বিশ্বকাপে খেলতে না পেরে ‘তিন দিন কেঁদেছেন’ লো সেলসো
পানামার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে বেঞ্চে ছিলেন। আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি তাঁকে মাঠে নামাননি। কিন্তু কুরাসাওয়ের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা দলের একাদশের হয়ে জিওভান্নি লো সেলসোকে মাঠে নামান স্কালোনি। এর মধ্য দিয়ে গত বছর নভেম্বরে সেই চোটের পর আবারও আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের একাদশে ফিরলেন লো সেলসো।
কুরাসাওয়ের বিপক্ষে খেলেছেনও দুর্দান্ত। মেসির সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া যে অসাধারণ, সেটাও নতুন করে বোঝা গেল আজ কুরাসাওয়ের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে। আর্জেন্টিনার ৭-০ গোলের বড় জয়ে লিওনেল মেসিকে দিয়ে দুটো গোল করিয়েছেন টটেনহাম থেকে ভিয়ারিয়ালে ধারে আসা এই মিডফিল্ডার।
মেসির ১০০তম গোলটি এসেছে লো সেলসোর পাস থেকেই। আর্জেন্টিনা অধিনায়কের হ্যাটট্রিক-গোলের উৎসও ছিল তাঁর দূরপাল্লার লম্বা মাপা পাস। ৬৭ মিনিটে তাঁকে তুলে নিয়ে আনহেল দি মারিয়াকে বদলি নামান স্কালোনি।
পুরো সময় দুর্দান্ত খেলেও লো সেলসোর হয়তো মন ভরেনি। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘ক্লারিন’ জানিয়েছে, জাতীয় দলে ফেরার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জিওভান্নি লো সেলসো লিখেছে, ‘সেরাটা এখনো বাকি।’
তবে লো সেলসো ফেরাটা যে উপভোগ করেছেন, সেটি বোঝা গেছে তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে। মেসিকে অভিনন্দন জানানোর ছবি পোস্ট করে লো সেলসো লিখেছেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জার্সি পরার আনন্দ আবারও উপভোগ করছি। এ মুহূর্তের অপেক্ষাতেই ছিলাম। সতীর্থদের সঙ্গে উপভোগ করেছি। ১০০ গোল পেরিয়ে যাওয়ার নতুন রেকর্ডের জন্য লিওনেল মেসিকে অভিনন্দন।’
গত বছর নভেম্বরের শুরুতে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে পায়ে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন লো সেলসো। কয়েক দিন পর নিশ্চিত হয়, এ চোটের কারণেই কাতার বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন না। তবে লো সেলসোকে ছাড়াই কাতারে বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা।
গত ডিসেম্বরে শেষ হওয়া সেই বিশ্বকাপের আগে জিওভান্নি লো সেলসো ছিলেন আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডে ‘অটোমেটিক চয়েস’। দাপট বিস্তার ও মেসির সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ার কারণে বিশ্বকাপে লো সেলসোকে অপরিহার্যই ভাবা হয়েছিল। সৌদি আরবের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার হারের ম্যাচে তাঁর অভাবটা আরও বেশি টের পাওয়া গেছে। অবশ্য পরে ম্যাক অ্যালিস্টার-এনজো ফার্নান্দেজরা ঘাটতিটুকু পুষিয়ে দিয়েছেন।
তবু লো সেলসোর বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার যন্ত্রণা কি উপশম হয়েছিল? আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আনন্দিত হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে লো সেলসোর বাদ পড়ার যন্ত্রণার কোনো সান্ত্বনা নেই। বিশ্বকাপে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা যে সব ফুটবলারেরই স্বপ্ন। কাতারে সেই স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার পর কী করেছিলেন, সেটাই কুরাসাওয়ের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে জানিয়েছেন লো সেলসো, ‘বিশ্বকাপে খেলতে পারব না জানার পর তিন-চার দিন বাথরুমে শুধুই কেঁদেছি।’
লো সেলসো কেঁদেছেন আরেকটি সময়ে। বিশ্বকাপের আগে প্রীতি ম্যাচে তাঁর সুস্থতা কামনা ব্যানারসহ মাঠে নেমেছিল আর্জেন্টিনা দল। সেই স্মৃতিও স্মরণ করলেন গত বছর আগস্টে টটেনহাম থেকে দ্বিতীয় দফা ধারে ভিয়ারিয়ালে যোগ দেওয়া লো সেলসো, ‘আমি আরও একবার কেঁদেছি, বিশ্বকাপের আগে প্রীতি ম্যাচে যখন ওরা (জাতীয় দল) আমার জন্য ব্যানারসহ মাঠে নেমেছিল।’
তবে বাদ পড়ার পর শুধু কষ্টই পাননি লো সেলসো, আনন্দের উপলক্ষও এসেছে তাঁর জীবনে, ‘(বাদ পড়ার) কিছুদিন পর আমার মেয়ে জন্ম নেয়। এরপর দলের সঙ্গে থাকতে চেয়েছি এবং সবকিছু উপভোগ করতে পেরেছি। মেয়ের মুখ দেখার পর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দ উপভোগ করেছি। জীবনই আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছিল, এটা অবিস্মরণীয় স্মৃতি।’
দলের সঙ্গে থাকতে না পারুন, বিশ্বকাপ জয়ের স্মৃতি যে কারও জন্যই অবিস্মরণীয়। সে জন্যই হয়তো লো সেলসো বলতে পেরেছেন সত্য কথাটি, ‘জীবনই সবকিছু দেয়, আবার জীবনই সব ফিরিয়ে নেয়।’