয়াকে হারানোর পর গ্রুপ পর্যায়ে বাদ পড়া সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ৪-০ গোলে হারে ক্যামেরুন। প্যাট্রিক লুমুম্বার মহাদেশের ছেলেরা যেন লেনিনের দেশের ইতিহাসে সর্বশেষ বিশ্বকাপের ম্যাচে বিপক্ষের সামনে শ্রদ্ধায় নুয়ে গেল। কিংবা আদতে তা হয়তো ক্যামেরুনের সোভিয়েত কোচ ভ্যালেরি নেপোমনিয়াস্কচির খেলাটা নিয়ে আগ্রহের অভাব।
সে যা-ই হোক, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় পর্বে ওঠা ক্যামেরুন মুখোমুখি হয় ভালদেরামা, হিগুইতার কলম্বিয়ার। একদিকে আফ্রিকান উদ্দাম আর অন্যদিকে লাতিন আমেরিকার মেধাবী কিন্তু পাগলাটে কিছু খেলোয়াড়। বিশ্বকাপের ইতিহাসেই অত বর্ণিল গ্যালারি আর ভিন্ন ধাচের রং দেখা গিয়েছে কি না সন্দেহ!
রেনে হিগুইতা ‘স্করপিয়ন কিকে’ গোল ঠেকিয়ে বিখ্যাত হওয়া, গোলবার ছেড়ে সামনে গোলের নেশায় এগিয়ে এসে নন্দিত ও নিন্দিত, লম্বা চুলের এই গোলকিপার স্মম্ভিত হয়ে দেখেন বুড়ো ঘোড়া রজার মিলার বল নিয়ে পুরো অর্ধ দৌড়ে এসে গোল দেন ফাঁকা পোস্ট পেয়ে।
এরপর কর্নারের পতাকার নিচে সে কী নাচ! আফ্রিকার দ্রিম দ্রিম তালে, বিপুল হর্ষে।
তবে সেই নাচ থেমে যায়, থামিয়ে দেওয়া হয়, জুলাইয়ের এক তারিখে নেপলসের স্তাদিও সান পাওলোতে। খেলার ২৬ মিনিটে ধারার বিপরীতে ইংল্যান্ডের ডেভিড প্লাট একটা গোল পেলেও ৬১ আর ৬৫ মিনিটে দুই গোল দিয়ে এগিয়ে যায় ক্যামেরুন। হতোদ্যম ইংরেজ প্রভুদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন রেফারি কোডেসাল! সেই কুখ্যাত কোডেসাল, রেফারিজ কমিটির প্রভাবশালী সদস্য হাভিয়ের আরিগার জামাতা কোডেসাল। একটা পেনাল্টিতে ইংল্যান্ড সমতা ফেরায় আর আরেকটি থেকে অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচটাই জিতে নেয়।
ইংরেজরা সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে হারে পশ্চিম জার্মানির কাছে। ফর্মের তুঙ্গে থাকা ম্যাথিউস, ক্লিন্সম্যান আর ফোলারদের দলকে সেদিন ১২০ মিনিটের খেলায় জিততে না দিলেও আফ্রিকান অভিশাপ থেকে রেহাই পায়নি ইংলিশরা।
ইতালিয়ানরাও নিজেদের অভিশপ্ত ভাবতে পারে। যদিও বেশির ভাগের মতে, দোষটা ছিল কোচ আজেগলিও ভিসিনির। অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক এই কোচ ইতালির ইতিহাসে অন্যতম সেরা সৃষ্টিশীল খেলোয়াড় রবার্তো বাজ্জিওকে উপেক্ষা করার ফল পেলেন আর্জেন্টিনার সঙ্গে সেমিফাইনালে হেরে। এমনকি সেই টুর্নামেন্টে দারুণ খেলা, সর্বোচ্চ ছয়টি গোল দেওয়া সালভাতর স্কিলাচিও স্বাগতিকদের বাঁচাতে পারেননি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে উপেক্ষিত হলেও জুভেন্টাসে খেলার বদৌলতেই অবশেষে জাতীয় দলের ডাক পান। জিতে নেন গোল্ডেন বুট আর বল। যদিও দল হয় তৃতীয়।
সেমিফাইনালটা নেপলসে হওয়ায় এই অদ্ভুত, অস্থির বিশ্বকাপে আরেক ধরনের টেনশন যোগ হয়। দক্ষিণের শহর নেপলস, উত্তরের সমৃদ্ধির বিপরীতে উপেক্ষিত, গরিবদের শহর নেপলস। সেই শহরে আবির্ভূত হয়েছিলেন আর্জেন্টাইন ‘ঈশ্বর’ ম্যারাডোনা। প্রিয় নেপলসবাসীর একটি অংশের কাছে দুয়োধ্বনি শুনেও প্রায় খোঁড়া হয়ে খেলা ম্যারাডোনা ও তাঁর সারথি গয়কোচিয়া সেদিন ইতালিকে বিদায় করে দেন। সম্ভবত নিজের পতনও ডেকে আনেন। এর পর থেকে ইতালির অন্তত একটা অংশে তিনি পরিণত হন গণশত্রুতে।
আর সেই পতনের শেষটা শুরু হয় যখন গয়কোচিয়া আন্দ্রেস ব্রেহমার নেওয়া ৮৫ মিনিটের পেনাল্টিটি ফেরাতে পারেননি। রোমে সেদিন নক্ষত্রের পতনের আভাসে অক্ষম ক্রোধে ফুঁসে উঠেছিল বহুদূরে, নেপলসবাসীর মতোই উপেক্ষিত, গ্লানিময় বাংলাদেশের মানুষেরা।
জানা যায়, এক কিশোরীও নাকি আত্মহত্যা করেছিলেন।