অ্যানফিল্ডে এবার আরও ছন্নছাড়া ইউনাইটেড

প্রিমিয়ার লিগে মুখোমুখি হবে লিভারপুল–ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডটুইটার

জানুয়ারি, ২০১৬। তিন মাস হলো লিভারপুলের কোচ হয়েছেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। সামনে ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ম্যাচ। অ্যানফিল্ডে সেই ম্যাচকে ক্লপ বলেছিলেন, ‘স্যুপের নুন।’ আসলে নুন ছাড়া যেমন কোনো তরকারিই স্বাদ লাগে না, তেমনি লিভারপুল–ইউনাইটেড দ্বৈরথ ছাড়া ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগও কেমন খালি খালি লাগে! যদিও সে ম্যাচের স্বাদ ক্লপের ভালো লাগার কথা নয়। ৭৮ মিনিটে ওয়েন রুনির গোলে ১–০ ব্যবধানে জিতেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

১৯৭৫ সালে বব পেইসলির পর লিভারপুলের আর কোনো কোচই ইউনাইটেডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ জিততে পারেননি। অর্থাৎ ক্লপ এ তালিকায় একা নন, কেনি ডালগ্লিস, রাফায়েল বেনিতেজ, জেরার্ড হুলিয়ের এবং ব্রেন্ডন রজার্সের মতো কোচরাও আছেন। কিন্তু লিভারপুলে ক্লপের প্রায় আট বছরের এই পথচলায় ইউনাইটেডের সঙ্গে অ্যানফিল্ডের ক্লাবটির দ্বৈরথের ভারও ওলট–পালট হয়েছে। বিশেষ করে যখন দুই দল অ্যানফিল্ডে মুখোমুখি হয়েছে। প্রিমিয়ার লিগে আগামীকাল সে লড়াইটাই ফিরছে—অ্যানফিল্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে আতিথ্য দেবে লিভারপুল।

আরও পড়ুন

লিভারপুলে ক্লপের জমানায় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সে ম্যাচের পর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে আটবার অ্যানফিল্ডে গিয়ে জিততে পারেনি ইউনাইটেড। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই আট ম্যাচের সাতটিতে ইউনাইটেড গোল করতে পারেনি! যে ম্যাচে একটি গোল করতে পেরেছিল ইউনাইটেড, সেটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে, লিভারপুলের বিপক্ষে ৩–১ গোলে হারে, গোলটি করেছিলেন জেসে লিনগার্ড। আর জয়ের পর ক্লপ বলেছিলেন, ‘মরিনিওকে ছাঁটাই কোরো না।’ কিন্তু অ্যানফিল্ডে সেই হারের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোচ জোসে মরিনিওকে তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল ইউনাইটেড।

সেই ইউনাইটেড নিজেদের দিন এখনো ফেরাতে পারেনি। তাতে অ্যানফিল্ডে ইউনাইটেডের নাকাল হওয়ার বিষয়টি যেন আরও বেশি করে চোখে বিঁধেছে। বিশেষ করে গত দুই মৌসুমে। ২০২২ সালের এপ্রিলে অ্যানফিল্ডে ৪–০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল ইউনাইটেড। হারের পর ওল্ড ট্রাফোর্ডের ক্লাবটির তখনকার কোচ রালফ রাংনিক বলেছিলেন, লিভারপুল ‘আমাদের তুলনায় ছয় বছর এগিয়ে।’

অ্যানফিল্ডে লিভারপুল–ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সর্বেশেষ ম্যাচের স্কোরলাইন
রয়টার্স

তবে গত মৌসুমের হারের তুলনায় এপ্রিলের সেই হার কিছুই না। গত মার্চে অ্যানফিল্ডে ৭–০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল ইউনাইটেড। এ দুই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের দ্বৈরথের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়। ১৮৯৫ সালে যখন ইউনাইটেডের নাম ছিল নিউটন হিথ—তখন ৭–১ ব্যবধানে জয়ের কীর্তিকে ছাপিয়ে গিয়েছিল ক্লপের লিভারপুল।

লিভারপুল তারকা মোহাম্মদ সালাহরও প্রিয় প্রতিপক্ষও ইউনাইটেড। ১২ বারের মুখোমুখিতে ১২ গোল করেছেন। আর কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এত গোল করেননি সালাহ। লিভারপুলের আর কোনো খেলোয়াড়ও ইউনাইটেডের বিপক্ষে এত গোল পাননি। ৯ গোল পেয়েছেন ক্লাবটির কিংবদন্তি স্টিভেন জেরার্ড।

আরও পড়ুন

১৬ ম্যাচে ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে লিভারপুল। সমান ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আগামীকালের ম্যাচের আগে প্রায় সব পরিসংখ্যানই লিভারপুলের পক্ষে। অন্যদিকে ইউনাইটেড আরও বেশি ছন্নছাড়া। এই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে ঘরের মাঠে ৭ ম্যাচই জিতেছে লিভারপুল। গোল করেছে ২১টি। আর ইউনাইটেড ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়ার পাশাপাশি লিগে প্রতিপক্ষের মাঠে সর্বশেষ ১৩ ম্যাচের একটিও জিততে পারেনি। চোটের কারণে অধিনায়ক ব্রুনো ফার্নান্দেজকেও পাচ্ছে না ইউনাইটেড।

আগামীকালের দ্বৈরথে কে এগিয়ে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।