ব্রাজিলের ‘নতুন রোনালদো’র স্বপ্ন নেইমারের সঙ্গে খেলা
রিয়াল মাদ্রিদ তাঁর পিছু ছুটছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে গুঞ্জন, তাঁকে কেনার দৌড়ে বার্সেলোনাই এগিয়ে। ভিতর রকির নিজের ইচ্ছাও বার্সায় যোগ দেওয়ার। বাকিটা সময় হলেই বোঝা যাবে। আপাতত ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে ‘হট কেক’ হিসেবে সময় কাটছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে ‘নতুন রোনালদো’খ্যাত রকির।
আতলেতিকো পারানায়েনসের এই ফরোয়ার্ড স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এএস’কে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে নিজের আদর্শ হিসেবে তিনজন তারকার কথা বলেছেন ১৮ বছর বয়সী রকি—নেইমার, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও আর্লিং হলান্ড।
গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আমেরিকার অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রাজিলকে চ্যাম্পিয়ন করার পথে ৬ গোল করে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন রকি। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে রকির নামটা চাউর হতে থাকে এরপরই।
যদিও স্পেনে তাঁকে অনেকেই চেনেন না, স্প্যানিশ ফুটবল সমর্থকদের সামনে নিজেকে কীভাবে পরিচয় করিয়ে দেবেন, রকি এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘ভিতর লড়াকু খেলোয়াড়, যে মাঠে তিল পরিমাণ ছাড় দেয় না। মাঠে নিজের জীবন দিয়ে দেবে। দ্রুতগামী ও ফিনিশিংয়ে ভালো এবং মাঠে সে যত বেশি সম্ভব ব্যক্তিগত লড়াই জিততে চায়।’
রকির ক্লাব আতলেতিকো পারানায়েনস ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে বেশ ভালো মানের ফুটবলার সরবরাহ করে। নিউক্যাসল ইউনাইটেডের ব্রুনো গিমারেজ ও আতলেতিকো মাদ্রিদের রেনান লোদি এই ক্লাব থেকেই উঠে এসেছেন। রকিও সে পথেই হাঁটছেন। তবে উঠে আসার পথে প্রায় সবারই আদর্শ থাকে।
কোনো একজন তারকা ফুটবলারকে আদর্শ মেনে এগোন অনেক তরুণ ফুটবলার। রকিরও এমন আদর্শ আছে তবে সেটি একজন নয়, ‘ব্রাজিলিয়ান এবং আমাদের সংস্কৃতির সন্তান হওয়ায় নেইমার (আদর্শ)। ক্রিস্টিয়ানোকে পছন্দ করি তার পরিশ্রমের জন্য এবং হলান্ড। সে জন্মগত গোলস্কোরার।’
ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে রকির এখনো অভিষেক ঘটেনি। বাংলাদেশ সময় ২৫ মার্চ ভোরে মরক্কোর বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল। এ ম্যাচের জন্য ব্রাজিলের জাতীয় দলে প্রথমবারের মতো ডাক পেয়েছেন রকি। চোটের কারণে নেইমার মাঠের বাইরে থাকায় মরক্কো ম্যাচের স্কোয়াডে তাঁকে রাখেননি ব্রাজিলের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ রামন মেনেজেস। অর্থাৎ, মরক্কোর বিপক্ষে রকি মাঠে নামার সুযোগ পেলেও নিজের আদর্শ নেইমারের সঙ্গে খেলতে পারবেন না।
কিন্তু ভবিষ্যতে তো পারবেন। তখন রকির কেমন লাগবে—উত্তরে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘খুব ভালো লাগবে। তিনি আমাদের জাতীয় দলের খেলোয়াড় ও বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার পর থেকে এখন পিএসজিতেও নিজের যোগ্যতা দেখাচ্ছেন। তার পাশে খেলাটা স্বপ্ন পূরণের মতো, গর্ব লাগবে।’
সান্তোস থেকে ২০১৩ সালে বার্সায় যোগ দেন নেইমার। তার আগেই ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে তারকা ইমেজ পেয়ে গিয়েছিলেন। ভিতর রকি নেইমারের বার্সায় যোগ দেওয়ার দুই বছর পর আমেরিকা মিনেইরোর বয়সভিত্তিক দলে যোগ দেন। তখন তাঁর বয়স ১০ বছর।
নেইমার তারকা হয়ে ইউরোপে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আরও দুজন তরুণ তারকা পেয়েছে ব্রাজিল—ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও রদ্রিগো। দুজনেই রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়। রকি যখন ক্রুজেইরোয় বেড়ে উঠছিলেন ভিনিসিয়ুস তখন ফ্লামেঙ্গোয় এবং রদ্রিগো সান্তোসে। খুব কম বয়সে দুজনেই ব্রাজিল ছেড়েছেন। রকিও তাঁদের অবশ্যই চেনেন, তবে এখনো কথা হয়নি, ‘এখন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হয়নি।’
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমটির ভাষ্যমতে, স্পেন, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও ইতালিয়ান ক্লাব ফুটবলের নজরে পড়েছেন রকি। নিজের ভবিষ্যৎটা কীভাবে দেখেন, এ প্রশ্নের উত্তরে রকি জানালেন, আগামীকাল নয় তিনি শুধু বর্তমান নিয়েই ভাবেন, ‘আমি শুধু বর্তমান নিয়েই ভাবি। ভবিষ্যৎ নয়। আগামীকালের চেয়ে আজকের দিনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর আমার গন্তব্য তো সৃষ্টিকর্তার হাতে। বর্তমানের কাজের ওপর আমার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।’
রকি জানিয়েছেন, চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে চান। এটা ‘সব ফুটবলারেরই স্বপ্ন’ বলে মনে করেন রকি। চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে এখন ‘নিজের কাজ করে যেতে চান’ রকি। আর ১৮ বছর বয়সেই ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের ভবিষ্যৎ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার চাপটা সামলান কীভাবে—এ প্রশ্নেও রকির উত্তর বেশ পরিণত, ‘এসব নিয়ে ভাবি না। এসব আমার এজেন্ট ও পরিবারের ওপর। শুধু ফুটবলেই মনোযোগ দিই, কারণ এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’