ব্যালন ডি’অরে ভোটে বিজয়ীর নাম ‘ফাঁস’
ব্যাপারটা প্রায় অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর ব্যালন ডি’অর আসে আর ভোটাভুটিতে এই পুরস্কারজয়ীর নামটা ফাঁস হওয়ার গুঞ্জন কীভাবে যেন ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে বর্ষসেরার এ ট্রফি দেওয়ার কয়েক দিন আগে এ নিয়ে প্রচুর গুজব-গুঞ্জন চাউর হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পর ব্যাপারটা যেন প্রথায় পরিণত হয়েছে। এবারও ব্যতিক্রম নয়।
প্যারিসের থিয়েটার দু শাতলেতে আজ রাত বাংলাদেশ সময় একটায় শুরু হবে ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠান। ফুটবলে ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে বর্ষসেরার এ পুরস্কার সবচেয়ে মর্যাদার। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ছেলেদের ফুটবলে শীর্ষ ১০০ দেশ ও মেয়েদের ফুটবলে শীর্ষ ৫০ দেশের সংবাদকর্মীদের বিজয়ী নির্ধারণে ভোটাভুটির জন্য বাছাই করা হয়েছে। ছেলেদের ব্যালন ডি’অর জয়ে প্রতিটি দেশ থেকে ১ জন করে সংবাদকর্মীকে ভোট দেওয়ার জন্য বাছাই করা হয়। অর্থাৎ মোট ১০০ জন সংবাদকর্মীর প্যানেল। মেয়েদের ফুটবলে সেটি ৫০ জনের।
অপটা অ্যানালিস্ট জানিয়েছে, বিজয়ী নির্ধারণে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ভোট দেওয়ার কাজটি সেরে ফেলেছেন সংবাদকর্মীরা। এখন বাকি রয়েছে জমকালো মঞ্চে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের ট্রফি তুলে দেওয়া—থিয়েটার দু শাতলেতে আজ সেই আনুষ্ঠানিকতাই পালন করা হবে।
কিন্তু সেই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি তালিকা ঘুরছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘মেইল অনলাইন’ জানিয়েছে, গতকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি তালিকা ঘুরছে, সেটি ভোটের ভিত্তিতে ১২ জন ফুটবলারের ক্রম-তালিকা। সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া খেলোয়াড়টির নাম শীর্ষ—অর্থাৎ এবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী। এর আগে ‘ফ্রান্স ফুটবল’ সাময়িকী ব্যালন ডি’অরের জন্য মনোনীত ৩০ ফুটবলারের যে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করেছিল, সেখানে এই ১২ জনের নাম রয়েছে। মেইল অনলাইনের সন্দেহ, ভোটের মাধ্যমে ছেলেদের ব্যালন ডি’অর জয়ে শীর্ষ ১২ জনের এই তালিকা সম্ভবত ফাঁস হয়েছে। তবে সত্যি সত্যিই ফাঁস হয়েছে কি না, এটাই অফিশিয়াল তালিকা কি না, মেইল অনলাইন তা নিশ্চিত করতে পারেনি।
ফাঁস হওয়া এই তালিকায় দেখা যায়, সর্বোচ্চ ৬৩০ ভোট পেয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। অর্থাৎ, এই তালিকা অনুসারে ও অনেকের প্রত্যাশামতো এবার ছেলেদের বর্ষসেরার পুরস্কারটি ভিনির হাতেই উঠছে। ৫৭৬ ভোট নিয়ে ফাঁস হওয়া এই তালিকায় দ্বিতীয় ম্যানচেস্টার সিটির স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি। ৪২২ ভোট নিয়ে তৃতীয় রিয়ালের ইংল্যান্ড মিডফিল্ডার জুড বেলিংহাম। চারে ও পাঁচে যথাক্রমে কিলিয়ান এমবাপ্পে ও হ্যারি কেইন। ৩১৭ ভোট পেয়ে চারে রিয়ালের ফরাসি তারকা এবং বায়ার্নের ইংল্যান্ড স্ট্রাইকার কেইন ২০১ ভোট পেয়ে পাঁচে।
তবে তালিকাটি ভালোভাবে লক্ষ করলে প্রশ্নের জায়গাও আছে। প্রথমত, এবার ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে এগিয়ে থাকা শীর্ষ তিন ফুটবলারই জায়গা পেয়েছেন ফাঁস হওয়া তালিকার শীর্ষ তিনে। ভিনি, রদ্রি ও বেলিংহাম। ব্যাপারটি বেশ আগে থেকেই ‘ওপেন সিক্রেট।’ অর্থাৎ, কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এমন তালিকা বানিয়ে সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করেন, তবে সেটি মোটেও কঠিন কিছু নয়। কারণ, শীর্ষ তিনে কারা থাকবেন, কে এগিয়ে—এসব বেশ কিছুদিন ধরেই সংবাদমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে।
রিয়ালের হয়ে গত মৌসুমে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পথে ২৪ গোলের পাশাপাশি ১৩টি গোল বানিয়েছেন ভিনিনিয়ুস। তাঁর ৬টি গোল রিয়ালকে ১৫তম ইউরোপসেরার মুকুট জিততে দারুণ সাহায্য করেছে। সেমিফাইনাল ও ফাইনালেও গোল করেছিলেন। রদ্রি গত মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে লিগ জেতার পাশাপাশি স্পেনের হয়ে জিতেছেন ইউরোর। এই প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছিলেন এসিএল চোটে মাঠের বাইরে ছিটকে পড়া এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। বেলিংহাম রিয়ালের হয়ে গতবার অভিষেক মৌসুমে ৪২ ম্যাচে ২৩ গোলের পাশাপাশি করিয়েছেন আরও ১৩ গোল।
মেইল অনলাইন জানিয়েছে, পর্তুগিজ ভাষার এক সংবাদকর্মী, ফাঁস হওয়া এই তালিকা এক্স-এ পোস্ট করে মন্তব্য করেছেন, ‘এটা যদি সত্যি সত্যিই ব্যালন ডি’অরের ফাঁস হওয়া তালিকা হয়, তাহলে হলান্ডের ষষ্ঠ হওয়ার ব্যাখ্যা কী? ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের বিশ্বসেরা হওয়াটা প্রাপ্য।’ ১৯৫ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে সিটির নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার হলান্ড। গত মৌসুমে সিটির হয়ে লিগ জয়ের পথে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৪৫ ম্যাচে ৩৮ গোল করেন হলান্ড।
ফাঁস হওয়া তালিকাটি নিয়ে প্রশ্ন যেহেতু উঠছে, তাই ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠান পর্যন্ত অপেক্ষাই ভালো। প্যারিসে পুরস্কারটি দেওয়ার পর তালিকাটি মিলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, এটি আসলে সত্য না মিথ্যা।