বদলিতেই বাজিমাত লিভারপুলের
ফুটবল দৌড়ের খেলা। শুধু একাদশের ১১ জন দিয়ে তাই হয় না। কোচদের ভাষায় ‘ফ্রেশ লেগস’, অর্থাৎ সতেজ পায়ের প্রয়োজন হয়। সে জন্য ফুটবলের আইনে বদলির নিয়ম সংযুক্ত করা হয় ১৯৫৮ সালে। একটা সময় পর্যন্ত এক ম্যাচে একটা দল সর্বোচ্চ তিনজনকে বদলি নামাতে পারত। করোনা মহামারির সময় সেটা সাময়িকভাবে বাড়িয়ে পাঁচজন করা হয়। ২০২২ সালের জুনে ফুটবলের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (আইএফএবি) শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় পাঁচ বদলির নিয়ম স্থায়ী করে।
ফুটবলের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘অপটা’ জানিয়েছে, এই মৌসুমে (২০২৩-২৪) ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে লিভারপুলের বদলি খেলোয়াড়দের গোলে অবদানই সবচেয়ে বেশি। প্রিমিয়ার লিগের এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১১৯ জন বদলি খেলোয়াড় মাঠে নামিয়ে তাঁদের কাছ থেকে ১১ গোল পেয়েছে লিভারপুল। বদলি হিসেবে লিগে আরও ১১টি গোলও বানিয়েছেন লিভারপুলের খেলোয়াড়েরা। সব মিলিয়ে প্রিমিয়ার লিগের এ মৌসুমে সর্বোচ্চ ২২ গোলে অবদান লিভারপুলের বদলি খেলোয়াড়দের। প্রিমিয়ার লিগে যে এখনো শীর্ষে থাকা আর্সেনালের সমান ৬৪ পয়েন্ট লিভারপুলের, তাতে বড় অবদান লিভারপুলের বদলি খেলোয়াড়দের। হারতে বা ড্র করতে বসা অনেক ম্যাচ থেকেই লিভারপুল পুরো ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বদলি খেলোয়াড়দের দিয়ে বাজিমাত করে।
তালিকায় দ্বিতীয় ইতালিয়ান সিরি ‘আ’র ক্লাব আতালান্তা। এ পর্যন্ত ১৩৪ জন বদলি মাঠে নামিয়ে সিরি ‘আ’-তে তাঁদের কাছ থেকে ১০ গোল পেয়েছে ক্লাবটি এবং লিগে আরও ১১টি গোল বানিয়েছেন আতালান্তার বদলি খেলোয়াড়েরা। সব মিলিয়ে ২১ গোল নিয়ে লিভারপুলের পরই অবস্থান আতালান্তার বদলি খেলোয়াড়দের।
প্রিমিয়ার লিগে ১১২ জন বদলি খেলোয়াড় মাঠে নামিয়ে তাঁদের কাছ থেকে ১১ গোল পেয়েছে আর্সেনাল। ৭টি গোলও করিয়েছেন আর্সেনালের বদলি খেলোয়াড়েরা। মোট ১৮ গোল নিয়ে আর্সেনাল এ তালিকায় তৃতীয়। লা লিগার ক্লাব আতলেতিকো মাদ্রিদ ১২৯ খেলোয়াড় বদলি নামিয়ে তাঁদের কাছ থেকে পেয়েছে ১০ গোল। তাঁরা গোল বানিয়েছেন ৭টি। মোট ১৭ গোল নিয়ে চতুর্থ মাদ্রিদের ক্লাবটি।
যৌথভাবে আতলেতিকোর সঙ্গে আছে ইতালির ক্যালিয়ারি, স্পেনের জিরোনা ও এএস রোমাও। সিরি ‘আ’র ক্লাব ক্যালিয়ারি ১২৯ বদলি খেলোয়াড়ের কাছ থেকে গোল পেয়েছে ৮টি, গোল বানিয়েছে ৯টি। জিরোনা ১১৮ বদলি খেলোয়াড়ের কাছ থেকে ৯টি গোল এবং ৮টি গোলে সহযোগিতা পেয়েছে। ১১৭ বদলি খেলোয়াড়ের কাছ থেকে ৯টি গোল এবং ৮টি গোলে সহযোগিতা পেয়েছে সিরি ‘আ’র ক্লাব এএস রোমা।
বদলি খেলোয়াড়দের গোলে অবদান:
ইউরোপে শীর্ষ পাঁচ লিগ (২০২৩-২৪)
এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বদলি খেলোয়াড়দের গোলে অবদানের হিসাবেও লিভারপুল শীর্ষে। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে লিভারপুল ৪৩ ম্যাচে ১৯৪ জন বদলি নামিয়ে ২২ গোল পেয়েছে। ২২টি গোলও করিয়েছেন ক্লাবটির বদলি খেলোয়াড়েরা। সব মিলিয়ে মোট ৪৪ গোলে অবদান—সেটি অবশ্য মৌসুমের এ পথ পর্যন্ত। সংখ্যাটা যে সামনে আরও বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। এই তালিকার শীর্ষ পাঁচে থাকা বাকি চারটি ক্লাব যথাক্রমে আতলেতিকো মাদ্রিদ, বায়ার লেভারকুসেন, অ্যাস্টন ভিলা ও ক্যালিয়ারি।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত ৪০ ম্যাচে ১৯০ জন বদলি খেলোয়াড় নামিয়েছে আতলেতিকো। ১৪ গোল করার পাশাপাশি ১৫ গোল করিয়েছেন ক্লাবটির বদলি খেলোয়াড়েরা। অর্থাৎ এ পর্যন্ত ২৯ গোলে অবদান আতলেতিকোর বদলি খেলোয়াড়দের। লেভারকুসেন এ পর্যন্ত ৩৫ ম্যাচে ১৪৯ জন বদলি নামিয়ে ১৫ গোল পেয়েছে। ৯টি ‘অ্যাসিস্ট’ও আছে। ২৪ গোলে অবদান রেখে তৃতীয় লেভারকুসেনের বদলি খেলোয়াড়েরা। অ্যাস্টন ভিলা এ পর্যন্ত খেলেছে ৪০ ম্যাচ। ১৬৭ জন বদলি নামিয়ে ১০ গোল পেয়েছে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটি। অ্যাসিস্ট আছে ১৩টি। ২৩ গোলে অবদান রেখে চতুর্থ ভিলার বদলি খেলোয়াড়েরা। ক্যালিয়ারির বদলি খেলোয়াড়েরা ২৩ গোলে অবদান রেখে যৌথভাবে চতুর্থ—৩০ ম্যাচে ১৪৫ জন বদলি নামিয়েছে ক্লাবটি। ১২ গোলের পাশাপাশি ১১ অ্যাসিস্ট। বুন্দেসলিগার ক্লাব আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট ও লা লিগার ক্লাব জিরোনার বদলি খেলোয়াড়েরাও সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এ মৌসুমে সমান ২৩ গোলে অবদান রেখেছেন।
বদলি খেলোয়াড়দের কাছ থেকে গোল পাওয়ার হিসাবে লিভারপুল এগিয়ে থাকলেও বদলি খেলোয়াড় নামানোর হিসাবে কিন্তু এ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ বেশ পেছনে।
একটা ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে ৫ জন করে সর্বোচ্চ ১০ জন খেলোয়াড় বদলি করতে পারে। অপটার গবেষণা বলছে, ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে এ মৌসুমে ম্যাচপ্রতি বদলি নামানোর তালিকায় প্রিমিয়ার লিগের অবস্থান তলানিতে। প্রিমিয়ার লিগে এ মৌসুমে ম্যাচপ্রতি ৭.৮৯ জন বদলি খেলোয়াড় মাঠে নামানো হয়েছে। ম্যাচপ্রতি ৯.৩৭ জন বদলি খেলোয়াড় নামিয়ে এ তালিকায় শীর্ষে ইতালিয়ান সিরি ‘আ’। ম্যাচপ্রতি ৮.৬৮ জন খেলোয়াড় মাঠে নামানো হয়েছে ফ্রেঞ্চ লিগ আঁতে। জার্মান বুন্দেসলিগায় ম্যাচপ্রতি বদলি নেমেছেন ৯.০৯ জন, লা লিগায় ৯.২৫ জন।