লা লিগায় যে কারণে নেই গোললাইন প্রযুক্তি
এল ক্লাসিকো, স্পেনের ফুটবলে সবচেয়ে উত্তেজনা আর রোমাঞ্চকর দ্বৈরথ। রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার এ লড়াইয়ের ভাগ্য গড়ে দিতে পারে অনেক সূক্ষ্ম বিষয়। গতকাল রিয়াল–বার্সা ম্যাচে ঘটে যাওয়া এমন একটি সূক্ষ্ম বিষয় নিয়েই এখন ফুটবল বিশ্বে আলোচনা—গোললাইন প্রযুক্তি। ম্যাচটিতে বার্সেলোনা হেরেছে ৩–২ গোলে।
এল ক্লাসিকোয় তখন ২৮ মিনিটের খেলা চলছে। ম্যাচে ১–১ গোলের সমতা। ৬ মিনিটে ক্রিস্টেনসেনের গোলে এগিয়ে যাওয়া বার্সার বিপক্ষে ১৮ মিনিটের পেনাল্টি গোলে রিয়ালকে সমতায় ফিরিয়েছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। ২৮ মিনিটে আবার এগিয়ে যেতে পারত বার্সেলোনা। রাফিনিয়ার কর্নার থেকে লামিনে ইয়ামালের ফ্লিক চলে যায় রিয়ালের গোললাইনে। সেখান থেকে রিয়ালের গোলকিপার আন্দ্রে লুনিন কোনোমতে বলটি বাইরে পাঠান।
বার্সেলোনার খেলোয়াড়েরা দাবি করেন, এটা গোললাইন অতিক্রম করেছে। কিন্তু রেফারি গোল না দিয়ে বার্সার পক্ষে কর্নারের সিদ্ধান্ত দেন। ম্যাচ শেষে বার্সেলোনা কোচ এটিকে আখ্যা দিয়েছেন ‘অবিচার’ হিসেবে। বার্সেলোনার সমর্থকেরা ম্যাচ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেননি। ঘটনার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তুলতে শুরু করেন তাঁরা। লা লিগায় গোললাইন প্রযুক্তি না থাকার সমালোচনায় ভেসে যেতে থাকে ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামের পাতা!
এমন সমালোচনা তো হবেই। ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোর মধ্যে একমাত্র লা লিগাতেই যে গোললাইন প্রযুক্তি নেই। কিন্তু লা লিগায় কেন নেই গোললাইন প্রযুক্তি? ২০২৩–২৪ মৌসুম শুরুর আগে স্পেনের সংবাদমাধ্যম এল লারগুয়েরো তাদের এক খবরে প্রকাশ করেছিল এর কারণ। সেখানে বলা হয়েছে, লা লিগার সভাপতি হাভিয়ের তেবাস গোললাইন প্রযুক্তির জন্য ৩২ লাখ ডলার খরচ করতে রাজি ছিলেন না।
বার্সেলোনার সমর্থকেরা সমালোচনা শুরু করার পর লা লিগায় গোললাইন প্রযুক্তি না রাখার একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তেবাস। তিনিও ব্যাখ্যা দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এক্সে লা লিগা প্রধান এক পোস্টে কিছু সংবাদের শিরোনামের স্ক্রিনশট দেন। সংবাদগুলো ছিল গোললাইন প্রযুক্তির ভুল নিয়ে। সেই পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘নো কমেন্ট।’
ফুটবলে গোললাইন প্রযুক্তির আলোচনা শুরু হয় মূলত ২০১০ বিশ্বকাপের পর থেকে। সেই বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে জার্মানির বিপক্ষে একটি গোল দেওয়া হয়নি ইংল্যান্ডের ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে। সেই ম্যাচের ২০ মিনিটে মিরোস্লাভ ক্লোসার গোলে পিছিয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। ৩৭ মিনিটে তারা সমতায় ফেরে জেমস উপসনের গোলে। পরের মিনিটেই ল্যাম্পার্ডের বিতর্কিত ওই গোল বাতিল। পরে ম্যাচটি ৪–১ গোলে হারে ইংলিশরা।
এরপর নানা আলোচনা শেষে ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড ২০১২ সালে ফুটবলে গোললাইন প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমতি দেয়। বিশ্বকাপে এটি প্রথম ব্যবহার করা হয় ২০১৪ সালে। ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোর মধ্যে প্রথমে গোললাইন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। তারা শুরু করে ২০১৪ সালে। ২০১৫ সালের মধ্যে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শুরু করে বুন্দেসলিগা, লিগ ‘আঁ’, সিরি আ ও ডাচ লিগও।