ফিলিস্তিনের কাছে ‘বিধ্বস্ত’ হয়ে ভুলের খোঁজে কাবরেরা
আন্তর্জাতিক ফুটবলে এক ম্যাচে ৫ গোল খাওয়া যেকোনো দলের জন্যই বিব্রতকর। তা–ও আবার অতীতে যে দলের কাছে ২ গোলের বেশি খেতে হয়নি, সেই দলের কাছে ৫ গোল খাওয়া আরও বেশি যন্ত্রণারও। গতকাল রাতে কুয়েত সিটির জাবের আল আহমাদ স্টেডিয়ামে তেমন অভিজ্ঞতাই হয়েছে বাংলাদেশের। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ৫-০ গোলে উড়ে গেছে ফিলিস্তিনের কাছে।
এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিলিস্তিন এত বড় ব্যবধানে কখনো জেতেনি। আগের ৬ লড়াইয়ে প্রথমটিই শুধু ড্র হয়েছিল। পরের সব ম্যাচেই হার বাংলাদেশের। ফিলিস্তিনের কাছে হারতেই পারে বাংলাদেশ। কিন্তু তাই বলে এমন হার বাংলাদেশের মনোবলে চিড় ধরিয়েছে। অথচ ম্যাচের প্রথম ৪০ মিনিট বাংলাদেশ চোখে চোখ রেখে লড়েছে। তৈরি করেছে গোলের সুযোগও। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ মিনিট পাঁচেক ম্যাচের ছবিটা দেয় পাল্টে। রক্ষণের ভুলে এই সময় হাভিয়ের কাবরেরার দল খেয়ে বসে দুটি গোল।
আর এটাকে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট বলছেন বাংলাদেশ কোচ কাবরেরা। ম্যাচ শেষে তিনি বলেছেন, ‘প্রথম ৪০ মিনিট আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটা ম্যাচই খেলেছি। ফিলিস্তিনের মতো একটা দলের সঙ্গে যা ছিল বেশ ভালো। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষটা আমরা যেভাবে করেছি, তা আমাদের ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে। এটাই আসলে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।’
বিরতির পর ৪৮ মিনিটে বাংলাদেশ খেয়েছে তৃতীয় গোল। ৫২ মিনিটে ৪ নম্বর গোল। ১০-১২ মিনিটের মধ্যেই বাংলাদেশ চারটি গোল খেয়ে ভেঙে পড়ে হুড়মুড় করে। রক্ষণ হয়ে যায় ছন্নছাড়া। তারই সুযোগে ম্যাচের শেষ দিকে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ইউরোপীয় লিগে (বেলজিয়ামে) খেলা একমাত্র ফিলিস্তিনি ফরোয়ার্ড ওদে দাবাঘ। বাকি দুই গোল শিহাব কুমবরের।
গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে কাতারে অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাপে দারুণ ফুটবল খেলে প্রথমবারের মতো শেষ ষোলো উঠেছিল ফিলিস্তিন। যেখানে তারা কাতারের বিপক্ষে এগিয়ে গিয়েও হেরে যায় ২-১ গোলে। এশিয়ান কাপে ইতিহাস গড়া ফিলিস্তিনকে নিয়ে তাই বাড়তি সতর্ক ছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু শারীরিকভাবে শক্তিশালী ও ৬ ফুটের বেশি লম্বা ফিলিস্তিনিদের কাছে শেষ পর্যন্ত মানতে হয়েছে অসহায় আত্মসমর্পণ।
বাংলাদেশ কোচ জানতেন ম্যাচের একটা সময়ে এসে ঝড় তুলতে পারে ফিলিস্তিন। কিন্তু সেটা যে এভাবে সব তছনছ করে দেবে ভাবেননি। তাঁর কথা, ‘আমরা জানতাম ম্যাচের একটা সময় এমন কিছু হতে পারে। কিন্তু সেটা যে এভাবে আমাদের ধসিয়ে দেবে, তা ভাবনার বাইরে ছিল। এরপর ম্যাচে ফেরা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা শক্তিশালী একটা দলের সামনে রীতিমতো উড়ে যাই।’
চার গোলের পর হেসেখেলে বাকি সময়টা খেলেছে ফিলিস্তিন। তিনজন ডিফেন্ডারকে এ সময় তুলে নেন দলটির কোচ। হয়তো ২৬ মার্চ ঢাকায় দুই দলের ফিরতি ম্যাচের জন্য বিশ্রাম দিয়েছেন তাঁদের।
দুই দেশের শক্তির ব্যবধান অনেক। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ফিলিস্তিন ৯৭, বাংলাদেশ ১৮৩। ফলে এই হারের অবাক হওয়া কিছু নেই। তবে সৌদি আরবে ক্যাম্প করেও ফলপ্রসূ কিছু হলো না বাংলাদেশের। এত প্রস্তুতি নেওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত ৫ গোল বাংলাদেশকে হতাশই করেছে।
সেই হতাশা এক পাশে রেখে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে চান বাংলাদেশ কোচ, ‘কোথায় ভুল হয়েছে সেটা এখন আমাদের বের করতে হবে। এটাও খুঁজে দেখতে হবে যে কেন আমরা লড়াই করতে পারলাম না। বিশেষ করে প্রথম ৪০ মিনিট এমন খেলার পর এভাবে হেরে যাওয়া কোনোভাবে মেনে যাওয়া যায় না। আমাদের এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে, আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে এবং অবশ্যই আরও উন্নতি করতে হবে। আপাতত এটিই এখন আমাদের মূল কাজ।’
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় হার। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭-০ হারের আগে লেবাননের সঙ্গে ১-১ ড্র। তিন ম্যাচে ১৩ গোল খেয়ে ১ গোল করছে বাংলাদেশ। পয়েন্ট পেয়েছে মাত্র একটি। এক পয়েন্ট হয়তো ঠিক আছে, কিন্তু বাংলাদেশ গোল খেয়ে বসেছে অতিরিক্ত।
ফিলিস্তিনি দল লেবাননের সঙ্গে ড্র এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১-০ গোলে হারের পর বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে পেল তিন পয়েন্ট। ঢাকা থেকেও তারা পয়েন্ট নিয়ে যেতে চায়। পারবে কি বাংলাদেশ ঢাকায় অন্তত ফিলিস্তিনকে আটকে দিতে? পাঁচ গোলের ক্ষতে প্রলেপ দিতে?