হলান্ডের গোলটি ‘মানুষের জন্য স্বাভাবিক নয়’

গোলের পর হলান্ডের উদ্‌যাপনএএফপি

গোলটি দেখে জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচকে মনে পড়তে পারে। সুইডিশ কিংবদন্তি তখন লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সিতে। ২০১৮ সালে টরন্টোর বিপক্ষে ম্যাচে অনেকটাই তায়কোয়ান্দোর কসরত দেখিয়ে গোলটি করেছিলেন ইব্রা। শূন্যে ভাসতে থাকা বলটিকে লাফিয়ে ডান পায়ের পেছনের অংশ দিয়ে করা ভলিতে জালে পাঠিয়েছিলেন। পুরোপুরি ব্যাকহিল ভলি না হলেও দেখতে তেমনই ছিল। সেটি ছিল ক্যারিয়ারে তাঁর ৫০০তম গোল। ধারাভাষ্যকার বলেছিলেন, ‘শুধু ইব্রার পক্ষেই এমন গোল করা সম্ভব।’

আরও পড়ুন

আর্লিং হলান্ড তখন নরওয়ের ক্লাব মোলদের খেলোয়াড়। তারকা হয়ে ওঠেননি। দুই বছর আগে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে নিজেকে ধীরে ধীরে অতিমানবীয় পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন এই স্ট্রাইকার। যেমন ধরুন, চ্যাম্পিয়নস লিগে গতকাল রাতে স্পার্তা প্রাগের বিপক্ষে সিটির ৫–০ গোলের জয়ে তাঁর করা প্রথম গোলটি।

জানি না, সে গোলটি কীভাবে করল। একজন মানুষের জন্য আমি বলব না (স্বাভাবিক না)।
পেপ গার্দিওলা, ম্যানচেস্টার সিটি কোচ

ডান প্রান্ত থেকে সাভিনিওর ক্রস পড়েছিল বক্সে। গোল করার জন্য হলান্ড সুবিধাজনক পজিশনে ছিলেন না। কিন্তু বুদ্ধিমত্তা ও অ্যাথলেটিসিজম থাকলে অসুবিধাও অনেক সময় সুবিধা হয়ে ওঠে। বলটি শূন্যে থাকতে হলান্ড ইব্রার মতোই একটু লাফিয়ে পেছনে ঘুরে পায়ের পেছনের অংশ দিয়ে ভলি করেন, ফুটবলীয় ভাষায় যা ব্যাকহিল ভলি।

শূন্যে লাফিয়ে ব্যাকহিলে গোলটি করেন হলান্ড
এএফপি

প্রাগের গোলকিপার পিটার ভিনদাল দূর অস্ত, সম্ভবত কোনো গোলকিপারের পক্ষেই আঁচ করা সম্ভব ছিল না যে ওখান থেকে ওভাবেও গোল করা সম্ভব! মজার ব্যাপার হলো, ছয় বছর আগে সেই গোল করে ইব্রা যেমন ভাবলেশহীন ছিলেন, হলান্ডও তা–ই। যেন এটাই তো স্বাভাবিক!

আরও পড়ুন

সেটা হলান্ডের জন্য হলেও গোলটির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা উঠেছিল, হলান্ড রক্ত–মাংসে গড়া মানুষ তো! ম্যাচ শেষে সিটি কোচ তাঁর স্ট্রাইকারের প্রশংসায় অত দূর যাননি। তবে এটুকু বলেছেন, হলান্ডের ওই গোল ‘একজন মানুষের জন্য স্বাভাবিক নয়।’

পরে আরও এক গোল করেন হলান্ড। চ্যাম্পিয়নস লিগে ৪২ ম্যাচে ৪৪ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ১৬তম স্থানে উঠে এলেন। তাঁকে কেন ‘গোল মেশিন’ বলা হয়, তা একটি পরিসংখ্যানেই বুঝিয়ে দেওয়া যায়। হলান্ডের সমান ৪৪ গোল করতে চেলসি কিংবদন্তি দিদিয়ের দ্রগবাকে খেলতে হয়েছে ৯২ ম্যাচ।

গার্দিওলার দল এই ম্যাচে একটি রেকর্ডও গড়েছে। ইউরোপিয়ান কাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়েছে সিটি।

ম্যাচ শেষে হলান্ডের প্রশংসা করে সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা বলেছেন, ‘জানি না, সে গোলটি কীভাবে করল। একজন মানুষের জন্য আমি বলব না (স্বাভাবিক না)। অসাধারণ এক গোল করেছে। মাত্র ১৫ থেকে ২০ বার বল ছুঁয়েই সে সাত–আটটি সুযোগ তৈরি করেছে, অবিশ্বাস্য!’ গার্দিওলা এরপর হলান্ডের আরও একটি অবিশ্বাস্য গোলের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘সে অবিশ্বাস্য এক গোল করেছে। কয়েক বছর আগে (বরুসিয়া) ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে গোলটির মতোই। জানি না, কোনটা বেশি কঠিন, তবে আমি দুটোর কথাই বলব।’

আরও পড়ুন

হলান্ডের সিটি সতীর্থ মাথেউস নুনেসও এমন গোলে বিস্মিত। ম্যাচ শেষে টিএনটি স্পোর্টসকে নুনেস বলেছেন, ‘অসাধারণ এক গোল। দেখে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গেছি। ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে প্রায় একইভাবে করা গোলটি টিভিতে দেখেছিলাম, সেটাও অসাধারণ।’ প্রাগের কোচ লার্স ফ্রিস অবশ্য সোজাসাপটাই বলেছেন, ‘কী আর বলব, সে সম্ভবত বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকার। বিশ্বমানের খেলোয়াড়। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়কে নিয়ে তারা বিশ্বের সেরা দল।’

৮১ মিনিটে হলান্ডকে তুলে নেন গার্দিওলা
এএফপি

গার্দিওলার দল এই ম্যাচে একটি রেকর্ডও গড়েছে। ইউরোপিয়ান কাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়েছে সিটি। ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের টানা ২৫ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভাঙল গার্দিওলার দল।