ইউরো শুরু হয়েছে ১৪ জুন। প্রায় তিন সপ্তাহ গড়িয়ে ছয়টি গ্রুপে ২৪ দেশের মধ্য এখন কোয়ার্টার ফাইনালে টিকে আছে ৮টি দল—জার্মানি, স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও তুরস্ক।
স্বাগতিক দেশ জার্মানি আজ স্পেনের মুখোমুখি হবে। এর আগে ২৬ বারের মুখোমুখিতে জার্মানি জিতেছে ৯ ম্যাচ, স্পেন ৮টি। ড্র হয়েছে বাকি ৯টি ম্যাচ।
আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ৯টায় সাপ্তাহিক ছুটি শুরু হওয়ার রাতে স্টুটগার্ট শহরের এই খেলা নিয়ে পত্রপত্রিকায় নানা বিশ্লেষণ এসেছে। জার্মানির ফুটবলভক্তরা সবাই এই ম্যাচ নিয়ে অধীর অপেক্ষায়।
আগেভাগেই বলা যায় দেশের মাটিতে ইউরো, আর তার কোয়ার্টার ফাইনালে যেহেতু জার্মানি–স্পেন মুখোমুখি, তাই ম্যাচটি দেখতে সর্বত্র মানুষের ঢল নামবে। হতে পারে শুক্রবারের এই রাতেই জার্মানির এবারের ইউরোয় পথচলার ইতি ঘটবে কিংবা ফিরতে পারে জার্মান ফুটবলের ঐতিহ্যও।
ম্যাচটি হবে স্টুটগার্ট শহরের এমএইচপি অ্যারেনায়। ম্যাচের আগের দিন শহরের মেয়র ফ্রাঙ্ক নোপার স্থানীয় ‘স্টুটগার্টার জাইটুং’ পত্রিকায় আশা ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘আমাদের শহরে জন্ম নেওয়া তারকা খেলোয়াড় জামাল মুসিয়ালার পছন্দের খাবার “মৌলাশলে” নিশ্চয় তার মুখে হাসি ফোটাবে।’
জানিয়ে রাখা যায়, মুসিয়ালা ২০০৩ সালে স্টুটগার্টে জন্মগ্রহণ করেন। মেয়র ফ্রাঙ্ক নোপার গতকাল জার্মান ফুটবল দলের স্পোর্টস ডিরেক্টর রুডি ভোলারের মাধ্যমে খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফদের জন্য স্টুটগার্ট অঞ্চলের বিশেষ খাবার ‘মিনি মৌলাশলে’ পাঠিয়েছেন।
স্টুটগার্ট বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় মোভেনপিক হোটেলে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের প্রতিটি কক্ষে ফুটবল–পাগল মেয়র ছোট উপহারের সঙ্গে প্রেরণামূলক কার্ড দিয়েছেন। তাতে লেখা, ‘দ্বিতীয়বার স্টুটগার্টে আপনাদের স্বাগত জানাই। হাঙ্গেরির বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জয়ে স্টুটগার্ট স্টেডিয়াম ইতিমধ্যেই জয়ের ভূমি হয়েছে। এ কারণেই আমরা নিশ্চিত, স্টুটগার্টের সম্মিলিত শক্তি স্পেনকে পরাস্ত করতে সক্ষম হবে।’
স্টুটগার্টের ফ্যানজোন মাতাতে স্থানীয় শ্লোস স্কয়ারে খেলার আগে থেকেই খ্যাতনামা স্যাক্সোফোন বাদক আন্দ্রে শ্নুরা, ফুটবল ভক্তদের উষ্ণ করতে হাজির হবেন। বার্লিন ব্রান্ডেবর্গ গেট ফ্যানজোনেও আজ ম্যাচের আগে নানা আয়োজন রাখা হয়েছে। জার্মানির সব ছোট–বড় শহরের ফ্যানজোন বা উন্মুক্ত এলাকায় ম্যাচ দেখতে ফুটবলপ্রেমীদের ঢল নামবে।
জার্মানির রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় আন্তোনিও রুডিগারকে নিয়ে জার্মানির ‘দার স্পিগেল’ পত্রিকা লিখেছে, বার্লিনে জন্ম নেওয়া রক্ষণভাগের এই খেলোয়াড় যেন একক প্রাচীর। তাঁকে ডিঙিয়ে গোল করা যেন অসাধ্য কাজ। আদতে এই কথার মধ্য দিয়ে ২৮ বছর ধরে বিভক্ত করে রাখা পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিনের মাঝে দুর্ভেদ্য বার্লিন প্রাচীরের কথা বলা হয়েছে।
রুডিগারও স্পেনের বিপক্ষে ম্যাচটি নিয়ে জার্মান জাতীয় দলকে সতর্ক করে আরও সাহসী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সাহস, আরও ঝুঁকি কিন্তু চাপের মধ্যেও শান্ত থাকতে দলীয় সহযোগীদের বলেছেন রুডিগার।
জার্মানির খেলায় ভারসাম্য নিয়ে রুডিগার দেশটির ‘কিকার’ সাময়িকীতে বলেছেন স্পেনের বিপক্ষে রক্ষণে ভুল করা চলবে না, ‘কারণ, আমরা স্পেনের দুই তরুণ ক্ষিপ্র উইঙ্গার নিকো উইলিয়ামস এবং লামিনে ইয়ামাল—এই দুই ক্ল্যাসিক্যাল খেলোয়াড়ের পাল্টা আক্রমণ শক্তি সম্পর্কে জানি।’
জার্মান তারকা টনি ক্রুস তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে জার্মান ফুটবল প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তিনিও স্পেনের বিপক্ষে খেলা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। তবে জার্মান দলে অনেক বড় কোনো তারকা নেই, নেই কোনো বিশ্বখ্যাত কোচ। কিন্তু সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় মনোবল রয়েছে। এটা অবশ্য জার্মানদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য। তাদের অতীত ফুটবল ঐতিহ্য তা–ই বলে।