আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী মন্তিয়েলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ
কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার গঞ্জালো মন্তিয়েলের শটটি নিশ্চয়ই মনে আছে?
ফরাসি গোলকিপার উগো লরিসের ডান দিক দিয়ে বল জালে পাঠিয়েই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে জার্সি খুলে ফেলেছিলেন মন্তিয়েল। ৩৬ বছর পর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা! ইতিহাস মন্তিয়েলকে এভাবে মনে রাখলেও বড় এক অভিযোগই উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এক নারী মন্তিয়েলের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন আদালতে। কাল সেই নারীর আইনজীবীর সূত্র মারফত খবরটি জানিয়েছে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা।
২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি মন্তিয়েলের জন্মদিনে এ ঘটনা ঘটেছিল বলে দাবি করেছেন সেই নারীর আইনজীবী র্যাকুয়েল হারমিদা। আর্জেন্টিনার ‘রেডিও ১০’ সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হারমিদা দাবি করেন, মন্তিয়েলের বাসায় ‘কিছু লোকের দ্বারা...যৌন নির্যাতনের’ ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগকারী নারী বুয়েনস এইরেসের লা মাতানজা অঞ্চলে থাকেন, যেখানে এ ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন র্যাকুয়েল হারমিদা। মন্তিয়েলের আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনেরা নাকি সেই নারীকে হুমকিও দিয়েছেন। হারমিদা দাবি করেছেন, অভিযোগ করার সময় মন্তিয়েলের মা সেই নারীকে হুমকি দিয়েছেন।
হারমিদা আরও দাবি করেন, মন্তিয়েলের সঙ্গে ‘অল্প সময়ের সম্পর্ক’ ছিল সেই নারীর। পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে মন্তিয়েল সেই নারীকে বাসায় নিয়ে এসেছিলেন এবং লা মাতানজায় অনুষ্ঠিত পার্টিতেও নিয়ে যান। ঘটনার শিকার সেই নারী পেশায় একজন মডেল এবং মদ্যপান করেন না। কিন্তু পার্টিতে দুবার মদ্যপানের পর ‘তিনি চেতনা হারান’ বলে দাবি করেন হারমিদা। এরপর সেই নারীকে ‘মন্তিয়েলের বাসার বাইরে ছুড়ে ফেলা হয়’ এবং ‘ঠিক কতজন লোক মিলে তাঁকে যৌন নিগ্রহ করেছেন, সেটি তিনি জানেন না’ বলে দাবি করেন হারমিদা। ‘কীভাবে বাসায় পৌঁছেছেন’ সেটিও সেই নারী জানেন না, এমনটাই দাবি করেছেন এ আইনজীবী।
সেভিয়ার ২৬ বছর বয়সী ডিফেন্ডার মন্তিয়েল রিভার প্লেটের হয়ে জিতেছেন কোপা লিবার্তোদোরেস। ২০২১ কোপা আমেরিকা, ২০২২ ‘ফিনালিসিমা’ ও গত ডিসেম্বরে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মন্তিয়েল। আর তাঁর লক্ষ্যভেদে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতায় ইতিহাসে এমনিতেই আলাদা জায়গা থাকবে মন্তিয়েলের।
আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম টিএনটি স্পোর্টস টুইট করে মন্তিয়েলের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার কথা জানিয়েছে। তবে সে দেশেরই সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস, ক্লারিন কিংবা ওলে এ নিয়ে এখনো কিছু জানায়নি। তবে স্পেনের সংবাদমাধ্যম ‘লা ওপিনিয়ন’ রেডিও ১০-কে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হারমিদার মন্তব্য প্রকাশ করেছে, ‘অভিযোগটা গঞ্জালো মন্তিয়েলের বিরুদ্ধে, যার সঙ্গে অল্প দিনের সম্পর্ক ছিল ঘটনার শিকার নারীর। ঘটনাটা মন্তিয়েলের বাসায় ঘটেছে, যার শুরু লা মাতানজা থেকে। অভিযোগ করার সময় হুমকিও পেয়েছেন সেই নারী। তাই আমরা হুমকির বিরুদ্ধেও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করব।’
হারমিদা আরও দাবি করেন, ‘ঘটনাটি ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি। সেদিন ছিল মঙ্গলবার। পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে সে তাঁকে ডেকেছিল এবং সেখানে কয়েকজনের ভূমিকা ছিল বয়ফ্রেন্ডের মতো। লা মাতানজায় পার্টিতেও সেই নারীকে নিমন্ত্রণ করা হয় এবং বলা হয় সেখানে তাঁর সময়টা ভালো কাটবে।’
হারমিদার বরাত দিয়ে ঘটনাটি আরেকটু সবিস্তারে জানিয়েছে লা ওপিনিয়ন। আইনজীবী দাবি করেছেন, দুবার মদ্যপানের পর অচেতন হয়ে পড়েছিলেন সেই নারী। কয়েক ঘণ্টা পর তিনি নিজেকে আবিষ্কার করেন মন্তিয়েলের বাসার গেটের বাইরে সড়কে পড়ে আছেন। হাঁটু রক্তাক্ত। এরপর সেই নারীর সন্দেহ হয়, তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত হতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং মেডিকেল রিপোর্টে জানানো হয়, তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে একাধিক লোক তাঁকে নির্যাতন করেছেন কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রেডিও অনুষ্ঠানের সঞ্চালক পাবলো ডুগান আইনজীবী হারমিদার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, মেয়েটি অচেতন হলো কীভাবে? একটু রাগত স্বরেই উত্তর দেন হারমিদা, ‘কারণটা আসলে রুচির। সে একজন মডেল, কিন্তু মদ্যপান করে না। আর তাই সেই রাতে দুবার মদ্যপান শেষ করার আগেই অচেতন হয়ে পড়েছিল।’ হারমিদা আরও বলেছেন, ‘এই যৌন নির্যাতনে কতজন লোক জড়িত, তা সে (নারী) জানে না। তবে মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী, এটি যৌন নির্যাতন।’
অভিযোগ করার আগে সেই নারী এত দিন সময় নিলেন কেন, এমন প্রশ্নেরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন হারমিদা। তাঁর দাবি, ঘটনার শিকার নারীটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। আত্মহত্যার কথাও নাকি ভেবেছিলেন। একটু ধাতস্থ হয়ে ওঠার পর লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেন, ‘এ সময়ে সে আইনজীবী খুঁজেছে। আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছে করোনা মহামারির সময়।’
রেডিও ১০-এর ওয়েবসাইটে অভিযোগকারী নারীর মন্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। সংবাদকর্মী নাচো গেনোভার্টের অডিও রেকর্ডের বরাত দিয়ে এ মন্তব্য প্রকাশ করা হয়। ধর্ষণের শিকার হওয়ার দাবি তুলে সেই নারী বলেছেন, ‘ওরা আমাকে যা বলছে, তা মাসের পর মাস স্মরণ করার চেষ্টা করেছি। ওকে (মন্তিয়েল) বাঁচানোর চেষ্টায় আমার মস্তিষ্ক ধোলাইও করা হয়েছে। কিন্তু ওর মুখটা তো ভুলে যাওয়া সম্ভব না। আমি জানি না একজন না ২০ জন মিলে এটা (ধর্ষণ) করেছে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ তারা আমাকে ফোন করেছে, হুমকি দিয়েছে। বাসার বাইরে একটি গাড়ি থাকত, ভয় পেতাম বের হলেই হয়তো গুলি করবে। ওর মা ছাড়াও আরও অনেকেই প্রচুর ফোন করে বলেছে, মন্তিয়েলের ক্যারিয়ারের কিছু হলে আমার মাথায় গুলি করবে।’