নেইমার, রোনালদো, কাফুরা ছিলেন না পেলের শেষবিদায়ে, সমালোচনার ঝড়
সান্তোসের মাঠ ভিলা বেলমিরোর পাশেই নেকরোপোল একিউমেনিকাতে চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে গেছেন ফুটবল কিংবদন্তি পেলে। ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের সেরা তারকার চিরবিদায়ে তাঁর দেশ ব্রাজিলের সব বড় বড় তারকা উপস্থিত থাকবেন, তাঁরা শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবেন—প্রত্যাশা করা হয়েছিল এমনটিই। কিন্তু বাস্তবে সেটি হয়নি। ব্রাজিলের নামকরা অনেকই পেলের শেষকৃত্যে যোগ দেননি। এটি নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।
সোমবারই সান্তোসের মাঠ ভিলা বেলমিরোতে নিয়ে আসা হয় পেলের কফিন। সেখান থেকেই মঙ্গলবার শুরু হয় তাঁর শেষযাত্রা। সান্তোস শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরিয়ে তাঁর নিথর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় নেকরোপোল একিউমেনিকা কবরখানায়। সেখানেই নবম তলায় চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন তিনি। শেষযাত্রায় সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা পেলেও ব্রাজিল দলে তাঁর উত্তরসূরিদের দেখা যায়নি সেখানে।
পেলের শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন তাঁর বেশ কয়েকজন সতীর্থ। ১৯৭০ সালে বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দলের ক্লোদোয়ালদো তাভারেজ দি সান্তানা ছিলেন তাদের অন্যতম। তোস্তাও, জার্জিনহো, রবার্তো রিভেলিনো, অলিভিয়েরা নুনেস ও উইলসন পিয়াজ্জাদের অনুপস্থিতি সমালোচনার ঝড় তুলেছে। সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে এবারের কাতার বিশ্বকাপ খেলা ব্রাজিলের কোনো খেলোয়াড়ই পেলের শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন না। অনুপস্থিত ছিলেন ২০০২ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্যরাও। কাফু, রোনালদো নাজারিওদের মতো তারকারা কেন ছিলেন না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ব্রাজিলীয় গণমাধ্যম। ১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন কেবল মাউরো সিলভা।
ব্রাজিলের সাবেক ফুটবলার নেতো ব্যাপারটি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, ‘পেলে একজন কিংবদন্তি। তাঁর মর্যাদা অনেকটা নেলসন ম্যান্ডেলা কিংবা মহাত্মা গান্ধীর সমপর্যায়ের। ব্রাজিলিয়ানরা প্রমাণ করল, তারা তাদের আইকনকে প্রাপ্য মর্যাদা দিতে জানে না। বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার, যাঁরা এখনো জীবিত, তাঁরা যদি পেলের শেষকৃত্যে না যোগ দেন, তখন আর কী বলা যায়!’
পেলের ক্লাব সান্তোসের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব করিন্থিয়ানসে ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন নেতো। তিনি সোমবার থেকেই পেলের শেষকৃত্যের সব আনুষ্ঠানিকতায় যুক্ত ছিলেন। পেলের শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছিলেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা।
পেলের সতীর্থ যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই অসুস্থ। তাই ব্রাজিলের বর্তমান দলের খেলোয়াড়দের পাশাপাশি ১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপজয়ী দলের খেলোয়াড়েরা তাঁর শেষকৃত্যে যোগ দেবেন—এমনটাই ছিল প্রত্যাশা। কিন্তু তাঁরা কেউই বলতে গেলে আসেননি।
নেইমার, রোনালদো নাজারিও, রিভালদো, কাফুদের পাশাপাশি কাকার অনুপস্থিতি সবার চোখে লেগেছে। ব্রাজিলের কলামিস্ট ওয়াল্টার কাসাগ্রান্দে জুনিয়র পেলের শেষকৃত্যে খোঁজ করেছেন কাকাকে, ‘কাকা কোথায়? তাঁর কি এখানে আসা উচিত ছিল না?’
প্রথমে খবর বেরিয়েছিল পেলেকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে সান্তোসে যাবেন নেইমার। পেলের মতোই নেইমার সান্তোস থেকে উঠে এসে বড় তারকা হয়েছেন। ২০১৭ সালে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলারও হয়েছেন। তাঁর পেলের শেষকৃত্যে না থাকার কারণ খুঁজছে ব্রাজিলীয় মিডিয়া। তাঁর বাবা অবশ্য বলেছেন, নেইমার তাঁকে প্রতিনিধিত্ব করতে বলেছেন এই অনুষ্ঠানে।
ব্রাজিলিয়ান গণমাধ্যম তারকাদের পেলের শেষকৃত্যে যোগ না দেওয়ার একটা কারণও খুঁজে পেয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পেলে ব্রাজিলের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। সেটি করতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে ব্রাজিলীয় ফুটবলারদের পারফরম্যান্সের সমালোচনা করেছেন খোলাখুলিভাবে। তারকা ফুটবলাররা সে কথাই মনে রেখে আসেননি কি না, সে প্রশ্নও উঠছে। কলামিস্ট কাসাগ্রান্দে তো সরাসরিই বলেছেন ব্রাজিলের অনেক তারকা ফুটবলার প্রকাশ্যে দেখা দিতে চান না সহজে। কারণ, এ জন্য তাঁরা টাকা দাবি করেন। এই তারকারা যদি পেলের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানকেও নিজেদের পেশাদারি আচারের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন, সেটি দুর্ভাগ্যজনক।
নেতো বলেছেন, ‘তারকারা ইনস্টাগ্রাম বা টুইটারে পেলের একটা ছবি দিয়ে শুকনো কিছু কথা লিখেই দায়িত্ব সেরেছেন। পেলের শেষকৃত্যে তাঁদের অনুপস্থিতি ব্রাজিলের সাধারণ মানুষ অনেক দিন মনে রাখবে। পেলের মতো একজন কিংবদন্তিকে শ্রদ্ধা জানাতে তাঁরা যদি আসতেন, নিজেদের ছুটি থেকে দুই দিন ব্যয় করতেন, সেটি কি খুব বাড়াবাড়ি ধরনের চাওয়া হতো?’